সম্প্রতি টানা কয়েক দিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটের চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছিল। বর্তমানে এসব এলাকা থেকে পানি নেমে যাচ্ছে। ফলে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে নদীর পাড়ে। গত দুই দিনে অন্তত ৫০ টি ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে কয়েক’শ ঘরবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ভাঙনের আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে নদী পাড়ের বাসিন্দাদের।
রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা থেকে তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু করে। রাতেই প্লাবিত অনেক অঞ্চল থেকে পানি নেমে যায়। তবে সোমবারও (৩০ সেপ্টেম্বর) ডুবেছিল। কিছু নিচু অঞ্চল ও চরাঞ্চলের বহু বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট।
এদিকে পানি হঠাৎ কমে যাওয়ায় জেলার কয়েকটি পয়েন্টে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের বাহাদুরপাড়া, গরিবুল্লাপাড়া, সদরের খুনিয়াগাছ, রাজপুর, তাজপুর এলাকায় ভাঙন অব্যাহত আছে। গত দুই দিনে এসব এলাকায় ৫০টির বেশি বাড়িঘর ভেঙে গেছে এ ছাড়া এসব পয়েন্টে কমপক্ষে ৫০০ পরিবার ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, পানি আরও কমলে ভাঙন আরও তীব্র আকার ধারণ করবে।
আদিতমারী উপজেলার বাহাদুর পাড়ার ৮০ বছরের বৃদ্ধ রহমত উল্লাহ বলেন, এই জীবনে ১৭ বারের থেকে বেশি বাড়িঘর সরিয়েছি। আমি এই গ্রামের লাখপতি ছিলাম। কিন্তু আজ আমার কিছু নেই, সরকার বাহাদুর এসেই তিস্তাপাড়ের মানুষকে শুধু আশ্বাস দিয়ে ভোট নেন। জানি এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। তাদের আশ্বাস দিয়ে আর কী হবে আমাদের জীবনে? তিস্তা নদীতে সব জমি বিলীন হয়ে গেছে। গত কয়েক দিনের তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে আমার ঘর সরাতে হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাকে কতবার কল দিয়েছি, কিন্তু ফোন ধরে না। জিও ব্যাগ হলে কয়েকটি বাড়ি তারা রক্ষা করতে পারতেন। কিন্তু না তারা কোনো খবর রাখছে না। তাই নতুন সরকারের প্রতি অনুরোধ দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে তিস্তা পাড়ের মানুষকে রক্ষা করুন।
হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মশিউর রহমান জানান, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত দুই দিন এই ইউনিয়নের অনেক ঘরবাড়ি ডুবেছিল। পানি কমতে শুরু করেছে। এখন ভাঙন আতঙ্ক বাড়ছে।
ডালিয়া পাউবোর উপ-প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদীন বলেন, উজানের ঢল আর ভারী বর্ষণে তিস্তায় পানিপ্রবাহ বেড়েছিল। তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও বর্তমানে কমতে শুরু করেছে। তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, আমরা ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। বরাদ্দের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। জরুরি বরাদ্দ পেলেই ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব উদ্দীন বলেন, ‘বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে ১৩ লাখ টাকা ও ৯০ টন জিআর চাল বিতরণ শুরু হয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।’
আপনার মতামত লিখুন :