লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী স্থলবন্দর-ঢাকা মহাসড়কের সাথে চলছে বালুর রমরমা ব্যবসা। সড়কের ফুটপাত জুড়ে অনিয়ন্ত্রিত এ ব্যবসার কারণে প্রায়ই হচ্ছে দুর্ঘটনা। ঘটছে প্রাণহানী।
স্থলবন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাথর ও অন্যান্য পণ্য আনা-নেওয়ার সময় ট্রাক ও লরি বেশ ভাড়ি অবস্থায় চলাচল করে। এ অবস্থায় মহাসড়কের কিছু অংশ ও ফুটপাত দিয়ে খালি ট্রাক, মোটরসাইকেল, ইজিবাইক এবং অন্যান্য ছোট যানবাহনের আরোহীসহ পথচারীরা যাতায়াত করেন। কিন্তু মহাসড়কের ফুটপাত অবৈধভাবে দখল করে বালুর স্তূপ রেখে ব্যবসা ও মহাসড়কের অংশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে বালু বোঝাই করায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে শুরু করে বাউরা ইউনিয়ন পর্যন্ত মহাসড়ক ও কয়েকটি আঞ্চলিক সড়কের অন্তত দুই শতাধিক স্থানে বালুর স্তূপ রেখে ব্যবসা করতে দেখা গেছে স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীদেরকে। পাশাপাশি পাটগ্রাম পৌরসভা, পাটগ্রাম ইউনিয়ন, শ্রীরামপুর ও বুড়িমারী ইউনিয়নের ধরলা নদীর প্রবাহিত অংশের নিকটবর্তী প্রায় ১৫ টি গ্রামের অন্তত ২০ থেকে ২৫ টি আঞ্চলিক পাকা ও কাঁচা সড়ক দিয়ে বেপরোয়া ট্রাক্টর গাড়ির মাধ্যমে প্রতিনিয়ত বালু পরিবহন করা হয়। প্রতিদিন কয়েকশত বার এসব ট্রাক্টর গাড়ি দিয়ে বালু এনে মহাসড়কের সাথে রেখে পাহাড়ের মত উচু ঢিবি করে রাখা হয়। এতে অঞ্চলিক ও মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের অংশ জুড়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে বালু লোড-আনলোড (বোঝাই-খালি) করায় দুর্ঘটনা হচ্ছে প্রায়ই।
মহাসড়কে বালু রাখায় ও ভারি যান লরির সাথে সাইড/পার্শ্ব নিতে না পাওয়ায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে ঘুন্টি বাজার এলাকায় পাথরবাহী লরির পিছনের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যায় আমিনুর রহমান (৩০)। স্থানীয়দের দাবি ওই স্থান জুড়ে উচু করে বালু রাখার কারণে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যায় আমিনুর।
এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে ঢাকাগামী মহাসড়কের দুইদিকে একাধিক বালুর পাহাড়সম স্তুপ। বুড়িমারী স্থলবন্দর মহাসড়ক থেকে ঘুন্টি, কল্লাটারী, উফারামারা, বেলতলী, হরিসভা, খানপাড়া, চিলার বাজার, সরেঅর বাজার, মির্জারকোটসহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানের অংশ জুড়ে বালু রেখে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন অসংখ্যবার এলাকার আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে অনুমোদনহীন ট্রাক্টরে বালু পরিবহন করায় কাঁচা, আধাপাকা ও পাকা সড়ক ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে চলাচলে দুর্ভোগে পড়ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পৌর শহরের মধ্য দিয়ে ও মহাসড়ক হয়ে বেপরোয়া গতিতে এসব বালু পরিবহনে নিত্য ঘটছে দুর্ঘটনা।
বুড়িমারী ইউনিয়নের উফারমারা ঘুন্টি বাজার এলাকার বাসিন্দা বুলু মিয়া (৫৩) বলেন, ‘মহাসড়কের সাথে বালু রাখলে সমস্যা। পাকা সড়কে বালুতে মোটরসাইকেল পিছলে যাওয়ার মত হয়। পাশাপাশি ভারি গাড়ি ও অন্যান্য গাড়ি চলাচলে দুর্ঘটনা হয়। অনেক সময় ট্রাকের নিচে পড়ে মৃত্যু ঘটে। বালু যাতে কেউ না রাখে এ ব্যাপারে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
ট্রাক চালক রুবেল মিয়া জানান, ‘বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে পাথর বোঝাই করে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাচ্ছি। বুড়িমারী মহাসড়কের দু`পাশের বিভিন্ন স্থানে বালুর স্তুপ করে রাখায় অনেক সময় দুর্ঘটনা হচ্ছে। সড়কে চলা অপর গাড়িকে পাশ দিতে অধিকাংশ স্থানে বালুস্তুূপ থাকায় নির্ধারিত জায়গায় গাড়ি থামানো যায় না।’
এ ব্যাপারে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল ইসলাম বলেন, ‘মহাসড়কের সাথে বালু রেখে ব্যবসা করা যাবে না। কেউ করলে খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :