ঢাকা বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

নিহত জুয়েলের বাড়ি এখন ‍‍`বীরের বাড়ি‍‍`, উড়ছে জাতীয় পতাকা

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪, ১১:৫১ পিএম

নিহত জুয়েলের বাড়ি এখন ‍‍`বীরের বাড়ি‍‍`, উড়ছে জাতীয় পতাকা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত জুয়েলের বাড়িটি এখন ‘বীরের বাড়ি’।আর তার বাড়িতে এখন উড়ছে জাতীয় পতাকা।

গ্রামবাসী নিজেরাই একটি সাইনবোর্ড বানিয়ে তাতে জুয়েলের ছবি ও নাম লিখে ‘বীরের বাড়ি’ আখ্যায়িত করেছেন। প্রতিদিন সম্মানের সঙ্গে জাতীয় পতাকা টানিয়ে রাখা হয়। যা দেখে গ্রামের সবাই অনেক উৎফুল্ল।দীর্ঘদিনের পরিচিত ‘মোড়ল বাড়িটি’ এখন ‘বীরের বাড়ি’ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে।

নিহত জুয়েল মিয়ার বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের সিংদই খাকধারা গ্রামে।তার পিতার নাম মো. আব্দুল হাই। দুই ছেলের মধ্যে জুয়েল বড়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করার খবরে গাজীপুরের মাওনা এলাকায় তিনি বিজয় মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। আর তখনই মাথায় গুলি লেগে লুটিয়ে পড়েন।এরপর হাসপাতালে নেওয়ার পথে জুয়েলে মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পরদিন ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ বাড়িতে এনে দাফন করা হয়।

ছাত্র না হয়েও শুরু থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত হন গার্মেন্টসকর্মী জুয়েল মিয়া (২৮)। নিজের কাজকর্ম বন্ধ করে মিছিল, মিটিং ও পিকেটিংয়ে সর্বদাই ছিলেন সবার সামনে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করার খবরে গাজীপুরের মাওনা এলাকায় তিনি বিজয় মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। আর তখনই মাথায় গুলি লেগে তিনি নিহত হন।

নিহত জুয়েলের পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি গাজীপুরের মাওনা এলাকার ওয়াপদা মহল্লায় থাকতেন। সেখানে তিনি একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। 

প্রায় ৬ বছর আগে বিয়ে করে ভাড়া বাসা নিয়ে বসবাস শুরু করেন জুয়েল। তার আয়ের একটা অংশ গ্রামে বাবা-মাকে পাঠাতেন। জুয়েলের চার বছর বয়সের একটি ছেলেসন্তান রয়েছে।

জুয়েলের স্ত্রী জুবায়দা বেগম জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে প্রায় প্রতিদিন পুলিশের গুলিতে অনেকেই নিহত হলে স্বামী জুয়েলের মন খুবই খারাপ হয়। এই জন্য তিনি নিজের কাজে না গিয়ে প্রতিদিনই ছাত্রদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে মিছিলে যেতেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে চলে গেলে আনন্দ মিছিলে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হন। পরে বিকেল ৩টার দিকে খবর পান তার স্বামী মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। 

নিহত জুয়েলের মা জিনুয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার কইলজার ধনরে কেরে মারল? হে তো খালি আনন্দ করতে গেছিন। অহন আমি কী লইয়া বাঁচবাম?’

এলাকাবাসী জানায়, জুয়েল ছিল তাদের জন্য একটা গর্বের বিষয়। বাড়িতে এলেই তার নম্রতা-ভদ্রতা ও মানবিকতা সবার মন কেড়ে নিত। কারো বিপদে সব সময় সহযোগিতা করতেন। তার এই মৃত্যুতে গ্রামবাসী একজন ভালো মানুষকে হারাল। 

আরবি/জেডআর

Link copied!