সলঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে লাঠি হাতে সারারাত দায়িত্ব পালন করে গোপাল চন্দ্র ভৌমিক মজুরি পান ৬০ টাকা। আগে পেতেন ২০ টাকা। ২৬ বছরে এই মজুরি বেড়ে এখন হয়েছে ৬০ টাকা। গোপাল সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নৈশ প্রহরী কাম ঝাড়ুদার। সলঙ্গা থানার বাসুদেবকোল গ্রামের দরিদ্র দিনমজুর অজিত চন্দ্র ভৌমিকের ছেলে গোপাল চন্দ্র ভৌমিক। স্ত্রী, দুই ছেলে বৃদ্ধ বাবা-মা ও স্বামী পরিত্যক্ত ছোট বোন মিলে ৬ সদস্যের সংসার তার। ২ শতক জমির উপর ছোট্ট একটা বাড়িতে এদের নিয়েই বসবাস করেন তিনি। আশায় আশায় বুক বেঁধে ছিলেন একদিন তার চাকরি সরকারি হবে। তিনি তার শ্রমের উপযুক্ত মূল্যায়ন পাবেন। সংসারে দীর্ঘ দিনের দারিদ্র্য কষ্ট গুচবে তার।
সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানা গেছে , ১৯৯৮ সালে গোপাল ভৌমিককে নৈশ প্রহরী কাম ঝাড়ুদার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। অস্থায়ী এই নিয়োগে দৈনিক ২০ টাকা করে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৬ টায় দায়িত্ব পালনে অফিসে আসেন তিনি। সারা রাত কাজ করে সকালে তাকে পুরো অফিস ও এর অঙ্গন ঝাড় দিতে হয়। সকাল ৯ টায় অফিস কর্মীরা এলে বাড়ি ফেরেন গোপাল। ৯ বছর পর ২০০৮ সালে গোপাল ভৌমিকের দৈনিক মজুরি বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা। অথচ তাকে দায়িত্ব পালন করতে ১৫ ঘন্টা। গোপাল চন্দ্র ভৌমিক জানান, সারা রাত লাঠি ও টর্চ হাতে দায়িত্ব পালন করে মাসে পান ১৮ শ’ টাকা। তাও এই টাকা মাসের পর মাস বাকী থাকে। তার স্ত্রী লক্ষ্মী রানী সংসারের কাজ কর্মের ফাঁকে দরজির কাজ করে মাসে কয়েক হাজার টাকা আয় করেন। দিনের বেলায় তারা বাড়িতে একটা গরু পোষেণ। গোপালের ২ ছেলে। বড় ছেলে গৌরব ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলে নীরব পড়ে ৩য় শ্রেণিতে। বুড়ো বাবা-মা, নিজের ছোট বোনটা মিলিয়ে ৬ জনের সংসার। এই দ্রব্যমূল্যের বাজারে অনেক কষ্টে চালতে হয় তাদের। গোপাল অনেক আশা বুকে নিয়ে এই চাকরিকে আঁকড়ে আছেন। একদিন চাকরিটা সরকারি হবে। আর দুঃখ থাকবে না। সফল হবে এতো দিনের কর্মপ্রয়াস। কিন্তু জীবনের অর্ধেক সময় কেটে গেল। ২৬ বছর পার করলেন এখানে। অথচ আজ পর্যন্ত কোন আশার আলো দেখছেন না তিনি।
সলঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার রুমানা লোপা বললেন, গোপাল চন্দ্র ভৌমিক একজন স্বচ্ছ দায়িত্বশীল কর্মী। অফিসের কাজে নিবেদিত প্রাণ। অথচ
সামান্য কয়টা টাকা পান তিনি। তার উপর রবাদ্দ পেতে বিলম্ব হলে মাসের পর মাস বাকী থাকে বেতন। একেবারেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন গোপাল। তার মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে সাব-রেজিস্ট্রারের এককভাবে কিছুই করার নেই। এটা মন্ত্রনালয়ের ব্যাপার। তবুও তিনি ওর ব্যাপারে সাধ্যমত চেষ্টা করছেন।
এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার শরীফ তোরাফ হোসেন জানান, বর্তমান বাজারে ৬০ টাকা দিন মজুরি অতি নগন্য। ২৬ বছর ধরে চরম কষ্টে দিন পাত করছেন গোপাল। এটা সত্যিই খুবই দু:খজনক। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। অল্প দিনের মধ্যেই একটা ব্যবস্থা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আপনার মতামত লিখুন :