বগুড়ার শাজাহানপুরে শুরু হয়েছে আলুর বীজ রোপণ, তবে আলু বীজের দাম বাড়ায় সৃষ্টি হয়েছে নানা সংকট। গত বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে আলুর বীজ। একই সঙ্গে বেড়েছে সার, কীটনাশকসহ শ্রমিকের খরচাও।
এ বছর আলু বীজের চড়া দাম হওয়াই বিপাকে পড়েছে স্থানীয় কৃষকরা। আলু চাষের মৌসুম শুরু হলেও আলু বীজের চড়া দাম হওয়ায় ইচ্ছে থাকলেও আলু চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন প্রান্তিক কৃষকরা। তাদের অভিযোগ, ন্যায্যমূল্যে বীজ ও সার পাচ্ছেন না তারা, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে বাজারে আলু বীজের দাম গত বছরের তুলনায় বেশি নিচ্ছে। একইভাবে সারের দামও অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়েছে। এতে আলু চাষে উৎপাদন খরচ বাড়ছে।
শাজাহানপুরে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলায় আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৬৪৯ হেক্টর জমিতে। সেই হিসেবে বীজ আলুর চাহিদা ৬ হাজার ৮৭৮ টন।
ডিলার পর্য়ায়ে আলু বীজের সরবরাহ না থাকায় বাজারে বীজের দাম লাগাম হীন,অবস্থা এমন থাকলে এবার মৌসুমী আলু উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ব্যাহত হতে পারে। মূল্য বৃদ্ধিতে বীজ সিন্ডিকেটের কথাও ইঙ্গিত করছেন কেউ কেউ। কারণ মৌসুমে যে আলু কৃষকের নিকট থেকে ব্যবসায়ীরা ১৫ টাকা করে নিয়েছিল, সেই আলুই রোপন মৌসুমে কৃষকদের নিকটই ৭৫/৮৫ দরে বিক্রি করছে। মূলত এটি একটি সিন্ডিকেটের কারসাজি বলে ধারণা করছেন কৃষকরা। এসব নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের তদারকি নেই বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন এবং বীজ আলুর বাজার মনিটরিং এর দাবি জানান।
উপজেলার আলু চাষি বাবলু রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, প্রতি বছর ৫-৬ বিঘা জমিতে আলু চাষ করি। তবে এ বছর মনে হয় হবে না। কারণ গত বছরের চেয়ে এ বছর আলুর বীজের দাম অনেক বেড়েছে। তার সঙ্গে অন্যান্য জিনিসপত্রের দামও নাগালের বাইরে। সে কারণে এবার ২-৩ বিঘা জমিতে আলু চাষ করব।
একই কথা বলেন আলু চাষি শামসুল, আলাল ও হাসেম। তারা জানান, সরকারি, বেসরকারি ও কৃষক পর্যায়ে তিন স্তরেই বেড়েছে আলুর বীজের দাম। গত বছর যে বীজ আলু সরকারের কাছ থেকে ২৮-৩০ টাকায় কৃষকরা পেয়েছে সেই বীজ আলুর দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। বেসরকারি বীজের দাম আরও বেশি। সার ও কীটনাশকসহ শ্রমিকের খরচও গতবারের থেকে বেড়ে যাওয়ায় অনেকে আলুর উৎপাদন কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। তাই এ বছর আলুর আবাদ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
শাজাহানপুরের আলুর বীজ ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এ বছর বীজের দাম বাড়ায় আলু চাষে আগ্রহ কমেছে কৃষকদের। গত বছর এ সময় যে পরিমাণ বীজ আলু বিক্রি হয়েছিল এ বছর তা হয়নি। বীজের দাম বাড়ায় কৃষকরা চিন্তায় পরেছে। আমরাও চিন্তিত, কারণ কৃষকরা আলু বীজ না কিনলে আমরা বিক্রি করতে পারছি না। আবার কম দামে বীজ আলু বিক্রির সুযোগও নেই, কারণ এবার সরকারি ও বেসরকারি বীজের দাম বাড়ায় দিয়েছে।
শাজাহানপুর উপজেলা কৃষি অফিসার আমিনা খাতুন রূপালী বাংলাদেশকে জানান, এ বছর বীজের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের আলু উৎপাদনের খরচ বেড়ে যাবে। তাই আমরা কৃষকদের অধিক ফলনশীল জাতের আলু চাষের পরামর্শ দিচ্ছি। কেননা বাজারে এখন আলুর যে জাতগুলো প্রচলিত আছে তার ফলন অনেক কম। তাই কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা এস্টোরিক্স, ক্যারেজ, সানসাইন, ডায়মন্ডসহ বেশকিছু উচ্চ ফলনশীল জাতের আলু চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। একইসঙ্গে মাঠে থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি।
আপনার মতামত লিখুন :