নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্রিয়ায় সম্ভাবনার দেখা মিলছে না। উপাচার্য (ভিসি) নিয়োগ স্থগিত রাখতে চিঠি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা। বিশ্ববিদ্যালয়টি ভবিষ্যতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দাঁড়াতে পারবে কি না, পরিষ্কার নয়। আইন পাস থাকলেও বঞ্চনা অবস্থায় হতাশার মুখোমুখি হয়েছেন উত্তরবঙ্গের মানুষ। অন্তর্বর্তী সরকার নীতিগতভাবে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের ওপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার রেখে যেতে চান।
সুত্র জানায়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ৯ অক্টোবর বগুড়ার এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রেরণ করেন জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা। শুরু হয় নিয়োগ প্রক্রিয়া। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন কয়েকজন অধ্যাপক। তবে শেষ মুহূর্তে শিক্ষা উপদেষ্টার এক চিঠিতেই থমকে গেছে কার্যক্রম।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্র জানিয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে আইন পাস হওয়া নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম কিংবা উপাচার্য নিয়োগের বিষয়টি আপাতত স্থগিত রাখতে চিঠি দিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা। গত ১২ ডিসেম্বর ইউজিসি চেয়ারম্যান বরাবর এ চিঠি পাঠানো হয়। যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী সংখ্যা কম, সেখানে আপাতত নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করতে চিঠিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বগুড়া, নওগাঁ ও জয়পুরহাট জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল বগুড়ায় একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০১ সালের ১৫ জুলাই জাতীয় সংসদে বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। প্রায় দুই যুগেও বাস্তবায়ন হয়নি কার্যক্রম। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ১০ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বাস্তবায়নের জন্য এসআরও জারি করে সরকার। এর আগে ২০১৯ সালে আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। সেটি আইন মন্ত্রণালয়ে যাচাইয়ের (ভেটিং) জন্য পাঠানো হয়। সেখানে দেখা যায়, ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় (১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের শেষ দিকে) ছিল, তখন বগুড়ায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার জন্য আইন পাস হয়। তাতে বলা ছিল, সরকার গেজেট দিয়ে যেদিন থেকে এটি কার্যকর করবে, সেদিন থেকেই কার্যকর হবে। প্রায় দুই যুগেও বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা জানান, আওয়ামী লীগ আমলে আইন পাস হওয়ায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চান না অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা। নির্বাচনের পর যে সরকার আসবে, সেই সরকারের উপর এই দায়িত্ব দিতে চান। এজন্য ইউজিসিতে চিঠি পাঠিয়েছেন। নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত বগুড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন কিংবা বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা কম।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগসহ নতুন প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার দপ্তর থেকে একটি চিঠি পেয়েছি। চিঠি নিয়ে পরবর্তীতে উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করা হবে। চিঠিতে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেছেন, বিগত সরকারের আমলে দেশের বিভিন্ন জেলায় অনেকগুলো নতুন বিশ্ববিদ্যালয় (সাধারণ ও বিশেষায়িত) স্থাপন করা হয়েছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভবিষ্যতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দাঁড়াতে পারবে কি না, তা পরিষ্কার নয়। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি, সেগুলো নিয়ে পরবর্তী সময়ে যেকোনো পদক্ষেপ স্থগিত রাখাই বাঞ্ছনীয় বলে মনে করেন। এছাড়া যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে, সেগুলোতেও নতুন শিক্ষক বা কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি জরুরি প্রয়োজন না হলে আপাতত স্থগিত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর মো রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রায় দুই যুগ আগে জাতীয় সংসদে বগুড়ার বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ পাস হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কার্যক্রম শুরু হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হলে আশার সঞ্চার হয়। সেই প্রক্রিয়াও স্থগিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান হওয়ার কারণেই বগুড়া যদি অবহেলিত থাকে, সেটি দুঃখজনক। উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উত্তরবঙ্গের শিক্ষার্থীরা।
নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হাছানাত আলী বলেন, আর কত বঞ্চনার শিকার হবে বগুড়া। এই জেলার মানুষ চরমভাবে বৈষম্যের শিকার। ২০০১ সালে বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পাস হলেও কোনো কার্যক্রমই শুরু হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়, বিমানবন্দর, রেলপথ, সিটি করপোরেশনসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই বগুড়াকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বৈষম্য থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দিতে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনুরোধ জানান অধ্যাপক হাছানাত আলী।
আপনার মতামত লিখুন :