ঢাকা বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

ভোমরা বন্দরের রাস্তায় অব্যবস্থাপনা, ভোগান্তিতে স্থানীয়রা

আব্দুল মোমিন, সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২৪, ০২:২১ পিএম

ভোমরা বন্দরের রাস্তায় অব্যবস্থাপনা, ভোগান্তিতে স্থানীয়রা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি কমলেও বেড়েছে রপ্তানি। সেই সঙ্গে বেড়েছে রাজস্ব আয়ও। কিন্তু রাজস্ব আয় বাড়লেও ঠিক নেই ব্যবস্থাপনা। যত্রতত্র ট্রাক রাখায় প্রায় সময় বন্ধ থাকছে বন্দরে যাতায়াতের রাস্তা। আর এতে করে বিপাকে পড়ছেন ভারত গমনেচ্ছু যাত্রীসহ স্থানীয়রা।

জানা গেছে, ভোমরা বন্দর থেকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বন্দর থেকে বাহির হতেই সময় লাগে এক থেকে দেড় ঘন্টা। এতে করে প্রতিনিয়তই বাড়ছে রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি। আর এ অব্যবস্থাপনার কারণ হিসেবে স্থানীয়রা দুষছেন ভোমরা বন্ধর কর্তৃপক্ষকে।

সাতক্ষীরার বাইগুনি গ্রামের রজত হাজরা বন্দর কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে বলেন, ভোমরা দিয়ে কলকাতা নিকটবর্তী হওয়ায়  আমি ও আমার পরিবার নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এই বন্দর দিয়ে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করি। কিন্তু এখানে যত্রতত্র ট্রাক রাখার কারণে আমাদের গাড়ি নিয়ে বন্দরের এক কিলোমিটার রাস্তা পার হতে প্রায় এক থেকে ২ ঘন্টা সময় লেগে যায়। অনেক সময় আমরা গাড়ি রেখে অসুস্থ শরীর ও ছোট বাচ্চাদের নিয়ে পায়ে হেঁটে বন্দরে পৌঁছায়। এতে করে আমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়। এছাড়া কলকাতা যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ বর্ডার পার হয়ে ওপারে যেয়ে নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেনও ধরতে পারি না। সবমিলিয়ে অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়।

অপরদিকে ভোমরা বন্দরে যাত্রী নিয়ে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করা প্রাইভেট গাড়ীচালক রউফ বলেন, বর্তমানে আমাদের যাত্রীরা  ভোমরা বন্দরে যাওয়ার কথা বললে আমাদের অনেক ভাবা লাগে যে আজ বন্দরের এক কিলোমিটার কোন অবস্থায় আছে। এ কথা চিন্তা করে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়া লাগে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বন্দর থেকে মালামাল আনা নেওয়ার জন্য ট্রাক গুলি নির্দিষ্ট পার্কিংয়ের জায়গায় না রেখে বন্দরের এই এক কিলোমিটার রাস্তার উপরে যত্রতত্রভাবে রাখে। আর এ কারণে এখানে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। যার কারনে আমাদের প্রচুর সময় নষ্ট হয়ে যায়।

ভোমরা বন্দরের ট্রাক চালক সাহেব আলী বলেন, বন্দর দিয়ে মালামাল কম লোড হওয়ার কারণে আমরা ট্রাক ড্রাইভারেরা গাড়ি আগে লোড করার জন্য পাল্লা দিয়ে সামনে যাওয়ার কারণে এই যানজটের সৃষ্টি হয়। আমরাও অনেক সময় ঘন্টার পর ঘন্টা মাল আনা নেওয়ার জন্য রাস্তায় এভাবে দাঁড়িয়ে থাকি। আর এতে করে সাধারণ জনগণের চলাচলের জন্য একটু কষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের কিছুই করার থাকেনা।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা ভোমরা স্থল কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুছা জানান, এই বন্দরের যাতায়াতের রাস্তা সংকীর্ণ থাকার কারণে এ যানজট সৃষ্টি হয়। বন্দরটি ২০১৩ সালে ১০ একর জমির উপরে চালু হয়ে এখনও পর্যন্ত সেই অবকাঠামোর উপর দিয়েই কার্যক্রম চলছে। বিগত সরকার বন্দরের জায়গা বাড়ানোর জন্য কিছু জায়গা একুয়ার করলেও তার কার্যকারিতা খুব বেশি পরিলক্ষিত হয়নি। যার কারনে এ রাস্তায় প্রায় সময় যানজট লেগে থাকে।

এ বিষয়ে ভোমরা নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এডি রুহুল আমিন বলেন, বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বেশি হওয়ার ফলে মাঝে মাঝে যানজটের সৃষ্টি হয়। এখানে কোন ট্রাফিক ব্যবস্থা নেই। তারপরও আমরা চেষ্টা করি সব সময় রাস্তাঘাট যানজট মুক্ত রাখার। বর্তমানে ভোমরা বন্দরে উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। কাজটি শেষ হলে আশা করা যায় বন্দরে যানজট থাকবেনা।

কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতায় ভোমরা স্থল শুল্ক স্টেশনের কার্যক্রম চালু হয়। ২০০২ সালের এসআরও নং-১১ আইন অনুযায়ী ১২ জানুয়ারি শুল্ক স্টেশনকে বন্দর হিসাবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০১৩ সালে ভোমরা বন্দরটি পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে এ বন্দর দিয়ে দুধ ছাড়া সবকিছু আমদানি-রপ্তানি করার অনুমতি রয়েছে। আরও জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ বন্দর থেকে ৯০৭ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় হয়। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য মাত্রা ১০০৯ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আরবি/এফআই

Link copied!