কুষ্টিয়ায় অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে বাধার মুখে ফিরে এসে ১০টি ইটভাটা মালিকের নামে ১০টি পৃথক মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাবিবুল বাসার। তিনি বলেন, অভিযানে বাধা প্রদান করায় ১০টি অবৈধ ইটভাটা মালিকের নামে তিনটি আইনে ১০টি পৃথক মামলা করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত আসামি রয়েছে অগুনতি। তবে আইনী কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে অভিযুক্ত ভাটা মালিকদের পরিচয় প্রকাশ করেননি তিনি। বুধবার কুষ্টিয়া পরিবেশ আদালতে সরকারি কাজে বাধা প্রদান, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন এবং ইট প্রস্তুত ও ভাটা আইনে মামলা করা হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে ২২ বর্গমাইল আয়তনের চরসাদিপুর ইউনিয়ন। এখানে বসবাস করেন প্রায় ২৩ হাজার মানুষ। আইন অমান্য করে এ ইউনিয়নের ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে ৩৩টি অবৈধ ইটভাটা। এর মধ্যে অন্তত ১৯টিতে রয়েছে টিনের তৈরি ড্রাম চিমনি। এ ইউনিয়ন ঘেঁষে কুষ্টিয়া সদর ও পাবনা সদর ইউনিয়নের অংশেও পড়েছে আরও অন্তত সাতটি অবৈধ ভাটা। এসব ভাটায় দেদার পোড়ানো হচ্ছে নদী ও ফসলি জমির মাটি; আশপাশের গাছের কাঠ। ইট বহনে ব্যবহৃত ট্রাকের কারণে ভেঙে পড়ছে গ্রামীণ সড়ক। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চরসাদিপুর চরাঞ্চলটি দুর্গম। যে কারণে অতীতে অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো যায়নি।
গত ৪ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া সদর, কুমারখালী; পাবনা সদর ও কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তর যৌথভাবে তিনজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ, র্যাব, আনসার ও ফায়ার সার্ভিসের ৬০ সদস্যের একটি দল চরসাদিপুরে অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানে যায়। পথে ভোমরার মোড় এলাকায় পৌছালে তাঁদের প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন ভাটার মালিক ও শ্রমিকরা। পরে ভাটার মালিকরা ‘আগামী বছর থেকে অবৈধভাবে ভাটা চালাবেন না’ মর্মে মুচলেকা দেন। সেটি নিয়েই কোনোমতে এলাকা ছাড়ে প্রশাসনের অভিযানিক দলটি।
একটি সূত্রে জানা গেছে, ওই এলাকার এবিসি ইটভাটার মালিক সাখাওয়াত হোসেন, আইএল ভাটার মালিক ইকবাল হোসেন, ইউআইপি ভাটার মালিক ওয়াসিম উদ্দিন, এনআরবি ভাটা মালিক পান্না ইসলাম, ফাইভ ভাটার মালিক মো. জাকিরের নেতৃত্বে অন্তত ২০টি অবৈধ ভাটার মালিক ও শ্রমিকরা পরিকল্পিতভাবে অভিযানে বাধা প্রদান করেন। অভিযানে বাধা প্রদানের অভিযোগ স্বীকার করেছেন এবিসি ইটভাটার মালিক সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, অন্তত ১৯টিতে ড্রাম চিমনি ভাটায় কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করেন। সবাই ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছে। সকলের জীবিকার কথা চিন্তা করে সম্মিলিতভাবেই অভিযানে বাধা দেওয়া হয়েছে। তিনি শুনেছেন মামলা হয়েছে। তবে তিনি কারো নাম জানেননা।
তার ভাষ্য, মামলার খবরে আতঙ্কিত ভাটা মালিক ও শ্রমিকরা। ইউএনও এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, যাচাই বাছাই করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর বাদী হয়ে মামলাটি করেছে। খুব দ্রুতই গুছিয়ে সাদিপুরে ফের অভিযান চালানো হবে।
আপনার মতামত লিখুন :