ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪
তিন বছর ধরে ভাঙ্গা ব্রিজ

দুমকিতে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগে শিক্ষার্থীসহ কয়েক গ্রামের মানুষ

দুমকি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২৪, ০৪:০৪ পিএম

দুমকিতে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগে শিক্ষার্থীসহ কয়েক গ্রামের মানুষ

ছবি : রূপালী বাংলাদেশ

পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার সরকারি লেবুখালী হাবিবুল্লাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে ভাড়ানি খালের উপরে নির্মিত আয়রন ব্রিজটি তিন বছর আগেই ভেঙ্গে পড়েছে। ব্রিজটি মেরামত না লেবুখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী, ভূমি অফিসসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাজারে যাতায়াত করা মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন ছোট খেয়া নৌকায় তাদেরকে ভারানি খাল পারাপার হতে হচ্ছে। বিকল্প পথে যাতায়াত করতে গেলে অন্তত ৪ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। সেই পথটিও নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে শিক্ষার্থীদের পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে হয় বিদ্যালয়ে।

স্থানীয়রা জানান, লেবুখালীর পায়রা নদী থেকে পটুয়াখালীর লাউকাঠি নদীর সাথে সংযুক্ত ভাড়ানি খালের ওপর সরকারি লেবুখালী  হাবিবুল্লা  মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে ২০০৯ সালে তৈরি করা হয় আয়রন ব্রিজটি। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও স্থানীয় লোকজন এই ব্রিজ দিয়ে পারাপার হতেন। ২০১৫ সালে পণ্যবাহী কার্গোর ধাক্কায় ব্রিজটি একাংশ বিধ্বস্ত হলে কয়েকমাস শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা দুর্ভোগে পড়েন। তবে কয়েক মাসের মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এটি মেরামত করলে স্থানীয়রা আবারও পারাপারের সুযোগ পায়। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে বালুভর্তি একটি কার্গোর ধাক্কায় ব্রিজের অর্ধেকটা ভেঙে খালে পড়ে যায়। তখন থেকেই দু‍‍`পাড়ের জনসাধারণের যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

দীর্ঘ তিন বছরেও ব্রিজটি মেরামত না হওয়ায় বিদ্যালয়ের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীকে ঝুঁকি নিয়ে খেয়া নৌকায় পারাপার হতে হচ্ছে।

লেবুখালী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান আশ্রাফ জানান, ১৯৬১ সালে স্থাপিত সরকারি হাবিবুল্লাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ২০১৮ সনে জাতীয়করণ করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। বিদ্যালয়টিতে লেখাপড়ার মান ভালো হওয়ায় পার্শবর্তী বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুধলমৌ গ্রাম, দুমকি উপজেলার আলগি নলদোয়ানী লেবুখালিসহ কয়েকটি গ্রামের শিক্ষার্থীদেরকে খেয়া পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়।

তিনি আরো বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খেয়া পারাপার  অথবা ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্থ চার কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে পাগলা এলাকায় নির্মিত ব্রিজ পারা হয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হয়। ব্রিজটি বিধ্বস্ত হওয়ার কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কমে গেছে বলেও জানান তিনি।

লেবুখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মাস্টার জানান, ব্রিজটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকেই মেরামতের জন্য এলজিইডিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি মেরামত না হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই এলাকায় লেবুখালী ইউনিয়ন ভূমি অফিস, পোস্ট অফিস, দুটি বাজারসহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ এলাকার লোকজন ব্রিজ না থাকায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

সরকারি লেবুখালী হাবিবুল্লাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাগরিকা ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতি আক্তার জানান, তারা বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুধল মৌ এবং পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর গ্রাম থেকে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভয়ে খেয়া পারা হতে হয়। ব্রিজটি মেরামত অথবা পুনঃনির্মাণ করা হলে যাতায়াতে আর দুর্ভোগ পোহাতে হবে না।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী এলজিইডি‍‍`র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হোসেন আলী মীর জানান, ভারানি খালে বিধ্বস্ত হওয়া ব্রিজটি সরিয়ে সেখানে একটি নতুন ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সেতুটির ডিজাইনের কাজ চলমান আছে এবং দ্রুতই টেন্ডার আহ্বান করে নতুন ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।

আরবি/ এইচএম

Link copied!