ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

প্রতিকূলতা কাটিয়ে সবজি চাষে ব্যস্ত সাতক্ষীরার কৃষকরা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২৪, ১২:০৮ পিএম

প্রতিকূলতা কাটিয়ে সবজি চাষে ব্যস্ত সাতক্ষীরার কৃষকরা

ছবি: রুপালী বাংলাদেশ

চলতি বছরে বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় আগাম সবজি চাষে অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন সাতক্ষীরার কৃষকরা। সেই প্রতিকূলতা কাটিয়ে এবার শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে জেলার স্থানীয় কৃষকরা। যে সময় শীতকালীন আগাম সবজি খেত থেকে তুলে বাজারে বিক্রির কথা, সে সময় সবজির আবাদের জন্য খেত প্রস্তুতের কাজ করছেন চাষীরা। ফলে জেলার কৃষকেরা লোকসানের পাশাপাশি শীতকালীন সবজি চাষের মৌসুম থেকে পিছিয়ে পড়েছেন। তবে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

কৃষকরা জানান, সাতক্ষীরায় উৎপাদিত সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বড় একটি অংশ সরবরাহ হয় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। তবে এ বছর টানা ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে এসব এলাকার ফসলের ক্ষেত। ফলে এখানকার সবজি উৎপাদন শুরু করতে দেরী হয়েছে। সহযোগিতার দাবিও জানিয়েছেন তারা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর জেলায় ৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে রবি ফসলের আবাদ হয়। এ বছর সাতক্ষীরা জেলায় নভেম্বর মাস পর্যন্ত ২ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ করে চাষিরা। জমি থেকে পানি কমে গেলে চাষাবাদ আরও বাড়বে। বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় এবার ৫ হাজার ৩৩২ জন কৃষকের ৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি টাকারও বেশি বলে জানিয়েছে সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

তালা উপজেলার নগরঘাটা গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেন। তিনি প্রতি বছর আগাম জাতের শীতকালীন সবজির চারা রোপণ করে চমক দেখান। তবে চলতি বছর তিনিও হতাশ। আবুল হোসেন রুপিালী বাংলাদেশকে  বলেন, তিন বিঘা জমিতে ১ লাখ টাকা খরচ করে আগাম জাতের শীতকালীন সবজির চারা রোপণ করেছিলাম। গতমাসে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে সব চারা মরে যায়। আবার নতুন করে চারা লাগিয়েছি। কিন্তু এই সবজি যখন বাজারে উঠবে; তখন সবজির ভালো দাম পাবো না।

একই কথা বলেন কৃষক জহুর আলী। তিনি বলেন, বর্ষার শেষদিকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় উন্নতমানের সবজির চারা উৎপাদন করে চাষিদের কাছে বিক্রি করি। তবে গত মাসে টানা বৃষ্টির কারণে প্রথম দফায় বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। তাতে ৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য ঘেরের আইলে শীতকালীন সব সবজি তাও নষ্ট হয়ে গেছে।

এই গ্রামের অন্যরাও বাঁধাকপি ও ফুলকপির বীজ বপন করেছিলেন। তবে বৃষ্টিতে প্রথম দফার বীজতলা ও রোপণ করা চারা নষ্ট হয়েছে। এজন্য আবার নতুন করে সবজি চাষের জন্য বীজতলা তৈরি করেছেন অনেকে। এতে মৌসুমের শুরুতে বাজার ধরতে না পারায় উৎপাদিত সবজির বাজারদর কম পাওয়ার শঙ্কায় তারা। এজন্য সরকারিভাবে সহযোগিতার দাবি কৃষকদের।

সাতক্ষীরা সুলতানপুর বড় বাজারের ব্যবসায়ী মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ক্ষেতের সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। এতে সাতক্ষীরার স্থানীয় বাজারে সরবরাহ কমায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। নতুন করে শীতকালীন সবজি বাজারে না আসা পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা নেই।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এ বছর টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার ৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি টাকারও বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৫ হাজার ৩৩২ জন। গত বছর জেলায় ৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে রবি ফসলের আবাদ হয়েছিল। জলাবদ্ধতার কারণে এ বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ২ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়েছে। জমি থেকে পানি কমে গেলে চাষাবাদ আরও বাড়বে।’

তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের পরামর্শ, বীজ ও সার দিয়ে সহযোগিতা করা হবে। এরই মধ্যে তালিকা প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে।

আরবি/জেআই

Link copied!