উৎসব মুখোর পরিবেশে উত্তরাঞ্চলে কয়েকটি জেলায় নতুন ধান কেটে ও বড় বড় জাতের সৌখিন মাছ দিয়ে চলছে পহেলা অগ্রহায়ণে নবান্ন উৎসব। বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় যুগ যুগ ধরে প্রতিটি গ্রামে পঞ্জিকার তারিখ মতে ১লা অগ্রহায়নের প্রথম দিন ইংরেজি (১৭ নভেম্বর) রবিবার এই তিথিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নবান্ন উৎসব পালন করেন। উৎসবকে সামনে রেখে বিশেষ করে পশ্চিম বগুড়ার কাহালু, দুপচাঁচিয়া, আদমদিঘী, শিবগঞ্জ, শেরপুর উপজেলা এবং নওগাঁ জেলার বিভিন্ন এলাকায় হিন্দু সনাতন ধর্মালম্বীরা সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ যুগ যুগ ধরে ১লা অগ্রহায়ণে এ সময়ে নতুন ধান কেটে বাজার থেকে বড় বড় জাতের সৌখিন মাছ, নতুন, আলু, ফুলকপি, পাতাকপি, শাক-সব্জি কিনে আত্মীয়-স্বজন পরিবারবর্গ নিয়ে নবান্ন উৎসব পালন করে আসছে।
হিন্দু (সনাতন) ধর্মের সম্প্রদায়ের প্রতিটি বাড়িতে উঠানে তুলসী বেদীর সামনে কলার গাছের মোচঁপাতা সিঁদুর লাগিয়ে তামার পয়সা, ধুপকাঠি, নতুন ধান কাটার কাঁচি এবং শঙ্খ ও কাশি বাজিয়ে পরিবারের বড় ছেলে অথবা ছোট ছেলে ধুতি পরিহিত করে জমি থেকে নতুন ধান সনাতন ধর্মমতে (আখ) কেটে বাড়ির উঠোনে রেখে কুলোর উপরে ঝাঁপ দিয়ে ধান থেকে নতুন চাল বের করে কলা ও বিভিন্ন ফলমুল দিয়ে একসঙ্গে মিশিয়ে বাড়ির পরিবারের সকল সন্তানদেরকে নিয়ে ছোট ছোট কলার পাতায় প্রসাদ নিয়ে বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে উত্তর মুখে হয়ে দেব-দেবতাদেরকে উৎসর্গ করে প্রসাদ সেবা করেন।
এরপর রাত্রিতে নতুন চালের অন্ন, মাছ ও বিভিন্ন তরিতরকারি রান্না করে প্রথমে তিন পুরুষের নামে উৎসর্গ করে তারপর বাস্তভিটা ও পুকুরে অন্ন দান করার পর পরিবারসহ আত্মীয়-স্বজন সবাই একসংগে নবান্ন উৎসব পালনে মেতে উঠেন।
এছাড়াও নবান্ন উৎসব উপলক্ষে দুপচাঁচিয়ায় ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলায়। বাঙ্গালির বিভিন্ন উৎসবের মধ্যে নবান্ন একটি অন্যতম উৎসব। নবান্ন উৎসবকে ঘিরে দুপচাঁচিয়া সিও অফিস বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিরাট মাছের মেলা, সৌখিন বড় বড় নানা জাতের মাছ বিক্রি হয়। দুপচাঁচিয়ার মৎস্য আড়ৎ ব্যবসায়ী সমিতির আয়োজনে প্রতি বছর ন্যায় এবারও এই মাছের মেলা শুরু হয়েছে । ১৬ নভেম্বর (শনিবার) রাত ১১টা থেকে জেলা উপজেলা বিশেষ করে রাজশাহী অঞ্চল সাবাই হাট, মান্দা মৈনুম, সাপাহার, নজিপুর, মহাদেবপুর এলাকার পুকুরের বড় বড় মাছ বিভিন্ন ট্রাকে করে দুপচাঁচিয়া কয়েকটি মাছের আড়তে এসে পাইকারী ভাবে শুরু হতে থাকে বেচাকেনা।
এরপর এইসব মাছ পশ্চিম বগুড়া সহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় মাছগুলো বিক্রির উদ্দেশ্যে চলে যায়। এমন কিছু বড় জাতের মাছ দুপচাঁচিয়াতে নবান্ন উৎসবে উঠে যেমন-কাতল, চিতল, রুই, মৃগেল, সিলভার কাপ, গ্রাস কাপ এবং নদীর পাঙ্গাশ মাছসহ নানা রকমের মাছ মেলায় কিনার জন্য ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের দেখা যায়। মেলার মাছের আমদানির ক্ষেত্রে মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
কয়েকজন মাছ চাষি মোকবুল হাসেন, ফেরদৌস আলম ও সাখাওয়াত হোসেন জানায়, মাছ চাষ করতে গেলে মাছের খাদ্য উচ্চমূল্যে কিনে পোনা থেকে বড় মাছ চাষ করে নবান্ন উৎসবের জন্য মাছগুলো বিক্রির জন্য নিয়ে আনা হয়।
দুপচাঁচিয়া মৎস্য আড়ৎদার সমিতির সাধারন সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক আলম বলেন, মাছ চাষিরা আমাদের মৎস্য আড়ৎতে নিরাপত্তা সহ বিভিন্ন ধরনের সুবিধা সহ নির্বিঘ্নে মাছ বিক্রি পারেন। দুপচাঁচিয়ার এই মেলা ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করি এবং মাছ ব্যবসয়ীরা এই মেলাতে মাছ নিয়ে নির্বিঘ্নে বেচাকেনা করতে পারে ।
আপনার মতামত লিখুন :