দেশের অন্যতম লবন উৎপাদনশীল জেলা কক্সবাজার উপকূলে এখন লবণ উৎপাদনের ধুম পড়েছে। চলতি মৌসুমে টেকনাফে ৩ হাজার ৯’শত একর জমিতে লবণ উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু লবনের দাম কম হওয়াই হতাশায় ভোগছেন চাষিরা। বেচা বিক্রি তেমন নেই। চাষিরা উৎপাদিত লবণ মাঠে গর্ত খুঁড়ে মজুত করছেন। কেউ কেউ গুদামে ফেলে রাখছেন। কারণ এই ভরা মৌসুমেও নায্যমূল্য পাচ্ছে না প্রান্তিক চাষিরা। সারাদিন প্রখর রোদে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে লবন উৎপাদন করে যদি সঠিক দামে বেচতে না পারে তাহলে হতাশ তো হওয়ার কথা, এমনটাই জানাচ্ছেন লবন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
লবণ চাষিদের অভিযোগ, সিন্ডিকেটের আগ্রাসন ও আমদানির কারণেই কমে গেছে লবণের দাম।
চাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত ডিসেম্বর মাসে প্রতি মণ লবণ ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হলেও জানুয়ারি মাসে দরপতন শুরু হয়।
আর গত সপ্তাহে মণ প্রতি লবণের দাম কমেছে আরও ৩০ টাকা। এখন প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায়। লোকসান দিয়েও লবণ বিক্রি না হওয়ায় হতাশ চাষিরা মাঠ ছাড়তে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে পাঁচ হাজার চাষি লবণ উৎপাদন বন্ধ রেখেছেন বলে জানান লবন ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা দেখা যাবে।
টেকনাফের সাবরাং আছারবনিয়া এলাকার চাষি সাব্বির আহমদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ডিসেম্বর মাসে প্রতি মণ লবণ বিক্রি হয়েছে ২৮০-৩০০ টাকায়। এখন ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা। অথচ প্রতি মণ লবণ উৎপাদন খরচ যাচ্ছে ২৫০ টাকা। লোকসান দিতে দিতে হয়রান চাষিরা।
সাবরাং নয়াপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শরিফ মেম্বার বলেন, সংকটের অজুহাত তুলে অসাধু একটি চক্র বিদেশ থেকে লবণ এনে দেশীয় লবণশিল্পকে ধ্বংস করছে। এর ফলে সম্ভাবনাময় লবণশিল্পটি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ৪৪ হাজার প্রান্তিক চাষিসহ লবণ ব্যবসায় জড়িত জেলার অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ।’
টেকনাফ লবণ ব্যবসায়ী ও চাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি শফিক মিয়া বলেন, ‘মাঠ থেকে লবণ ট্রাকে তুলতে পরিবহন খরচ যায় ৩০ টাকা।
এ ক্ষেত্রে প্রতি মণ লবণের দাম আর উৎপাদন খরচ বিবেচনা করলে মুনাফা বলতে কিছুই থাকেনা।অথচ খুচরা বাজারে প্রতি কেজি লবণের দাম ২৫ থেকে ৪০ টাকা। এসব তদারকির যেন কেউ নেই
কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপমহাব্যবস্থাপক বলেন, চলতি মৌসুমে ১৫ ডিসেম্বর থেকে জেলার আটটি উপজেলায় ৬০ হাজার ৫৫৯ একর জমিতে লবণ উৎপাদিত হচ্ছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিকটন। আর লবণের বার্ষিক জাতীয় চাহিদা ধরা হয়েছে ১৮ লাখ ৪৮ হাজার মেট্রিকটন।এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের প্রান্তিক চাষিদের প্রতি সদয় দৃষ্টি রাখা দরকার মনে করছি যাতে করে তারা উৎসাহ পায়।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. এহসান উদ্দিন বলেন, টেকনাফে প্রায় ৩ হাজার ৯’শত একর জমিতে লবন উৎপাদন করা হচ্ছে। লবন মিলের মালিক ও ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরী করে মাঠ পর্যায়ে লবনের দাম কমিয়ে দেওয়ার বিষয় অন্য জনের মতো আমিও শুনেছি। এ বিষয়ে মন্ত্রনালয় থেকে কোন নিদর্শনা পাওয়া গেলে বিহীত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। চাষিরা যাতে ন্যায্য মুল্য পায় সে বিষয়েও কাজ করা হচ্ছে।
এদিক খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি বছরের মতো এবছরও কক্সবাজারের সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, টেকনাফ লবণ উৎপাদন হয়ে আসছে।
এরমধ্যে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, টেকনাফ পৌরসভা, হ্নীলা, হোয়াইক্যংয়ের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় লবন চাষ হচ্ছে। চলতি মৌসুমে টেকনাফে ৩ হাজার ৯’শত একর জমিতে লবণ উৎপাদন হচ্ছে। সারাদেশে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে ২৩ লাখ ৫৭ হাজার মেট্রিক টন।
আপনার মতামত লিখুন :