পাহাড় জুঁড়ে জুমের ধানে সবুজ পাহাড় এখন সোনালি রুপ ধারন করেছে। পাহাড়ের ভূমিতে এই জুমকে ঘিরে যাদের স্বপ্ন, পাহাড়ের চিরচারিত প্রথা জুম চাষাবাদ টিকিয়ে রাখার জন্য আদিবাসীদের এতো সংগ্রাম-সংঘাত। সেই জুম পাহাড়ের জুমের পাকা ধানে আদিবাসীদের চোখে মুখে এনে দিয়েছে হাসির ঝিলিক।
পাহাড়ীদের আদি পেশা জুম চাষ। বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদমসহ ৭টি উপজেলায় বসবাসকারী পাহাড়ী পরিবারগুলো প্রায় সকলেই জুম চাষ করে থাকে। জেলার মারমা, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো, খুমী, লুসাই, পাংখো, বম, চাকসহ ১১টি সম্প্রদায়ের অধিকাংশই জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। জুমের উৎপাদিত ধান থেকে বছরের ১২ মাসের অন্তুত ৮ মাস তারা খাদ্যের জোগান মজুদ করে আদিবাসীরা। পার্বত্য জেলার আদিবাসীরা প্রতিবছর জেলার বিভিন্ন এলাকায় শত শত পাহাড়ে জুম চাষ করে আর এর ব্যতিক্রম না হলেও এবছর অতি বৃষ্টি ও পাহাড় ধসের কারনে জুমের ক্ষতি হয়েছে।
আলীকদমে কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ১২৮৮ হেক্টর জমিতে জুমের ধান আবাদ হয়েছিলো ১৯০০ মেট্রিক টন। ভারী বৃষ্টিরপাতের কারণে বিভিন্ন সময় উপজেলার অনেক এলাকায় পাহাড় ধসে যাওয়ার কারনে ফলন কম হয়েছে। প্রতিবছর এপ্রিল মাসের শেষের দিকে শুরু হয় জুমে ধান লাগানোর প্রক্রিয়া। প্রায় ৩-৪ মাস পরির্চযার পর সেপ্টেম্বর মাসের ২য় সপ্তাহ থেকে পাহাড়ে জুমের ধান কাটা শুরু করে জুমিয়ারা, আর শেষ হয় অক্টোবর মাসে। তাই জুমের ফসল ঘরে তুলতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে জুমিয়া পরিবারগুলো। শিশু কিশোরসহ পরিবারের কেউই বসে নেই ঘরে। পরিবারের সবাই জুমের ধান কাটতে নেমেছে পাহাড়ে। অনেকে পরিবার নিয়ে উঠছে জুম পাহাড়ের মাচাং ঘরে।
আলীকদম উপজেলার ৪ নং কুরুকপাতা ইউনিয়ন ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বারেক তঞ্চঙ্গ্যা জানান, যখন বৃষ্টির প্রয়োজন, তখন বৃষ্টি হয়নি, যখন বৃষ্টির প্রয়োজন নাই, তখন অতিবৃষ্টি। এখন পাঁকা ধান কাটার সময় টানা চারদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। ধানের গাছ নুয়ে পড়েছে মাটিতে ধানও নষ্ট হওয়ার পথে। ৫ একর জায়গা জুড়ে ৮ আড়ি ধান বপন করেছেন, ২০০ আড়ি ধান পাওয়ার কথা থাকলেও এখন পাবো ১৫০ আড়ি বলে জানান তিনি।
পাহাড়ীরা জুমে ধানের পাশাপাশি ভূট্টা, মরিচ, যব, সরিষা,মিষ্টি ও চাল কুমড়া, চিনার, বেগুন, কাকন ধান, মারপা, তিল, পুঁই ও টকপাতাসহ ২৭ রকমের শাক সবজি চাষ করেন। অতি বৃষ্টি ও আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এবার জুম চাষাবাদে পড়েছে বিরুপ প্রভাব।
জানা যায়, জেলার জুমিয়া পরিবার গুলো প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিল মাসের দিকে জুম চাষের জন্য পাহাড়ে আগুন দেয়। আর মে-জুন মাসের দিকে আগুনে পোড়ানো পাহাড়ে জুম চাষ শুরু করে। ১১ টি পাহাড়ী জনগোষ্টীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জুমচাষ করে ম্রো সম্প্রদায়। আর আদিকাল থেকে এখনো পর্যন্ত জুম চাষের মাধ্যমেই সারা বছরের জীবিকা সংগ্রহ করে ম্রো’রা। ফসল ঘরে তোলার আনন্দে পাহাড়ী পল্লীগুলোতে শনিবার থেকে শুরু হবে নবান্ন উৎসব। গোত্র ভেদে পাহাড়ীরা উৎপাদিত ফসল দেবতাকে উৎসর্গের মাধ্যমে এই নবান্ন উৎসব উদযাপন করে থাকে।
আলীকদম উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সোহেল রানা বলেন, উপজেলার মধ্যে ১২৮৮ হেক্টর জায়গা জুড়ে জুমচাষ হয়। এর মধ্যে ১৯০০ মেট্রিক্সটন চাউল উৎপাদন হয় প্রতি বছরে। তবে তুলনামূলক ভাবে জুমচাষ করে আগের চেয়ে ফলন কমছে বলে জানান তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :