ঢাকা বুধবার, ০১ জানুয়ারি, ২০২৫
অশ্লীল অডিও-ভিডিও ফাঁস

ওসি পায়েল হোসেন ক্লোজড, তদন্ত কমিটি গঠন

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪, ০৮:১০ পিএম

ওসি পায়েল হোসেন ক্লোজড, তদন্ত কমিটি গঠন

চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পায়েল হোসেন। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

অশ্লীল অডিও-ভিডিও ফাঁসের পর যশোরের চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পায়েল হোসেনকে যশোর পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। টর্চার সেল পরিচালনা, ঘুষ ও রিমান্ড বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, নিরীহ মানুষকে হয়রানি এবং নারী কেলেঙ্কারির মতো নানা অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।

সর্বশেষ শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল থেকে এক ডিভোর্সি নারীর সংঙ্গে ওসি পায়েল হোসেনের অশ্লীল অঙ্গিভঙ্গির একটি ভিডিও ম্যাসেঞ্জারে ও হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (২৯ ডিসেম্বর) তাঁকে যশোর পুলিশ লাইনসে ক্লোজড করা হয়। এছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

পায়েল হোসেন গত ১৭ নভেম্বর চৌগাছা থানায় ওসি হিসেব যোগদান করেন। এরআগে তিনি ডিএমপির রমনা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) ছিলেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাধারণের সাথে দূর্ব্যবহার, আর্থিক অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে।

থানায় যোগদান করে প্রথম অভিযানে চৌগাছা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য (পুলিশের সাবেক এএসআই) জসিম উদ্দিনের বাড়িতে অভিযান চালান। অভিযোগ উঠেছে, জসিম উদ্দিনের বাড়ি পুলিশ সারারাত অবরুদ্ধ করে রাখে এবং তার কাছে ওসি ১ কোটি টাকা দাবি করেন।

উপজেলার ভাদড়া গ্রামের বিএনপি কর্মী মানিক হোসেনকে আটক করে থানায় আনার পর হাজতে না রেখে নিজের বাংলোতে আটকে শারীরিক নির্যাতন চালান। এ সময় মানিকের স্ত্রীর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা দাবি করে তা আদায় করেন। পরে অস্ত্র মামলায় তাকে রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে সোপর্দ করেন।

মাসিলা গ্রামের পারভেজ আহমেদ সোহাগ নামে এক যুবককে তুলে এনে ৩২ ঘণ্টা আটকে রেখে ইলেকট্রিক শক ও নির্যাতন করেন তিনি। এক পর্যায়ে তার পরিবারের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা আদায় করেন। এরপরও তাকে ডাকাতি ও মাদক মামলায় আসামি দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করেন বলে সোহাগের মা’ সাফিয়া অভিযোগ করেছেন। যদিও সোহাগের মা’ সাফিয়া এলাকায় মাদক স¤্রাজ্ঞী হিসেবে পরিচিত। সোহাগ, তার মা সাফিয়া, বোনসহ গোটা পরিবারের বিরুদ্ধে চৌগাছাসহ বিভিন্ন থানায় অসংখ্য মাদক মামলা রয়েছে।

২৩ নভেম্বর সিংহঝুলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবলীগের আহবায়ক কমিটির সাবেক সদস্য আব্দুল হামিদ মল্লিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তখন তার কাছে ওসি পায়েল ১০ লাখ টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ করেন হামিদ মল্লিক। টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাকে চাঁদাবাজির মামলায় আদালতে পাঠানো হয় বলেও অভিযোগ তার।
১৭ ডিসেম্বর জীবন হোসেন লিপু নামে এক যুবকের বন্ধু বাবুল হোসেনের ছোট ভাই হারিয়ে গেলে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

জীবন খান অভিযোগ করেন, দুদিন পর ওসি বাবুলকে ডেকে নিয়ে জানান, হারানো ব্যক্তিকে উদ্ধারে অতিরিক্ত এসপির জন্য দুই লাখ টাকা লাগবে। নিরুপায় হয়ে বাবুল ৫০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে দেন। পরে ওই হারানো ব্যক্তিকে পরিবারের সদস্যরাই উদ্ধার করলেও ওসি টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান। বাবুল ও জীবনের ছবি ও ফোন নম্বরসহ ‘দালাল হইতে সাবধান’ লেখা পোস্টার থানার দেয়ালে সেঁটে দেন। মোবাইল ফোনে গুলি করার হুমকি দিয়ে তাদের চৌগাছা ছাড়তে বাধ্য করেন যশোরের পুলিশ সুপারের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন জীবন খান।

সর্বশেষ শনিবার সকাল থেকে ৫ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ম্যাসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পরে। পরে একইদিন রাতে সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, ওসি পায়েল একটি মোবাইলে কথা বলছেন আবার কখনো হাসতে হাসতে ডিভোর্সি ওই নারীকে বিভিন্নভাবে অশালীন ইঙ্গিত দিচ্ছেন। একপর্যায়ে নিজের শরীর ও বিশেষ অঙ্গ প্রদর্শন করেন ওসি পায়েল। এছাড়া অডিওগুলিতে অশালীন কথাবার্তা বলতে শোনা যায়। এক পর্যায়ে ওই নারীকে এক রাতের জন্য পাঁচ হাজার টাকার প্রস্তাবও দেন ওসি।
এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মৌখিকভাবে পুলিশের বিভিন্ন উর্ধতন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ওসি পায়েল হোসেনকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। রোববার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেনের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন পায়েল হোসেন।

এ বিষয়ে চৌগাছা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কামাল হোসেন বলেন, এসপি স্যারের মৌখিক নির্দেশে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। তিনি জানান, ইন্সপেক্টর পায়েল হোসেনকে যশোর পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। তবে তিনি কোন লিখিত আদেশ পাননি।

মৌখিকভাবে অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে যশোরের পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ সাংবাদিকদের বলেন,‘ওসি পায়েলের কর্মকান্ডে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) রুহুল আমিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অভিযোগের বিষয়ে ওসি পায়েলের বরাত দিয়ে এসপি সাংবাদিকদের আরও বলেন, তাঁকে ট্র্যাপে ফেলা হয়েছে। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।

স্ট্যান্ড রিলিজ হওয়ার আগে ওসি পায়েল হোসেন সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, একটি চক্র তাকে ট্রাপে ফেলেছে। যে চক্রের বিরুদ্ধে তিনি আইনি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি দাবি করেন, ওই চক্রের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন তিনি।

আরবি/জেডআর

Link copied!