চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত বিল্লাল হোসেনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগে সাবেক চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগর টগর ও সাবেক চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুর রহিমসহ ৯ জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার ১১ নভেম্বর দুপুরে বিল্লাল হোসেনের বোন শালপোনা পারভীন (৪০) বাদি হয়ে চুয়াডাঙ্গা আমলী আদালতে দর্শনায় এই মামলা দায়ের করা হয়।
দর্শনা আমলী আদালতের বিচারক সিনিয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রিপন আলী বাদীর বক্তব্য গ্রহণ করে মামলাটি চুয়াডাঙ্গা সিআইডি কে তদন্ত করার জন্য প্রেরণ করেছেন।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন, যথাক্রমে সাবেক কাউন্সিলর ও দর্শনা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নুল আবেদিন নফর, সাবেক দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই মিজানুর রহমান মিজান, সাবেক দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দর্শনা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী মনসুর বাবু, দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুরের আওয়ামী লীগ নেতা আলীহিম,সাবেক দামুড়হুদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আহসান হাবিব, কনস্টেবল সাজিদুর রহমান, এএসআই দেবাশীষ।
বিষয়টি আজ সন্ধ্যায় নিশ্চিত করেছেন মামলার আইনজীবী চুয়াডাঙ্গা জজ কোর্টের এডভোকেট মো. মাসুদ পারভেজ রাসেল।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৩ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌর এলাকার দক্ষিণ চাঁদপুরের গ্রামের মোঃ বিল্লাল হোসেন (৪৫) কাছে দলীয় দাপটে দেখিয়ে সাবেক চুয়াডাঙ্গা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর, আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদীন নফর, আলী মনসুর বাবু ও আলীহিম পুলিশের ক্রসফায়ারে ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবি করে। বিল্লাল হোসেন চাঁদা দিতে রাজি না দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশের ইনচার্জ এস এম মিজান কে জানায়। এ সময় দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসএম মিজানুর রহমান মিজান এমপি আলী আজগর টগর তার ভাই আলী মনসুর বাবু, আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদিন নফর ও আলীহিমকে জানালে পুলিশ এসআই মিজান, সাবেক চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল রহিম শাহ, দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবীব, কনস্টেবল সাজিদুর রহমান, এএসআই দেবাশীষ তারা বিল্লাল হোসেন কে হত্যার পরিকল্পনা করে। গত ১১ আগস্ট ২০১৩ রাতে অবৈধভাবে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে ঐদিন দিবাগত রাত আড়াই টার দিকে দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুর বিল্লাল হোসেন বাড়ি থেকে অপহরণ করে তাকে তুলে নিয়ে দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুর উজলপুর রাস্তার হরচরার মাঠে নামক স্থান নিয়ে যায়। এ সময় আসামিরা বিল্লাল কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ওই একাধিক গুলি করি হত্যা করে। পরে পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত বিল্লাল হোসেন নাটক সাজায় তারা। সকালে সাক্ষীগণসহ স্থানীয়রা ঘটনাস্থলেদে গিয়ে দেখতে পায় বিল্লাল হোসেনের বাম বুকে, বাম বগলের নিচে, ডান উরু সহ একাধিক স্থানে গুলি করা দেখতে পাই। পিঠে দুই হাটুর নিচে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটা দেখা যায় এবং বিল্লালের দুই হাতে হ্যান্ডকাপ দিয়ে বাধা ছিল। তার ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির নখ উপড়ানো হয়। পরের দিন এই খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
এ ঘটনায় আদালতের আইনের আশ্রয় নেয়ার কথা শুনলে আসামিরা আমার (নিহত বিল্লালের বোন সালপনা পারভিন) পরিবারকে অপহরন গুম খুনের হুমকি দেয়। দেশে স্বৈরাশাসক পতনের পর ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় বিল্লাল হোসেনের বোন আমি শালপনা পারভীন বাদী হয়ে সোমবার ১১ ই নভেম্বর দুপুরে চুয়াডাঙ্গা আমলী আদালত দর্শনাতে এই হত্যা মামলা দায়ের করি।
এ মামলার আইনজীবী চুয়াডাঙ্গা জজ কোর্টের এডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল বলেন, বিজ্ঞ আদালত বাদীর স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী গ্রহণ করে মামলাটি তদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সি আই ডি পুলিশের নিকট প্রেরণ করেছে।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সহকারী পুলিশ সুপার (সি আই ডি) সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের হাতে কোন কাগজপত্র আদালত থেকে এখনো এসে পৌঁছায় নাই, কাগজ আসলে আমরা তদন্ত কাজ শুরু করব।
আপনার মতামত লিখুন :