ঢাকা সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

নির্মাণের আট বছরেই বেনাপোল-যশোর মহাসড়কে রাটিং

যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪, ০৬:১৩ পিএম

নির্মাণের আট বছরেই বেনাপোল-যশোর মহাসড়কে রাটিং

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বাণিজ্যিক কারণেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ বেনাপোল-যশোর মহাসড়ক। বেনাপোল বন্দর থেকে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করে এ সড়ক দিয়ে। ২০১৮ সালে বেনাপোল থেকে যশোর পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার মহাসড়কটি নির্মাণ করা হয়েছিল, যার ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩২৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। তবে নির্মাণের আট বছরেই সড়কটির
অর্ধশতাধিক স্থানে রাটিং দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, নির্মাণকাজে নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার করায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তবে তা মানতে নারাজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, নির্দিষ্ট ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি পরিমাণ লোড নিয়ে যানবাহন চলাচল করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, চাঁচড়া বাজার থেকে ঝিকরগাছা পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটারে বিভিন্ন স্থানে ডিবি তৈরি হয়েছে। চেকপোস্ট থেকে পুলেরহাট পর্যন্ত দুই পাশে গতিরোধকের মতো উঁচু হয়ে রয়েছে। এছাড়া মালঞ্চি, ধোপাখোলা, ঝিকরগাছা মোড় থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত, বেনাপোল কাস্টমস অফিসের সামনে সড়কে
রাটিং দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে পুলেরহাট বাজার ও লাউজানি রেল ক্রসিংয়ের সড়কে গর্ত তৈরি হয়েছে। স্থলবন্দরে যাতায়াতের একমাত্র মহাসড়কটিতে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। রাটিংয়ের কারণে মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, তিন চাকার বাহনসহ ছোটখাটো যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বলে
জানান চালকরা।

প্রাইভেট কার চালক নূরনবী হোসেন বলেন, ‘সন্ধ্যার পর এ সড়কে গাড়ি চালানো খুব কষ্টকর হয়ে পড়ে। বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসা একটার পর একটা ট্রাকের চাপে প্রাইভেট কারের চাকা সড়কে তৈরি হওয়া ঢিবিতে উঠে যায়। নতুন চালকদের জন্য এ সড়কে চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ।’

মোটরসাইকেলে প্রতিনিয়ত যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে চলাচল করেন খালিদ হোসাইন। তিনি বলেন, ‘রাতে ঢিবিগুলো ঠিকমতো দেখা যায় না। এ কারণে ঝুঁকি নিয়ে এ সড়কে চলাচল করতে হয়। মোটরসাইকেলের গতি একটু বেশি হলেই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।’

ঝিকরগাছা বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় ফারুক হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, রাস্তার একপাশে উঁচু-নিচু ঢিবি তৈরি হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চলাতে হয়। ঠিকমতো ঢিবিগুলো দেখাও যায় না। এগুলো এড়াতে গেলে মাঝেমধ্যে গাড়ি সড়ক ছেড়ে বাইরে চলে আসে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। দেশে মহাসড়কগুলোর ফুলে ওঠা বা ডেবে যাওয়ার বিষয়টি এখন সাধারণ এক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জেলা সড়ক থেকে জাতীয় সড়ক সব স্থানেই একই সমস্যা। প্রকৌশলীদের ভাষায় এ সমস্যাকে বলা হয় রাটিং।

তবে সড়ক বিভাগের প্রকৌশলীদের দাবি, রাটিং দেখা দিচ্ছে ওভারলোডিংয়ের কারণে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা ত্রুটি দেখছেন সড়কের নির্মাণ পদ্ধতিতেই। নির্মাণযন্ত্রের দুর্বলতা ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণেই এ সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।

এ ব্যাপারে যশোর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মাহবুব হায়দার খান বলেন, ‘বর্ষা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ঢিবিগুলো কেটে বিটুমিন দিয়ে সড়ক সমান করা হবে। পুলেরহাট ও লাউজানি লেবেল ক্রসিংয়ে নষ্ট হওয়া সড়কে ইট-বালি দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। এ দুই স্থানে রিজিট (ঢালাই রাস্তা) নির্মাণের চাহিদাপত্র দিয়েছি। যদি বাস্তবায়ন হয় তাহলে সমস্যার সমাধান হবে।’

তিনি বলেন, ‘সড়ক ঠিক রাখতে শুধু কর্তৃপক্ষের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। সড়ক নষ্ট হওয়ার পেছনে সবারই দায় রয়েছে। পৌরসভা থেকে শুরু করে জমির মালিক সড়কের পাশে উঁচু করে স্থাপনা নির্মাণ করে। এক্ষেত্রে পানি জমে সড়কের ক্ষতি হয়। বিদ্যুৎ বিভাগও আমাদের না জানিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো সড়কের পাশে খুঁটি স্থাপন করে।’

সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া জানান, বৃষ্টির জন্য আপাতত কিছু করা যাচ্ছে না। তবে বর্ষা মৌসুম শেষ হলে সড়কটির সংস্কারকাজ শুরু করা হবে। মূলত পুলেরহাটে বাঁকের কারণে ওভারলোড গাড়ির গতি কমে যায়। এজন্য সেখানে সড়ক ডেবে যাচ্ছে।

সড়ক যোগাযোগের দুরবস্থার কারণে পণ্য পরিবহন বিঘ্নিত হচ্ছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। 

এ প্রসঙ্গে বেনাপোল ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্টাস এন্ড এক্সপোর্টাস এ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘যশোর-বেনাপোল সড়কটি আমাদের জন্য
খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন পণ্য বোঝাই ট্রাক চলাচল করে ৫০০-এর বেশি। সড়ক ব্যবস্থা খারাপ থাকলে গাড়ি ভাড়া বেশি দিতে হয় আমদানিকারকদের। সড়কটি জাতীয় মানের হলে একদিকে সময় বাঁচবে, অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের যানজটে পড়ে আর্থিক ক্ষতির শিকার হতে হবে না।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!