ঢাকা রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
প্রচণ্ড গরমে ডায়রিয়া ও সর্দি-জ্বর

বগুড়ার হাসপাতালে শিশু রোগীর চাপ

নজরুল ইসলাম দয়া, বগুড়া

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪, ০৭:১১ পিএম

বগুড়ার হাসপাতালে শিশু রোগীর চাপ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

প্রচণ্ড গরমে বগুড়ায় ব্রংকিওলাইটিস ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। ডায়রিয়া, সর্দি-জ্বর, কাশিসহ নানা রোগ বাড়ছে। হিটস্ট্রোকসহ গরম-জনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম অবস্থায় আছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।

রোববার বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২৭ শিশু এবং সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ৪৪ শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে। শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি বেশিরভাগই জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, ব্রংকিওলাইটিস ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত।

সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, গত ১১ সেপ্টেম্বর শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয় ৯৭ জন। এগারো দিন ধরে বেড়েছে শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ। গত শনিবার হাসপাতালে ভর্তি হয় ১২৪ জন। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১২৭ শিশুকে ভর্তি করানো হয়। অধিকাংশেরই বয়স দুই বছরের নিচে। কারও দুই তিনদিন ধরে সর্দি-জ্বর, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্ট। অনেকে হাসপাতালে আসার পর জানতে পারেন শিশু নিউমোনিয়ায় ভুগছে।

রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত বগুড়া সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ৪৪ শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ডিউটি চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর ২১জন, ১৭ সেপ্টেম্বর ৩৬জন, ১৯ সেপ্টেম্বর ২৩ জন ও ২০ সেপ্টেম্বর ২৯ শিশু ভর্তি ছিল। গরমে অসুস্থ হয়ে অনেক শিশু চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরলেও প্রতিদিন অন্তত ১৪-১৫ জন হাসপাতালে ভর্তি থাকছে।

চিকিৎসকেরা জানান, তীব্র গরমে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে শিশু ও বৃদ্ধরা। পাঁচ ধরনের সমস্যা নিয়ে বেশি শিশু রোগী আসছে। সর্দি-জ্বর, শরীরে র‍্যাশ ওঠা, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও অ্যাজমা রোগীর মধ্যে নিউমোনিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এটা ভাইরাসজনিত রোগ। এই সংক্রামক ব্যাধি আক্রান্ত শিশুদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া পাড়া-মহল্লার ফার্মেসি থেকে ওষুধ না খাওয়ানোর সতর্ক পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ণ চিকিৎসক ডা. আশিক উর রহমান জানান, প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেক শিশু। প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর চাপে হিমশিম অবস্থা। আমাদের হাসপাতালে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা প্রদানে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া আছে। 

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনদিন ধরে ভর্তি আছে সোনাতলা উপজেলার ৯ মাস বয়সী শিশু আবিদ হাসান। তার মা মিষ্টি বেগম বলেন, শিশুর শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিলো। বুকে চাপ আর কাশি ছিল। হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ।

শয্যা সংকটে হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে জায়গা পেয়েছে ৭ মাসের শিশু মোহাম্মদ ইব্রাহিম। তার বাবা বগুড়া শহরের সাবগ্রামের বাসিন্দা ফয়সাল আহমেদ বলেন, মেঝেতে অসুবিধা হচ্ছে না। ভিতরে রোগী আর তাদের স্বজনদের চাপে গরমে অস্বস্তি হতো। সর্দি-কাশি ও জ্বর নিয়ে চারদিন আগে শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাদের গ্রামের অনেক শিশু গরমে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। স্থানীয় ফার্মেসিতে কেউ সুস্থ হচ্ছে না। সবাই হাসপাতালে ছুটছে।

সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ২৯ দিনের নবজাতক তামিমকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার মা সারিয়াকান্দি উপজেলার ছাইহাটা গ্রামের বাসিন্দা ফেনসি বেগম বলেন, পাঁচদিন আগে শিশু তামিম ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। স্থানীয় ফার্মেসিতে চিকিৎসা দেওয়ার পর আরও বেশি অসুস্থ হলে বগুড়া পপুলারে যান। সেখানকার চিকিৎসক হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেয়। শুক্রবার বিকেলে ভর্তি হওয়ার দুইদিন পর শিশু কিছুটা সুস্থ। হাসপাতালে আসার পর জেনেছেন শিশু নিউমোনিয়া আক্রান্ত। তাদের গ্রামের অনেক শিশু প্রতিদিন অসুস্থ হচ্ছে।

আরবি/জেডআর

Link copied!