নাম তার রঞ্জিত সাধু। প্রায় ১০ ফুট মাটির নিচে গোলাকার কৃত্রিম গুহা তৈরি করে বাস করছেন । ২০২০ সাল থেকে এভাবেই বসবাস করছেন তিনি। পূজা অর্চনায় এরই মধ্যে তার কেটে গেছে চারটি বছর। নিঃসঙ্গ, নির্জনে থেকে মহাদেবের সাধনা পালন করতে চান আরও আট বছর।
তার বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকার দেওনাই নদীর তীরে। একসময় কৃষিকাজের পাশাপাশি মনের টানে ভারতের বিভিন্ন তীর্থস্থান দেখতে যান তিনি। ২০২০ সালের শুরুর দিকে ভারতে সর্বতীর্থ শেষ করে মৌনব্রতের সিদ্ধান্ত নেন রঞ্জিত। দেশে ফিরে বাড়ির পাশের বালু চরে মৌনব্রতে বসেন। মনোবাসনা পূরণ করতে কথা বলাও বন্ধ করে দেন তিনি। নির্জন নদীর ধারে শিব ও মহাদেবের পূজা অর্চনায় ব্যস্ত সময় পার করলেও ভাবের আদান প্রদান করেন কাগজে লিখে।
মৌনব্রতে বসার শুরুর দিকে আতপ চালের ভাত খেলেও এখন ভাতের পরিবর্তে খাচ্ছেন কলা, ভুট্টার গুঁড়া, চালের গুঁড়া, ফলমূল আর শাকসবজি। বসবাসের জন্য মাটির নিচে প্রায় ১০ ফুট মাটির নিচে গোলাকার কৃত্রিম গুহা তৈরি করেন রঞ্জিত। গোলাকার গুহার সৌন্দর্য বর্ধনে ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশের চাটাই। ওঠানামার জন্য ব্যবহার করেন বাঁশের সিঁড়ি। সেখানে রেখেছেন বিভিন্ন ধর্মীয় পুস্তক, শুকনো খাবার আর ব্যবহার্য বিভিন্ন জিনিসপত্র।
রঞ্জিত সাধু খাতায় লিখে জানান, সংসার হলো কামনা-বাসনা। ১২ বছর পার হলেও আমি আর সংসারে ফিরে যাবো না। এখানে আমি জীবন শেষ করতে চাই। আমাকে যেন সংসারে ফিরিয়ে না নেওয়া হয়।
রঞ্জিত সাধুর ছেলে হীরেন্দ্র নাথ রায় বলেন, বাবা ভারত থেকে আসার পর জানান, তিনি ১২ বছর বাসায় আসবেন না, কথাও বলবেন না। আরও জানান, তিনি ভাতও খাবেন না। বিষয়টি আমাদের প্রথমদিকে একটু খারাপ লাগলেও এখন আর কষ্ট হয় না। একাকী বসবাসের জন্য বাবা নদীর পাড়ে খড়ের ঝুপড়ি ঘর তৈরি করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে বৃষ্টি ও ঝড়ে ঘরটি ভেঙে গেলে আমরা নতুন করে একটি উপাসনালয় ও থাকার মতো একটি টিনের ঘর নির্মাণ করে দেই। বাবা পরিবারের কারো সঙ্গে দেখা করতে যান না। আমরা পরিবারের লোক মাঝে মধ্যে এসে দেখা করে যাই।
স্থানীয় বাসিন্দা নন্দী রায় বলেন, কাকা ভারতের সাধুদের জীবনযাপন অনুসরণ করে এমন সংকল্প করেছেন। আমরা তাকে নিয়ে গর্ববোধ করি। কারণ আমরা ওনার মতো ধর্মপালন করতে পারি না। তিনি খাদ্য হিসেবে শুধু শাকসবজি, ডাল, ভুট্টা গুঁড়া খেয়ে বেঁচে আছেন।
নিঃসঙ্গ, নির্জন নদীর ধারের বালুচরে শিব ও মহাদেবের পূজা অর্চনার বিষয়টি নজরে এসেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির।
মৌনব্রত পালনে আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে ধর্মপাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের বলেন, ১২ বছরের সাধনায় লিপ্ত হয়েছেন এই সাধু। তিনি কারোর সঙ্গে তো কথা বলেনই না, খাওয়া-দাওয়াও অনিয়মিত। আমরা চাই তার এত কষ্টের সাধনা সফল হোক। যেকোনো প্রয়োজনে সরকারের দেওয়া সুযোগ সুবিধা অনুযায়ী তাকে সাহায্য করা যাবে।
আপনার মতামত লিখুন :