৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেরে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায়। সেই সাথে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়। তৃণমূল থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ের অনেক আওয়ামী লীগ নেতা দেশ ছেড়ে আশ্রয় নেয় বিদেশে। আর বাকী আওয়ামী লীগ নেতারা চলে যায় আত্মগোপনে।
এদিকে একের পর এক চুরি ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটে চলেছে। এবার কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে মোবাইল এক্সেন্জার ও আরএস টেলিকম নামের দুইটি দোকান হতে কয়েক কোটি টাকার মোবাইল ফোন চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর কদিন আগে শহরের স্বর্ণ পট্টিতে জুয়েলার্সের দোকানে চুরি হয়। জানাগেছে, কুষ্টিয়ার মিরপুর থানা পুলিশের কর্যক্রমও অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়ে। যার কারণে মিরপুর উপজেলা ব্যাাপী প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে ডাকাতি, ছিনতাই ও চুরির ঘটনা। মিরপুর উপজেলা ব্যাপি ডাকাতি, ছিনতাই, চুরির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। অথচ ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ দিলেও পাচ্ছে না প্রতিকার। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ হচ্ছে থানা পুলিশ।
এছাড়াও ৫ আগস্টের পর থেকে পুরো উপজেলা ব্যাপি মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। মাঝে মাঝে পুলিশের অভিযানে মাদক উদ্ধার হলেও মাদক ব্যবসায়ীরা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। পুলিশের এমন স্থবিরতা নিয়ে মিরপুর উপজেলার জনমনে চলছে নানা প্রশ্ন। কোন পথে হাটছে পুলিশ? কেন চলছে তাদের এমন নিরবতা? জনগনের জানমাল নিরাপত্তা দিতে ব্যার্থ হচ্ছে পুলিশ। পুলিশকে বেগবান হতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে তার চিত্র ভিন্ন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়ার মিরপুরে গত ২৩ ডিসেম্বর শুক্রবার রাতে ৫টি গরু চুরি ও বিকেলে ১টি ছিনতাইয়ের ঘটনার পাশাপাশি একই দিনে আরো ৪টি মোটরসাইকেল চুরির তথ্য পাওয়া গেছে। উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের পুরাতন আজমপুর বাজারে আহসান হাবীব লিংকন রাখা তার ডিসকভার গাড়িটি খুঁজে পাননি। তার মোটরসাইকেলটি চুরি হয়ে গেছে বলে তিনি জানান। একই সময়ে কাকিলাদহ গ্রামের শফিকুল ইসলামের ডিসকভার মোটরসাইকেল, পুরাতন আজমপুর গ্রামের জহরুল ইসলামের স্পেলেন্ডার মোটরসাইকেল ও মাজিহাট জুম্মার নামাজের সময় একজনের গাড়িসহ মোট চারটা মোটরসাইকেল একইদিনে চুরির ঘটনা ঘটে।
গত ২৪ ডিসেম্বর মিরপুর পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের মোশারফপুর মাঠ থেকে রাতের অন্ধকারে তিনটি সেচ পাম্প চুরি হয় বলে জানা গেছে। এছাড়াও কয়েক দিন আগে মিরপুর বাসস্ট্যান্ড ছাতিয়ান কালিতলা মাঠ থেকে একটি করে মোটরসাইকেল হারিয়ে গেছে। ছাতিয়ান কালিতলা থেকেও তিনটা বাইসাইকেল চুরি হয়েছে। নিখোঁজের চার দিন পর ৯ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ী গ্রামের একটি পুকুর থেকে আসাদুল (৫০) নামের এক ব্যবসায়ীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত আসাদুল মিরপুর উপজেলার আমবাড়ীয়া ইউনিয়নের মহাম্মদপুর গ্রামের মৃত আফসার আলীর ছেলে। তিনি ছিট কাপড়ের ব্যবসা করতেন। পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় পূর্ব শত্রুতার জেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। গত ২৭ অক্টোবর (শনিবার) কুষ্টিয়ার মিরপুরে জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। গভীর রাতে উপজেলার আমবাড়ীয়া ইউনিয়নের নতুন সুতাইল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত জাহাঙ্গীর আলম চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানার কেদারনগর গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে।
এছাড়াও উপজেলার কোন কোন এলাকায় প্রতিদিন মারামারি, চুরি এবং ছিনতাই নিত্যনৈমিত্ত্ব ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই মাদকের প্রভাব উপজেলা ব্যাপি যেভাবে বিস্তার লাভ করছে তাতে করে প্রতিটি অভিভাবকই তাদের উঠতি বয়সী সস্তানদের নিয়ে শঙ্কার মধ্যে দিন যাপন করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিরপুর উপজেলার নওদা খাদিমপুরের এক মাদকসেবী বলেন, এখন মাদক কিনতে বেশী কষ্ট করতে হয় না। ফোন দিলেই মাদক মিলে যায়। কারন জানতে চাইলে ঐ মাদকসেবী বলেন, এখন তো আর পুলিশ নেই। সবাই স্বাধীন ভাবে ব্যবসা করতে পারছে। তাই মাদক ব্যবসায়ীরাও স্বাধীনতা পেয়েছে। আমাদের জন্য ভালোই হয়েছে।
মিরপুর উপজেলার বহলবাড়িয়ার অটো চালক টিপু বলেন, মিরপুর বহলবাড়িয়া সড়কের সাতবাড়িয়া মাঠে প্রায়ই ডাকাতি হয়। সন্ধ্যা হলে ডাকাত এর আতঙ্কে ঐ রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যায় না। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে ডাকাতি ও ছিনতাই এর ঘটনা ঘটে। আমরা চাই পুলিশ এসব সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনুক। তা না হলে উপজেলায় দিনে দিনে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে তাতে সন্ধ্যার পরে কোন রাস্তাতে বের হওয়া যাবে না।
বহলবাড়িয়া ইউনিয়নের সুতা ব্যবসায়ী সাদেক বলেন, বর্তমানে আমাদের এলাকাতে চুরির ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে। বাহিরে সুতা মেলতেই পারিনা। রাত হলেই চোরদের আনাগোনা বেড়ে যায়। থানার পুলিশ তো আর বাহিরে আসেনা। তাই রাতে চোররাই বাহিরে রাজত্ব করে। আমরা এই অবস্থার প্রতিকার চাই। নয়মাইল কাছারির বাসিন্দা সেঁতেরা বেগম বলেন, দেখতেই তো পারছেন আমাদের এখানের অবস্থা। দিনের আলোতে সন্ত্রাসীরা লুটপাট করে নিয়ে যায়। আর রাতের অন্ধারে চুরি। এসব সন্ত্রাসীদের কিছু বলার নেই। পুলিশ থাকা না থাকা এখন সমান হয়ে গেছে।
মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ ইউনিয়নের বাসিন্দা শাহজামাল বলেন, এলাকায় চুরি, ডাকাতি ও মাদকের ব্যবসা এখন ওপেন সিক্রেট। বাড়ীর সামনে দিন রাত ২৪ ঘন্টা চলছে মাদক বিক্রি । আগে মাঝে মাঝে পুলিশের অভিযান থাকলেও ৫ আগস্টের পর থেকে পুলিশের নেই কোন তৎপরতা। আমাদের তো মনে হয় থানাতে কোন পুলিশ নেই। পুলিশ কেন তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিলো তা জানা নেই। আমাদের চাওয়া দ্রুত যেন এসব অপরাধীদেরকে ধরে আইনের আওতায় আনা হয়।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় যে সব চুরির ঘটনায় ঘটেছে সেগুলো কিছু আমরা ধরেছি এবং বাকি গুলোদের ধরার ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছি। চুরি ও মাদকের বিষয় আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে কাজ করছি। আমার যতটুকু ক্ষমতার রয়েছে তা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা বসে নেই, প্রতিনিয়ত কাজ করছি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথ বলেন, যে সকল এলাকায় চুরি, ডাকাতি ও মাদক ব্যবসা হচ্ছে এ বিষয়ে আপনারা প্রথমে থানার ওসিকে জানান, তরপর সেখানে পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে কিনা দেখেন।
আপনার মতামত লিখুন :