সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা উন্নয়নের লক্ষ্যে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারিসহ ১০টি নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। গত ১৮ নভেম্বর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব উম্মে হাবিবার সই করা এই নির্দেশনা দেশের সব হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এসব নির্দেশনা প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রিপ্রেজেনটেটিভদের দৌরাত্ম্যে ও কিছু নার্সদের দুর্ব্যবহার কোন ভাবেই কমছে না । অনেক দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা এসে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে সেবা নিতে যান। চিকিৎসকের কক্ষ থেকে রোগী বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একদল রিপ্রেজেনটেটিভ দৌড়ে এসে রোগীর কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন নেন। সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল ফোন দিয়ে ছবি তুলে নেন। এর ফলে রোগী ও তার আত্মীয়স্বজন চরম দুর্ভোগে পড়েন। তারা প্রতিটি হাসপাতালে রাজ্য করে বেড়াচ্ছেন। রোগী কিংবা রোগীর সঙ্গের লোকেরা খুবই বিরক্ত এতে। তাদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ মানুষ । এইটা একধরনের হয়রানি বলছেন জনসাধারণ।
এ বিষয় নিয়ে একাধিকবার সংবাদ প্রচার হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রিপ্রেজেনটেটিভদের হাত থেকে রোগীদের হয়রানি এবং নার্সদের দুর্ব্যবহার বন্ধ করতে পারেনি। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অভিযোগের শেষ নেই। গত নভেম্বরে ঠান্ডা কাশি জনিত রোগের চিকিৎসা নিতে আসেন এক রুগী। কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীকে কফ পরিক্ষা করতে দেন। রোগী কফ নিয়ে গেলে কফ পরিক্ষার জন্য জমা না নিয়ে তার সাথে ধমক দিয়ে বলে এই নামের পরিক্ষা হয়েছে গেছে আর নেয়ে হবেনা । ঐ নার্স কে রুগীটি বলেন আমার নামে আরো ব্যক্তি থাকতেই পারে । আপনি ঠিকানা বয়স পিতার নাম চেক করে দেখেন। রোগীটি ১ ঘন্টার বেশি কফ নিয়ে অপেক্ষা করলেও তার কাছ থেকে কফ জমা নেয়া হয়নি। রোগি এক পর্যায়ে কান্না করে কফ ফেলে চলে যায়।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ওবাইদুল বলেন, আমি প্রায় সারিয়াকান্দি হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে আসি। ডাক্তারের রুম থেকে বের হয়ে আসার সাথে সাথে ঔষধ কোম্পানীর লোকজন ঘিরে ধরে প্রেসক্রিপশন চায়। প্রেসক্রিপশন দেয়ার সাথে সাথে এই ১০/১২ জন প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলতে কারা কারি লেগে যায়।
সাহাপাড়ার লক্ষ্মী বলেন, দীর্ঘ লাইন ধরে অনেক সময় ব্যয় করে টিকিট সংগ্রহ করে আমাকে ডাক্তার দেখাতে হয়। ডাক্তারের কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন করে বাহিরে এলেই এক দল রিপ্রেজেনটেটিভ প্রেসক্রিপশন চান। আমি কোনো সময় তাদের কে প্রেসক্রিপশন দেখাই না। এই বিষয়ে আমি বিরক্ত বোধ করি। এসব বন্ধ হওয়ার দরকার।
এ বিষয়ে সচেতন ব্যক্তি কবি সোহরাব হোসেন (মাস্টার) জানান, এসব বলে কি হবে। নিউজ করেই বা কি হবে। এখন দেখার কেউ নেই। আমরা যদি পাশের দেশ ভারতের দিকে খেয়াল করি, ওদের নিয়ম-নীতি রয়েছে। কোনো চিকিৎসক যদি ভুলক্রমেও সেলস রিপ্রেজেনটেটিভদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদের কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখে দেন, তাহলে চিকিৎসকের সার্টিফিকেট কিছু মাসের জন্য বাজেয়াপ্ত করা হয়। পরবর্তী সময়ে ভারতে এ ধরনের কাজ আর লক্ষ করা যায় না। বাংলাদেশেও এমন আইন করার দাবি করছি। শুধু চিকিৎসকদের প্রতি আইনের প্রয়োগ নয়। ঐ ওষুধ কোম্পানিগুলোকেও আইনের আওতায় আনতে হবে, যাদের হাতে চিকিৎসকরা জিম্মি হয়ে আছেন। তাদের প্রতি কঠোর আইন প্রয়োগ করা হলেই কেবল এই দুর্দশার মুক্তি মিলবে। দেশের মানুষ সঠিক ও সুন্দরভাবে চিকিৎসাসেবা নিতে পারবে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহবুব হোসেন সরদার বলেন, আমি বের হয়ে রিপ্রেজেনটেটিভদের প্রায়ই তারিয়ে দেই। আমরা চিঠি দিয়েছি, দেয়ালে পোস্টার লাগিয়েছি। মোটরসাইকেল আর ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছিনা। তারপরও তাদের রোধ করা যাচ্ছে না। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী, প্রহরী, গেটম্যান নেই। এ ব্যাপারে লিগ্যাল এ্যাকশন নেয়া আমাদের মধ্যে পড়ে না। তারা সেখানে হাট বসায়। আপনারাই বলেন আমি এখন কি করবো।
আপনার মতামত লিখুন :