ঢাকা শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫
রাজস্ব হারাচ্ছেন সরকার

নওগাঁ সমবায় অফিস চত্ত্বরের খেজুর গাছের গুড় কর্মকর্তাদের পেটে

নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২৫, ০৮:৩৬ পিএম

নওগাঁ সমবায় অফিস চত্ত্বরের খেজুর গাছের গুড় কর্মকর্তাদের পেটে

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

নওগাঁ জেলা সমবায় অফিস চত্ত্বরে রয়েছে প্রায় ৩০টি খেজুর গাছ। সেগুলো থেকে রস সংগ্রহ করে দীর্ঘ ২৫বছর যাবৎ গুড় তৈরি করে বিক্রি করে আসছেন মজিবর রহমান নামের এক গাছি। সরকারী গাছ লিজ বা চুক্তি না নিয়ে এমন কাজ করে আসছেন তিনি। তবে এর বিনিময়ে প্রতি মৌসুমে প্রায় ২’শ থেকে আড়াই’শ কেজি করে গুঁড় দিতে হয় সমবায় অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের। সেই গুঁড় পদবী অনুযায়ী নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেন তারা। এর ফলে প্রায় ২৫বছর ধরে রাজস্ব হারাচ্ছেন সরকার। তবে এসব বিষয় তার ভালো জানা নেই বলে দায়সারা বক্তব্য দিয়েছে জেলা ভারপ্রাপ্ত সমবায় কর্মকর্তা জয়নুল আবেদীন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গাছি মজিবর রহমান ২৫ বছর থেকে সমবায় অফিস চত্ত্বরের গাছগুলো রস সংগ্রহ করে বিক্রি করে থাকেন। চত্তরের ভিতরেই একটি ঘরে পুরো শীত মৌসুম পার করেন তিনি। সেখানেই খেজুর ডাল দিয়ে বানিয়েছেন গুঁড় উৎপাদনের জায়গা। উৎপাদিত গুঁড়ের একটি অংশ দিতে অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের। বাঁকি গুড় বাজারে ৩০০টাকা দরে বিক্রি করে থাকেন তিনি।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা হলে তারা জানান, সরকারি জায়গার খেজুর গাছ। সেখান থেকে উৎপাদিত গুড় সমবায় অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা একটি অংশ নিয়ে থাকে, যা ঠিক নয়। যদি চুক্তি ভিত্তিকভাবে বা লিজ দিয়ে এমনটা করা হতো তাহলে সরকারি কোষাগারে রাজস্ব জমা হতো। সেটা না করে ২৫বছর ধরে গুড় তারা নিয়ে নিচ্ছে। আমাদের জানামতে কোন মৌসুমে ১০০ কেজি, কোন মৌসুমে ২০০ কেজি আবার ৩০০ কেজি করে গুড় নিয়ে থাকে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। এতে করে এ যাবৎ গুঁড়ের মূল্য হিসেবে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা তারা আত্নসাৎ করেছে।

গাছি মজিবর রহমান এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি প্রায় ২৫বছর ধরে সমবায় অফিস চত্ত্বরে থাকা খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় উৎপাদন করে আসছি। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ কেজি করে গুড় উৎপাদন করে থাকি। যেহতেু সমবায় অফিসের জায়গায় খেজুর গাছ, আমি তাদের জায়গায় থাকি। যার কারনে কিছু গুড় অফিসের স্যারদের দিতে হয়। এবার কিছু গুড় স্যারদের দিয়েছি আরও গুড় দিতে হবে। অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ৩০০ কেজি নয় হয়ত এবার ৮০-৯০ কেজি গুড় যাবে।

সমবায় অফিসের হিসাবরক্ষক মমিনুল ইসলাম বলেন, আমি গাছি মজিবর রহমান এর কাছে ধারাবাহিকভাবে গুড়গুলো নিয়ে আসি। এবং সিরিয়াল অনুযায়ী অফিসের ষ্টাফদের মাঝে বিতরণ করি। প্রতি মৌসুমে কতকেজি গুঁড় পায় অফিস এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তেমন কিছু আমি বলতে পারবোনা।

জেলা (ভারপ্রাপ্ত) সমবায় কর্মকর্তা মো. জয়নুল আবেদীন বলেন, আমি এখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি কিছুদিন থেকে। আমাদের অফিস চত্ত্বরের খেজুর গাছের গুড় স্টাফরা নেয়। তবে সেটা খুব সামন্য। গাছগুলো লিজ বা চুক্তিভিত্তিক দিলে রাজস্ব পেত সরকার এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেননি।

নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহেল রানা বলেন, আমার তো এ বিষয়ে সঠিক জানা নেই। তবে আমি খোঁজ খবর নিয়ে দেখব।

আরবি/জেডআর

Link copied!