কৃষিতে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে সাথে প্রায় অবলুপ্ত হয়েছে পশু দিয়ে হালচাষ। কৃষি যন্ত্রপাতির আধুনিক যুগে গরু-মহিষ দিয়ে হালচাষ প্রচলন আগের মত চোখে পড়েনা তেমন। ঠিক এই সময়ে এসে ঘোড়া দিয়ে হালচাষের ঘটনা খুবই বিরল।
আর সেখানে মাঠে গরু-মহিষের বদলে ঘোড়া দিয়ে অন্যের জমিচাষ করার চিত্র দেখা গেছে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের জমগ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মমিন মিয়ার (৬৫)। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বসত ভিটা ছাড়া কোন জায়গা জমি নেই। ঘোড়া দিয়ে হাল চাষ করে সংসার চলে তাদের। এক বিঘা জমি ঘোড়া দিয়ে হাল চাষ করে নেন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। ষাটোর্ধ্ব মমিন মিয়া প্রতিদিন সকাল হলে বেরিয়ে পড়েন অন্যের জমি হালচাষে। এতে সাহায্য করে দুই নাতী।
ঘোড়া দিয়ে হাল চাষকারী বৃদ্ধ আব্দুল মমিন বলেন, আমার নিজের কোন জমি নেই। মানুষের জমিতে হাল চাষ করি। বিঘা প্রতি ৫০০ টাকা নেই। গরুর চেয়ে ঘোড়া বেশি হাঁটাচলা করে। ফলে কম সময়ে অনেক বেশি জমি চাষ করা যায়। এক দিনে দুই-তিন বিঘা পর্যন্ত জমিতে হালচাষ করা যায়। আমি গরিব মানুষ। এই কাজ করে সংসার চালাই।
মমিনের দুই নাতী বলেন, আনার নানা বৃদ্ধ মানুষ। তাই আমরা তার কাজে সাহায্য করি। এভাবে হালচাষ করে যা আয় হয় তা দিয়ে ঘোড়ার খাবার খরচ সহ আমাদের কোন রকম সংসার চলে।
এ বিষয়ে জমির মালিক কৃষক ইমান আলী বলেন, আমি ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ করেছি। আমার জমির চতুর্দিকে সবজিও ভুট্টার আবাদ। ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলার ঢোকার মত রাস্তা নাই। জমি কি দিয়ে চাষ করবো দুশ্চিন্তায় পড়েছিলাম। আগের মতো গরু দিয়ে হাল চাষও এখন নাই। একজনের কাছে জানতে পারলাম মমিন চাচা ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করে। ঘোড়ার শক্তি গরুর চেয়ে অনেক বেশি। ঘোড়া খুব দ্রুত হাঁটে তাই হাল চাষও দ্রুত হয়। চাষ খুব ভালো হয়।
বাউরা ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ইউপি সদস্য মামুন হোসন সরকার বলেন, মমিনের ঘোড়া এলাকায় বেশ চাহিদা রয়েছে।
পাটগ্রাম উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি অফিসার কৃষিবিদ হারুন মিয়া বলেন, ‘আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির যুগে প্রায় কৃষকরাই এখন উন্নত মানের যন্ত্র দিয়ে দিয়ে জমি চাষ করেন। এখন গরু-মহিষের হাল চাষ চোখে পড়ে না সেখানে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করাটা বিরল। আব্দুল মমিন নিজের জীবিকার প্রয়োজনে অন্যের জমিতে ঘোড়া দিয়ে চাষ বা মই দিচ্ছেন। তবে আমরা কৃষি বিভাগ কৃষকদের সবসময় আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে চাষাবাদের জন্য পরামর্শ দেই।
আপনার মতামত লিখুন :