ঢাকা শনিবার, ০৪ জানুয়ারি, ২০২৫

ভরা মৌসুম-আমদানির পরেও ঊর্ধ্বমুখী রাজশাহীর চাল বাজার

রাজশাহী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০২৫, ০৪:০৫ পিএম

ভরা মৌসুম-আমদানির পরেও ঊর্ধ্বমুখী রাজশাহীর চাল বাজার

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দেশে নবান্ন উৎসব হয় অগ্রহায়ণের শুরুকে। যা ইংরেজি মাসের নভেম্বরের মাঝামাঝি। এসময় আমন ধান কেটে ঘরে তোলে কৃষক। হিসেব অনুযায়ী এখন আমনের ভরা মৌসুম চলছে। এমন ভরা মৌসুমে চালের বাজার বরাবরই নিম্নমুখী থাকে। নবান্ন উৎসবের দেড় মাস পরে এসেও চালের দামও উচ্চমুখি। সরবরাহে ঘাটতি না থাকলেও গ্রাম থেকে শহর সবখানেই চড়া চালের দাম। এরই মধ্যে গেল এক বছরে বিভিন্ন চালের দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ।

এদিকে, প্রতিদিন হিলি স্থলবন্দরসব বেশ কয়েটি বন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি করা হচ্ছে। এই স্থলবন্দর দিয়ে গেল ছয় দিনে ৪০৫ ট্রাকে ১৬ হাজার ৪৯০ মেট্রিকটন ভারতীয় চাল আমদানি করা হয়েছে। আর সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৫০ হাজার ১৬১ টন বিভিন্ন প্রকারের চাল আমদানি করা হয়। এরপরও কমছে না চালের দাম।

গতকাল বুধবার রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন চালের আড়ৎ ও পাইকারি দোকান ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। গেল বছরে প্রতি ৫০ কেজি বস্তা আঠাশ চাল বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার টাকায়। মোটা চাল (গুটি স্বর্ণা) প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। জিরাশাইল চাল বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ২০০ টাকায়।

কিন্তু এক বছরের মধ্যে এসব চালের প্রতি বস্তা বেড়েছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এবছর আঠাশ চালের ৫০ কেজি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০ টাকায়। গুটি স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়।

মিল মালিকরা বলছেন, মিল পর্যায়ে প্রতি বস্তা আঠাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২৫০ থেকে ৩ হাজার ৩৫০ টাকায়। মোটা চাল (গুটি স্বর্ণা) প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭৫০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায়। অন্যদিকে জিরাশাইল চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ টাকায়।

এই চাল আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে গেলে বস্তায় আবার দাম বেড়ে যাচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে গিয়ে আরও এক দফা দাম বাড়লে মিল থেকে ক্রেতার কাছে যেতে যেতে প্রকারভেদে বস্তায় ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়ছে চালের।

চালের দাম বেসামাল হলেও চাল ব্যবসায়ীরা দুষছেন একে অন্যকে। পাইকারি চাল বিক্রেতারা বলছেন, মিল মালিকরা দাম বাড়াচ্ছে। মিল মালিকরা বলছেন, মৌসুমী ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াচ্ছে। আবার খুচরা ব্যবসায়ীরা দোষ দিচ্ছেন পাইকারদের।

খুচরা বাজারে আঠাশ চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭২-৭৫ টাকা কেজি। গুটি স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৬৩-৬৫ টাকা কেজি ও জিরাশাইল চাল বিক্রি ৮০ টাকা কেজি।

চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, কখনও সরবরাহ সংকট, আবার কখনও ধানের দাম বেশি বলে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। আমনের ভরা মৌসুমে সংকটের কথা বলে আবারও চালের দাম বস্তায় সর্বোচ্চ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে বেশি দামে কিনে পাইকারিতেও বেশি টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েক মাসের ব্যবধানে প্রতিকেজি মোটা চালের দাম তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। মাঝারি আকারের প্রতিকেজি চালের দাম বেড়েছে সপ্তাহের ব্যবধানে পাঁচ থেকে আট টাকা।

মহানগরীর সাগরপাড়া এলাকার অমিত স্টোরের স্বত্বাধিকারী অমিত সরকার বলেন, আমাদের আড়ৎ থেকে চাল কিনতে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। এক মাসের মধ্যে অন্তত দুবার চালের দাম বেড়েছে। বছরের শুরুতেই প্রতি বস্তায় ৫০০ টাকা করে বাড়তি গুনতে হচ্ছে। আবার বাড়তি দামে বিক্রি করা হলে গ্রাহকরা অসন্তুষ্ট হচ্ছেন।

সাহেববাজারের এপি চাউল ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী প্রকাশ প্রসাদ বলেন, মিল থেকে চাল নিয়ে এসে বিক্রি করছি। চাল আমদানির পরে গেল কয়েক বছরে চালের দাম বেশ বেড়েছে। চালের দাম বাড়িয়ে মিল মালিক ও মধ্যস্বত্বভোগীরা উপকৃত হচ্ছেন। ওখানে (চালের মিল) যদি কম দামে কেনা যায় তাহলে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারবো।

অন্যদিকে, কাদিরগঞ্জ এলাকার পাইকারি চাল বিক্রেতা সততা এন্টারপ্রাইজের মালিক সোলায়মান আলী বলেন, প্রতি সপ্তাহে চালের দাম বাড়ছে। যে পরিমাণ চালের প্রয়োজন আমদানি ও দেশে উৎপাদিত চালে তা কাভার দেওয়া যাচ্ছে না। চাহিদা বেশি ও যোগান কম থাকায় আমাদের বেশি দামে চাল কিনে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে চালের দাম কমলে আমরাও কম দামে চাল বিক্রি করতে পারব।

কামাল অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী কামাল হোসেন বলেন, এখন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ধান মজুত করে রেখেছেন। তারা বাড়তি দাম না পেলে ধান ছাড়ছে না। ফলে তাদের কাছে বেশি দামে ধান কিনে নিয়ে আসতে হচ্ছে। এর পর মিলসহ আমাদের খরচও আছে। এ কারণে দাম বাড়ছে।

রাজশাহী চালকল মালিক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলামও ধানের দামকেই দায়ী করছেন। তিনি বলেন, চালের দাম বাড়লেই আমাদের দোষ দেওয়া হয়। কিন্তু এখন ধানের দাম বাড়তি থাকায় চাল প্রক্রিয়াজাতকরণে বেশি খরচ হচ্ছে। এ কারণে মিল পর্যায় থেকে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। কৃষকদের পাশাপাশি ধানের মৌসুমি ব্যবসায়ী এখন ধান মজুত করছে। দাম বেশি না হলে তারা বাজারে ছাড়ছেন না। এ কারণে বাজারে ধানের দাম বেড়েছে। তার প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহীর উপ-পরিচালক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমাদের অভিযান চলছে। চাল ব্যবসায়ীদের সতর্কও করা হচ্ছে। এরপরও যারা সতর্ক হচ্ছে না তাদের জরিমানা করা হচ্ছে।

আরবি/এইচএম

Link copied!