ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

অর্থনৈতিক অঞ্চলের রুপ নিবে মোগলহাট স্থলবন্দর

সজীব আলম, লালমনিরহাট

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪, ১২:১২ এএম

অর্থনৈতিক অঞ্চলের রুপ নিবে মোগলহাট স্থলবন্দর

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বন্ধ হওয়ার তিন যুগ পেরিয়ে গেলেও চালু হয়নি উত্তরের সীমান্তর্বর্তী জেলা লালমনিরহাটের মোগলহাট স্থলবন্দর। ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই এই স্থলবন্দরটির কার্যক্রম চালু ছিল। 

পরে ৮৮ দিকের ভয়াবহ বন্যায় রেলযোগাযোগ ক্ষতিগ্রস্থ হলে তখন থেকে এই স্থলবন্দরটির কার্যক্রম পুরোপুরি ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। শুরুতে স্থলবন্দরটি চালু নিয়ে নানা সংশয় থাকলেও বর্তমানে এটি বাস্তবায়নের রুপ নিলে ভাগ্য বদলানোর আশা দেখছেন জেলাবাসী। সেই সাথে এ জেলা পরিনত হবে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে এবং এতে কর্মসংস্থান তৈরি হবে হাজার হাজার মানুষের।

লালমনিরহাট শহর থেকে মাত্র এগারো কিলোমিটার দূরত্বে উত্তর-পূর্ব দিকে গেলেই দেখা মিলবে মোগলহাট স্থলবন্দরের। মোগলহাট স্থলবন্দরটি লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নে অবস্থিত। তাইতো এর নাম করণ হয়েছে মোগলহাট স্থলবন্দর। এখানে একটি পরিত্যাক্ত স্টেশন রয়েছে যার নাম মোগলহাট রেলওয়ে স্টেশন।

একসময় এই স্থলবন্দর দিয়ে রেলপথের মাধ্যমে লালমনিরহাট থেকে কয়লা ও ডিজেল চালিত ইঞ্জিনের ট্রেনের যাতায়াত ছিল ভারতের বিভিন্ন জায়গায়৷ এটিই ছিল বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের একটি রেল ট্রানজিট পয়েন্ট। বর্তমানে এই স্টেশনটিও বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। 

তবে স্টেশনে এখনো রেলওয়ে অবকাঠামোর কিছু পাকা ঘর, টিকিট কাউন্টার, রেললাইন, প্লাটফর্ম, সাইনবোর্ড পরিত্যক্ত  ভাঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে।

১৯৮৮ সালে ভয়াবহ বন্যার পর পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে যায় মোগলহাট স্থলবন্দর। এরপর ভারত-বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ে নেতারা দফায় দফায় বৈঠক ও আলোচনা করলেও তা আর আশার মুখ দেখেনি। মোগলহাট সীমান্ত থেকে সবচেয়ে কাছে অবস্থিত ভারতের গিতালদহ। এই সীমান্ত দিয়ে গেলে মাত্র সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত ভারতের কোচবিহার জেলার দিনহানা উপজেলা। মোগলহাট ও গিতালদহের মাঝে বয়ে গেছে ধরলা নদী। তার উপরে ভারত অংশে প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি  পরিত্যাক্ত রেল ব্রীজ এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

একসময় ইমিগ্রেশন চেকপোস্টও ছিলো মোগলহাট স্থলবন্দরে। সেই সময় মোগলহাট-গিতালদহ  রুটে নিয়মিত চলতো পণ্য আমদানি-রপ্তানি। পাসপোর্টধারী যাত্রীরা খুব সহজেই চলাচল করতেন এই ইমিগ্রেশন দিয়ে। ১৯৮৮ সালের আগ পর্যন্ত চলতো পুরো স্থলবন্দরের কার্যক্রম। আর ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের কার্যক্রম চালু ছিল ২০০২ সাল পর্যন্ত। মোগলহাটের  ১১৭ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত ছিল স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের অবকাঠামো।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, মোগলহাট স্থলবন্দরটি ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ফের চালুর জন্য ২০২২ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। সূত্রটি আরও জানায়, ভয়াবহ বন্যার কারণে মোগলহাট-গিতালদহ রুটে ধরলা নদীর ওপর সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে এই রুটে দুই দেশে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এতে বন্ধ হয়ে যায় রেল চলাচল ও  স্থলবন্দরের কার্যক্রম। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে লালমনিরহাট জেলার শেষপ্রান্তে বুড়িমারী স্থলবন্দর থাকলেও সেটি শহর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই দূরত্বের কারণেই স্থলবন্দরটির সুবিধা ভোগ করতে পারে না জেলার সাধারণ ব্যবসায়ীরা। আর এতেও আমদানী রপ্তানী করতে গেলে দূরত্ব বেশি হওয়ায় ট্রানজিট খরচ ও পণ্যের দাম তুলনা মূলক ভাবে বেড়ে যায়। ২০১৬ সালের ১৫-১৭ জুলাই কলকাতা ও শিলিগুড়িতে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভূটান এই চারদেশীয় ব্যবসায়ীদের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় চার দেশের ব্যবসায়ীরা এই মোগলহাট-গিতালদহ রুটে পুনরায় চালুর গুরুত্ব তুলে ধরেন। এই রুটটি পুনরায় চালু হলে ভারতের সাতটি অঙ্গরাজ্যসহ নেপাল ও ভূটানের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপকভাবে প্রসার ঘটবে। এদিকে ২০১৭ সালের ২৪ মে সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ-আন্তর্জাতিক বিজনেজ ফোরামের সভায় মোগলহাট স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুনরায় চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়। ব্যবসায়ীদের আলোচনা ও দাবির প্রেক্ষিতে মোগলহাট স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুনরায় চালুর জন্য ২০১৭ সালের ৩ জুন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে পত্র দেন তৎকালীন লালমনিরহাট-৩ আসনের সাবেক এমপি গোলাম মোস্তফা কাদের। কিন্তু কাগজে কলমে বহু আলোচনা প্রস্তাবনা পাঠানো হলেও বাস্তবে সেটি এখনো রুপ নেয়নি। 

মোগলহাট ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা ও গ্রীন ভয়েসের সভাপতি রেদোয়ান ইসলাম রাঙ্গা বলেন, এ বন্দরটি চালু হলে ব্যবসার ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে যাবো, পাশাপাশি ইমিগ্রেশন চালু হলে আমরা খুব সহজেই দ্রুত ভারতে যাতায়াত করতে পারবো। এই স্থলবন্দরটি চালু এখন সময়ের দাবী৷

লালমনিরহাটের সামাজিক সংগঠন ‘অতিক্রম’ এর আহ্বায়ক হেলাল হোসেন কবির বলেন,  মোগলহাট স্থলবন্দর চালুর জন্য ২০১৭ সাল থেকে বহু মানববন্ধন, গোলটেবিল বৈঠক, সাইকেল শোভাযাত্রাসহ বিভিন্নভাবে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছি। এটি চালু হলে এই এলাকার মানুষের যেমন কর্মসংস্থান তৈরি হবে পাশাপাশি বদলে যাবে অবহেলিত লালমনিরহাটের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট। তাই এটি দ্রুতই চালু হওয়া দরকার।

এ বিষয়ে লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি শেখ আব্দুল হামিদ বাবু বলেন, মোগলহাট স্থলবন্দরটি চালুর বিষয়ে ভারত, ভুটান, নেপার সহ চার দেশের ব্যবসায়ীরা আলোচনা করেছে ।

ব্রিটিশ আমল থেকেই মোগলহাট স্থলবন্দরটি চলমান থাকায় ভারতের কলকাতা যাতায়াতের সহজ যোগাযোগ মাধ্যম ছিল এটি। বর্তমানে এটি বন্ধ থাকায় এখানকার লোকজন ও ব্যবসায়ীরা প্রায় চার’শ কিলোমিটার ঘুরে কলকাতায় যাচ্ছেন। যা ব্যবসার ক্ষেত্রে অনেক ব্যয়বহুল৷

উল্লেখ্য, মোগলহাট-গিতালদহ রুটটি ছিল ভারতের কোচবিহার, আসাম, নেপাল ও ভূটানের সঙ্গে যোগাযোগের সহজ রুট। এই রুট পুনরায় চালু হলে খুব সহজে ও কম খরচে ভারত ও ভূটান থেকে পাথর, কয়লা, ডলোচুনসহ পণ্য আমদানি রপ্তানি করা যাবে। এতে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!