পার্বত্য জেলা বান্দরবানের সবচেয়ে জনবহুল এলাকা লামা উপজেলায় পাহাড়ি বাঙালিদের মিলনস্থল লামা বাজার। পাহাড়ি ও বাঙালি সকলে দূর দূরান্ত থেকে প্রতি সাপ্তাহ অন্তর ছুটে আসেন এই বাজারে। পাহাড়ে সব ধরনের সবজি উৎপাদন হলেও লামা বাজারে ১০০ টাকার নিচে কোন সবজি নেই।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) সকালে সরেজমিন লামা বাজারে গিয়ে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, বেগুন, সিম, কাকরল , ঝিঙা, কুমড়া, মারফা, বরবটি, পটল ও শশা ১১০- ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মূলা ১০০ টাকা, টমেটো ২০০ টাকা ও পাহাড়ি ধনে মরিচ ৪০০ টাকা।
স্থানীয় ভোক্তা আবুল হাসেম বলেন, আমরা সদর ইউনিয়নের ১০-১৫ কিলোমিটার দূর থেকে লামা বাজারে সাপ্তাহিক বাজারের জন্য আসি কিছুটা সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপণ্য কিনতে। কাঁচাবাজারের আকাশচুম্বী দাম দেখে হতাশ হই। অন্তত আমাদের পাহাড়ি এলাকার সবজি কম দামে পাওয়ার কথা। কি কারনে সাশ্রয়ী মূল্যে পাইনা তা জানি না।
স্থানীয় অপর এক ভোক্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, বাজারে যেই সবজিতে হাত দেই ১০০ টাকা বা ১২০ টাকার নিচে কোন কিছু নেই। সীমিত আয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী বাজার করা খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্তত স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত সবজি কিছু কম দামে পাওয়া উচিৎ ছিল।
তিনি আরও বলেন, এসব দাম নিয়ন্ত্রণে যেন দেখার কেউ নেই। নিয়মিতভাবে বাজার মনিটরিং করলে আমরা ভোক্তারা কিছুটা স্বস্তি পেতাম।
লামা কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, কাঁচামালের দাম কখনো নিয়ন্ত্রণ করা যায়না। একদিনে দাম বাড়ে, আবার একদিনে দাম কমে যায়। এখানে কারোরই নিয়ন্ত্রণ নেই।
তিনি আরও বলেন, বাজারের কাঁচামালের সরবরাহ বাড়লে দাম কিছুটা কমে। আবার সরবরাহ কমে গেলে দাম বেড়ে যায় এটা স্বাভাবিক। তবুও আমরা চেষ্টা করি সল্প লাভে বিক্রয় করতে।
এদিকে লামা কাচাঁবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ইসমাইল হোসেন বলেন, আমাদের এলাকার সবজি স্থানীয় বাজারে সরাসরি আসে না। বাহিরের ব্যবসায়ীরা কৃষকদের অগ্রিম টাকা দাদন হিসেবে দিয়ে রাখে। পার্শবর্তী চকরিয়া ও কক্সবাজারের ব্যবসায়ীরা এখানে এসে সরাসরি এসব সবজি কিনে নিয়ে যায়। আমরা সেই একই সবজি চকরিয়া আড়ৎ থেকে কিনে আনি। যার করনে বারবার পরিবহন খরচ বেড়ে হাতবদল হয়ে সবজির দাম বাড়ে।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় কৃষকরা আমাদের নিকট সরাসরি সবজি পাইকারিতে বিক্রি করলে আমরাও আরও কম দামে খুচরা বাজারে বিক্রি করতে পারতাম। তাই সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।
এছাড়া লামা বাজারে মাছ, ব্রয়লার, সোনালি, দেশি মুরগি, ডিম, ডাল, শুটকি ও ভোজ্যতেলসহ সব খাদ্যসামগ্রীর মূল্যও আকাশচুম্বী।
লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান সোহেল বলেন, পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্ত সবজি চাষ হলেও সঠিক বিপণন ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। ফলে ভোক্তা ও কৃষক কেউই সুফল পাচ্ছে না। মধ্যস্বত্বভোগীরা ফায়দা হাসিলের সুযোগ পাচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে কৃষিপণ্য বিপণন করতে আমার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি এবং কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
আপনার মতামত লিখুন :