মায়ের প্রেরণায় বেঁচে আছে সাতক্ষীরার ১৩ বছরের ৭ম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী মুনিয়া আক্তার মুন্নি। স্কুলের অন্যান্য সহপাঠীদের মতোই প্রাণোচ্ছল ও সদা হাসিখুশি। কিন্তু হঠাৎ একটি কিডনি ড্যামেজ হয়ে যায় তার। অপরটির অবস্থাও ভালো নয়। একই সাথে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন সে। চিকিৎসা খরচ মেটাতে তার পরিবার আর্থিকভাবে প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন অতি দ্রুত একটি কিডনির অপারেশন করতে। কিন্তু টাকার অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। অপারেশন করাতে না পারলে অসচ্ছল মায়ের একমাত্র আদরের কন্যা মুন্নীর জীবন প্রদীপ নিভে যেতে পারে। এসব কিছু জানার পরও থেমে নেই মুন্নির ছাত্র জীবন।পড়াশোনা শেষ করে ডাক্তার হতে চান তিনি।
সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা যুগিপুকুরিয়া গ্রামের আব্দুর রউফ মোড়লের কন্যা মুন্নি। তবে তার বয়স যখন ১২ দিন তখন বাবা তাদের ফেলে রেখে চলে যায়। তার মায়ের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করে অন্য একজনকে বিয়ে করে ঘর সংসার শুরু করে। সেই থেকে মুন্নি তার নানার বাড়ি মায়ের সাথে মোবারকপুর গ্রামে বসবাস করেন।লেখাপড়া করেন শহীদ কামেল মডেল হাই স্কুলে।
মুন্নীর মা পারভীন সুলতানা জানান, "চরম দুঃখ কষ্টের মধ্যে দিন পার করছি। বিগত ১৩ বছর ধরে বাবার বাড়ি থেকে অন্যের বাসায় কাজ করে সংসার চালাচ্ছি। কখনও কারো কাছে হাত পাতেনি। পাড়া প্রতিবেশিদের কাছ থেকে অনেক কটু কথা শুনতে হয়। তবুও একমাত্র মেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে আছি। কিন্তু জানি না সেই স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা।
তিনি বলেন, জন্ম থেকেই মেয়ে হাইপ্রেসার, পেটব্যাথাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। তার চিকিৎসা করতে আমার যখন নাভিশ্বাস অবস্থা তখন ধরা পড়লো কিডনির সমস্যা। ইতোমধ্যে ঢাকা খুলনাসহ সাতক্ষীরার কয়েকজন ডাক্তারকে দেখানো হয়েছে। অনেক পরীক্ষা নিরিক্ষা করতে হয়েছে। এসবের পিছনে অনেক টাকা খরচ করতে হয়েছে। আরও অনেক টাকার দরকার। কিন্তু আমি এতো টাকা কিভাবে জোগাড় করব। হাতেপাতে যা ছিল সবই শেষ। এখন ওষুধ কেনারও টাকা নেই।
শহীদ কামেল মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক গাজী জাহিদুর রহমান বলেন, ফুটফুটে সুন্দর মেয়েটি আমাদের শিক্ষকদের অতি আদরের। অভিভাবক না থাকলেও তার চাঞ্চল্যতা সবাইকে হতবাক করে।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. মানস কুমার মন্ডল জানিয়েছেন, খুব দ্রুত মেয়েটির কিডনিতে অপারেশন করতে হবে।নইলে তাকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়বে। পরিক্ষা নিরিক্ষায় দেখা গেছে তার একটা কিডনি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি টার অবস্থাও ভালো নয়। তার বমি ভাব, ক্ষুদা ঘুম কম হচ্ছে। শরীর দূর্বলতাসহ তার ওজন অনেক কমে গেছে। এছাড়াও তার শরিরে আরও নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে মুনিয়া আক্তার মুন্নি বলেন, আমার স্কুলের সহপাঠীদের মত সুস্থ শরীরে আমি বাঁচতে চাই। আমার নিয়ে চিন্তা করে আমার মা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। মায়ের কথা ভেবে আমার খুব খারাপ লাগে। বাবা আমার খোঁজ নেয় না। টাকা পয়সাও দেয় না। আমি যে এতো অসুস্থ তাও তিনি জানেন কিনা জানি না। স্কুলের স্যারেরা আমাকে খুবই ভালোবাসেন। আমার মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিলো আমাকে নিয়ে। কিন্তু অর্থের অভাবে সে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে আমার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন।
আপনার মতামত লিখুন :