শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪, ০৪:৫৬ পিএম

সাতক্ষীরার সুন্দরবন টেক্সটাইল মিল বন্ধ থাকায় সম্পদ নষ্ট, বেকার শ্রমিকরা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪, ০৪:৫৬ পিএম

সাতক্ষীরার সুন্দরবন টেক্সটাইল মিল বন্ধ থাকায় সম্পদ নষ্ট, বেকার শ্রমিকরা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সাতক্ষীরার অর্থনীতিতে এক সময় বিশেষ ভূমিকা রাখা সাতক্ষীরার একমাত্র ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলটি এক যুগেরও বেশি সময় ধরে অচল হয়ে বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। ফলে নষ্ট হচ্ছে মিলের কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও নানা সম্পদ। অভিযোগ রয়েছে, বিগত সময় বহিরাগত শ্রমিক ও কিছু কর্মকর্তার কুট কৌশলে ও ষড়যন্ত্র এর কারণে সাতক্ষীরাতে অর্থনৈতিক ভূমিকা  রাখা  সম্ভাবনাময়ী মিলটি ধ্বংস হয়ে যায়।

এদিকে মিলটি দীর্ঘদিন ধরে  বন্ধ থাকার কারণে দুই থেকে আড়াই হাজার কর্মচারী বেকার হয়ে দূরবীসহ জীবনযাপন করছেন। কিছু শ্রমিক সংসারে অভাবের তাড়নায় আবার অন্য পেশা  বেছে নিয়েছেন। এদিকে বেকার শ্রমিক, কর্মচারী ও এলাকার বিশিষ্টজনেরা মিলটি আধুনিকায়ন করে আবারও চালুর জোর দাবি জানিয়েছেন। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে মিলটি চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন (বিটিএমসি)। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমনটা জানা গেছে। এদিকে সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলকে ঘিরে সে সময় মিলের আশপাশে বিভিন্ন দোকানপাট গড়ে উঠেছিল। অনেকে পরিবারের  জীবিকার ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু  মিলটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে অধিকাংশ দোকানপাটও বন্ধ হয়ে গেছে অনেকেই কাস্টমারের অভাবে দোকান বন্ধ করে দিয়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছে। মিলটি চালু হলে অন্তত দুই -তিন হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে জানা যায়।

এদিকে বিটিএমসির কর্মকর্তারা জানান, পিপিপির মাধ্যমে শিগগিরই মিলটি চালুর জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে সরকারের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। পিপিপি এর মাধ্যমে অথবা কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে লিজ দিয়ে মিলটি চালুর ব্যবস্থা করা হবে।

নষ্ট হচ্ছে মিলের কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি । ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সহকারি হিসাব কর্মকর্তা বর্তমান মিল ইনচার্জ শফিউল বাশার জানান, দীর্ঘদিন মিলটি পড়ে  থাকায় অনেক মেশিন নষ্ট হওয়াসহ আশির দশকের মেশিন এর কারনে ও সাতক্ষীরায় গ্যাসের  লাইন না থাকায় বিদ্যুৎ খরচ বেশি হওয়ার কারণে আমরা অনেক জায়গায় বিভিন্ন পার্টির সাথে যোগাযোগ করেও মিলটি  চালানোর জন্য পার্টি আনতে বারবার ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছি। তবে মিলটি বেসরকারিভাবে (পিপিপি) এর মাধ্যমে চালানোর জন্য উপরমহল থেকে ইতিমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মিলের সাবেক শ্রমিকরা জানান, সকাল হলেই যেখানে ঠকঠক আওয়াজ হতো যেখানে আগে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার শ্রমিক কাজ করতো সেই মিলটি বন্ধ থাকার কারণে আজ মিলের ভিতরে ভুতুড়ে পরিবেশ সহ চারিদিকে ভঙ্গুর অবস্থা বিরাজ করছে। এখন কর্মচারী আছে মাত্র ১৬ জন। এর ভেতরে ১৪ জন মিলের নিরাপত্তা কর্মকর্তা দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরিতে চাকরি করছেন ও দুইজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োজিত আছেন।

জানা যায়, ১৯৮৩ সালে সাতক্ষীরা শহরের উপকণ্ঠের তালতলা এলাকায় ৩০ একর জায়গায় স্থাপন করা হয় সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস। সেখানে একসময় দুই হাজারের ও বেশি শ্রমিক কাজ করতেন। মিলের দুটি ইউনিটে সুতা উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ১০ হাজার কেজি। কিন্তু ক্রমাগত লোকসানের কারণে ২০০৭ সালে শ্রমিক-কর্মচারীদের ছাঁটাই করা হয়। পরে সার্ভিস চার্জ পদ্ধতিতে চালু রাখা হয় মিলটি। ২০১৭ সালের শেষের দিকে মিলটি ভাড়া নেয় নারায়ণগঞ্জের ট্রেড লিংক লিমিটেড। লোকসানের কারণে কয়েক মাস চালানোর পর ২০১৯ সালে বন্ধ ঘোষণা করা হয় মিলটি। প্রতিষ্ঠানটি দেখভালের জন্য বর্তমানে ১৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত আছেন।

বিটিএমসির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল হক জানান, এরই মধ্যে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় কথা হয়েছে বর্তমান সরকার মিলটি চালুর ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। সাতক্ষীরার সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলটি চালুর জন্য আমরা পিপিপি এর মাধ্যমে খুব শিগগিরই বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দ্রুত মিলটি চালুর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।

সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলিনুর রহমান জানান, দক্ষিণাঞ্চলের বৃহৎ সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলটি ধ্বংস হওয়ার কারণ হিসেবে তৎকালীন সময়ে বহিরাগত শ্রমিক এবং স্থানীয় শ্রমিকদের দ্বন্দ্বের কারণ ও বিগত সময় কিছু প্রশাসনিক কর্মকর্তার কুট কৌশল ও ষড়যন্ত্র এর কারণে সাতক্ষীরায় অর্থনৈতিকভাবে ভূমিকা রাখা সম্ভাবনাময়ী এ মিলটি ধ্বংস করা হয়। মিলটি বন্ধ হওয়ার কারণে বহু শ্রমিক তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবতার জীবনযাপন করছে। বিগত সময় মিলটি চালুর জন্য নাগরিক কমিটিসহ সাতক্ষীরা বিভিন্ন সংগঠন তৎকালীন সময়ে ব্যাপক আন্দোলন করেছে। সাতক্ষীরার নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে মিলটি পুনরায় দ্রুত চালু করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।  মিলটি চালু হলে সাতক্ষীরার কমপক্ষে দুই -তিন হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

নষ্ট হচ্ছে মিলের কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি । ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সরজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় মিলটির যন্ত্রপাতি মরিচা পড়ে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে এবং গোডাউন গুলো দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার কারণে অনেক জায়গায় প্লাস্টার উঠে খসে পড়ছে মিলটির চারিদিকে ভঙ্গুর অবস্থা বিরাজ করছে। বর্তমানে মিলের ভিতরের জায়গার অনেক রুম আবাসিক ও  র‌্যাবের কাছে ভাড়া দেওয়া আছে। 

এদিকে এলাকার বিশিষ্টজনেদের দাবি, ভুল নীতির কারণেই মিলটি লোকসানে পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে। যথাযথ নীতি গ্রহণ এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে মিলটি চালু করে ভালোভাবেই পরিচালনা করা সম্ভব বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

এ বিষয়ে সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস চালু বাস্তবায়ন কমিটির দপ্তর সমন্বয়কারী শেখ শওকত আলী বলেন, ‘এ মিলের লাভ দিয়ে আমিন টেক্সটাইল মিল ও মাগুরা টেক্সটাইল মিল গঠিত হয়েছে। সে সময় পাকিস্তান থেকে তুলা আমদানি করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিলটি। মিলটি চালু করতে সরকার যেন যথাযথ উদ্যোগ নেয়, সেই দাবি জানাচ্ছি।’

সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস চালু বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মাগফুর রহমান জানান, পিপিপির মাধ্যমে বিটিএমসি এরই মধ্যে তিনটি মিল চালু করেছে। ৩০ বছরের লিজে সেগুলো তারা চালাচ্ছে। তারা লাভবান হতে পারলে এ মিল চালু হতে পারবে না কেন?

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ জানান, আমি যতটুকু জানি, পিপিপির মাধ্যমে মিলটি চালানোর চিন্তা বিটিএমসির আছে। তবে মিলটি বেশ আগে থেকে বন্ধ রয়েছে। ক্রমাগত লোকসান দিয়ে টেক্সটাইল মিলকে আর চালু করা সম্ভব হবে কিনা জানি না। তারপরও চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি চালু হলে সাতক্ষীরার অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!