ঢাকা সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪
লাকসাম নওয়াব ফয়জুন্নেছা জাদুঘর

সম্পদ দখলে ভূমিদস্যুদের পাঁয়তারা

মোজাম্মেল হক আলম, লাকসাম

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২৪, ০৪:০২ পিএম

সম্পদ দখলে ভূমিদস্যুদের পাঁয়তারা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

উপমহাদেশের প্রথম মুসলিম মহিলা নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীর স্মৃতিবিজড়িত লাকসাম পশ্চিমগাঁও নওয়াব বাড়ি বহু প্রতীক্ষার পর যাদুঘরে রূপান্তরিত হলেও আশেপাশের সম্পদ থেকে লোলুপ দৃষ্টি সরছেনা প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের। হাতি ও ঘোড়ারগাড়িতে চড়ে ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী যে পথ ব্যবহার করে বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন তা এখন দখলের পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছেন ভূমিদস্যুরা। 

প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় ভূমিদস্যুরা দখল উৎসবে মেতে উঠছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে গেজেট ও প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় লাকসামের পশ্চিমগাঁও নওয়াব বাড়ি ও তৎসংলগ্ন ৪.৫৫ একর জায়গা প্রত্নতত্ব  সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কারনে বিগত ৭ বছরে কোন আশানুরূপ উন্নয়ন সম্ভব হয়নি। ভূমিদস্যু ও প্রভাবশালী অসাধু মহলের কারসাজিতে নওয়াব বাড়ির অনেক মূল্যবান ঐতিহ্য ও স্থাপনা ধ্বংস ও বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে। 

জীবদ্দশায় ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী তাঁর সম্পদ জনকল্যাণে ওয়াকফ করে যান। যাতে তাঁর উত্তরসুরীরা সম্পদ ব্যবহার ও ভোগ দখলের শর্ত থাকলেও বিক্রয় ও হস্তান্তর নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু বহু আগ থেকেই একটি প্রভাবশালী ভূমিদস্যু চক্র নওয়াব পরিবারের দুই উত্তরসুরীকে ম্যানেজ করে নামমাত্র মূল্যে ওয়াকফকৃত চিহ্নিত বেশকিছু জায়গা ভূয়া দলিল সৃজনের মাধ্যমে কেনা-বেচা করার অভিযোগ রয়েছে। 

প্রায় ৭ বছর পূর্বে জনৈক ভূমিদস্যু অবৈধভাবে নওয়াব ফয়জুন্নেচ্ছা চৌধুরাণীর বাড়িতে আসা যাওয়ার পথ বন্ধ করে বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু করে। প্রত্নতত্ব  অধিদপ্তর এতে আপত্তি জানালে উপজেলা প্রশাসন বাড়ির নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। দীর্ঘদিন অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকে নির্মাণাধীন বাড়িটি। 

এরই মধ্যে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীর বাড়িকে যাদুঘরে রূপান্তরে উদ্যোগ নেন। তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে.এম. খালিদ ২০২৩ সালের ২ জুন নওয়াব ফয়জুন্নেছার বাড়ি পরির্দশন করে যাদুঘর প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এরই প্রেক্ষিতে গত ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সংস্কৃৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমেদের উপস্থিতিতে প্রত্নতত্ব  অধিদপ্তর মহাপরিচালক ও জাতীয় যাদুঘরের মহাপরিচালক লাকসাম পশ্চিমগাঁও নওয়াব বাড়িতে যাদুঘর প্রতিষ্ঠায় সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠানিকভাবে নওয়াব ফয়জুন্নেছা জমিদার বাড়ি যাদুঘর উদ্বোধন করা হয়। 

২০২৪ সালের ২৭ মে ঢাকায় জাদুঘর পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসনের প্রশাসক আবু সালেহ মহিউদ্দিন খাঁ ও জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন। 

নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীর স্মৃতি বিজড়িত নওয়াব বাড়ি যাদুঘরে রূপান্তরিত হলেও বাড়িটির আশে-পাশের সম্পত্তি থেকে প্রভাবশালী ভূমিদস্যুসের লোলুপ দৃষ্টি সরছে না। তারা নামেমাত্র বাড়িটিকে যাদুঘরে রেখে আশে-পাশের প্রত্নতত্বের  গেজেটভুক্ত চৌহদ্দির জায়গা ও ওয়াকফকৃত সম্পত্তি দখলের উৎসবে মেতে উঠার চেষ্টায় চালিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে। 

এদিকে, লাকসাম পৌরসভার অর্থায়নে নওয়াব ফয়জুন্নেছার বাড়ির আশেপাশে সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১ কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকা- চলমান। ইতিমধ্যে যাদুঘর কর্তৃপক্ষ নওয়াব ফয়জুন্নেছা স্মৃতি বিজড়িত আরো ২শতাধিক নিদর্শন সংগ্রহ করে তা ডিসপ্লের পদক্ষেপ নিয়েছে। 

এসবের কোন তোয়াক্কা না করে সম্প্রতি ভূমিদস্যু চক্র পুলিশের নিস্ক্রিয়তা ও প্রশাসনের সঠিক তদারকির অভাবে সরকার গেজেটেড চৌহদ্দির জায়গা ও ওয়াকফ এস্টেটের সম্পদ দখল উৎসবে মেতে উঠেছে। এতে এলাকার সচেতন মহল খুবই ক্ষুব্ধ। 

এ বিষয়ে স্থানীয় ভূমি অফিসের বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতার অভিযোগ উঠেছে। বহুবছর পূর্বে ভূমি অফিস থেকে পশ্চিমগাঁও মৌজার আর.এস খতিয়ান উধাও হয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এই সুযোগে ভূমিদস্যুরা সরকারি খাস ও নওয়াব ফয়জুন্নেছার ওয়াকফ দলিলের জায়গা ভুয়া বি.এস খতিয়ানের মাধ্যমে গ্রাসের ষোলকলা পূর্ণ করে যাচ্ছে। 

নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরী ফাউন্ডেশনের সভাপতি আজাদ সরকার লিটন জানান, নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীর স্মৃতি রক্ষার্থে তাঁর সকল সম্পদ রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। কোন প্রভাবশালী মহল যেন নওয়াব বাড়ি যাদুঘরের এক ইঞ্চি সম্পদও দখল করতে না পারে এজন্য আমরা তৎপর রয়েছি। এ বিষয়ে আমরা সরকারের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। 

লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল হাই সিদ্দিকী জানান, নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী যাদুঘরের আশে-পাশে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ কাজের জন্য সারঞ্জামাদি এনে স্তুপ করার অভিযোগ পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সেখানে সকল ধরনের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছি। এরপরও কেউ অবৈধ উপায়ে যাদুঘরের সম্পদ দখলের চেষ্টা করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!