ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী বাবা-ছেলের ‘চায়ের দোকান’

বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪, ০৮:১৬ পিএম

বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী বাবা-ছেলের ‘চায়ের দোকান’

মো: হাবিব ও তার ছেলে। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দুই সন্তনের জনক মো. হাবিব। জন্মগতভাবে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের রোড সুগারমিল গেটের বিপরীতে তাঁর চায়ের দোকান। হাবিবের দুই সন্তানের মধ্যে মেয়ে কানে শুনতে পেলেও কথা বলতে পারেন না। আর ছেলে কানে শুনতে ও কথা বলতে পারে না। কিন্তু এভাবেই ছেলেকে নিয়ে দোকান পরিচালনা করছেন তিনি। ক্রেতাদের ইশারা আর ঠোঁটের ভাষা বুঝে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বেচা-কেনা করছেন তারা।

আর চায়ের দোকান চালিয়ে চলে আসছে তাদের চার সদস্যের সংসার। এলাকাবাসীর কাছে তারা হয়ে উঠেছেন প্রতিবন্ধিত্ব জয়ের অনন্য এক দৃষ্টান্ত।

বাবা-ছেলের এমন প্রতিভায় বিস্মিত সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। হাবিবের বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের ফকদনপুর গ্রামে।

হাবিব সকালে তার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে দোকানে আসে। বাবা-ছেলের যোগসাজশে চলে বেচা-কেনা। দোকানের প্রয়োজনীয় মালামাল কিনে নিয়ে আসে ছেলে। কোন কিছুর প্রয়োজন হলে আবার কথাও বলেন মুঠোফোনে। দোকান থেকে কেউ বাকী নিলে সেটিও লিখে রাখে তাঁরা।

ক্রেতা রিপন বলেন, চায়ের দোকানদার বাবা ছেলে ব্যবহার অনেক ভালো। কারো কথায় বিরক্ত হয় না বা রাগ করে না। তারা দুজনে প্রতিবন্ধি হওয়ার পরেও কাজ করে জীবিকা-নির্বাহ করছে। এখন সকলে যদি তাদের একটু সহযোগীতা করে তাহলে তার দুই সন্তানের পড়াশোনা ভালো ভাবে হবে।

আরেক ক্রেতা সামাদ বলেন, ইশারায় ক্রেতাদের ভাষা বুঝে ফেলেন বাবা-ছেলে। লাল চা, দুধ চা নাকি পান সবই বুঝেন ইশারায়। তাদের মত অনেক প্রতিবন্ধী অন্যের কাছে হাত পেতে চললেও তারা হয়ে উঠেছে অনন্য উদাহরণ।

হাবিব এর প্রতিবেশি জহির বলেন, তাদের পরিবারে অনেক অভাব। একটা ছোট্ট দোকান করে চলতে হয় তাদের। ছেলে-মেয়ে, বাবা তিনজনেই প্রতিবন্ধী। মেয়েটা ছোট চিকিৎসা করলে হয়তো ভালো হবে। সরকার যদি পরিবারটার পাশে দাড়ায় তাহলে পরিবারটা ভালোভাবে চলতে পারে।

হাবিবের স্ত্রী আফরোজা আক্তার বলেন, ১১ বছর আগে হাবিবের সাথে বিয়ে হয় আমার। স্বামীর মতই দুই সন্তানও কথা বলতে পারে না। ইশারা আর ঠোঁটের ভাষা বুঝে তাদের সাথে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। স্বামী ও ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতা হলেও মেয়ের হয়নি এখনো। মেয়েটা বড় হলে বিয়ে দিতে হবে। তাই চিকিৎসা করাতে চাচ্ছি যদি কিছুটা হলেও ভালো হয়। কিন্তু অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। সরকার ও বিত্তবানরা আমাদের পাশে দাঁড়ালে বাচ্চাটার চিকিৎসা করতে পারতাম।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সারোয়ার মুর্শিদ আহমেদ বলেন, ঠাকুরগাঁও রোড এলাকার প্রতিবন্ধি হাবিব ও তার তার পরিবার সম্পর্কে অবগত আছি।তাদের পরিবারকে ক্ষুদ্র ঋণ সহয়তা দেওয়া যেতে পারে। হাবিবের প্রতিবন্ধি মেয়ের প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। 

আরবি/জেডআর

Link copied!