সাতক্ষীরা শ্যামনগর থেকে দক্ষিনে সাগর পাড়ে সুন্দরবন। অসংখ্য নদী সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে প্রবহমান। যা সাগর থেকে উৎপত্তি এবং সুন্দরবন সংলগ্ন। এ নদীসমূহ উত্তর মুখের সাগরের ভাটার টানে উপরের সকল পানি নিয়ে সাগরের বুকে ফিরে এসেছে। এটাই এলাকার নদী সমূহের বৈশিষ্ট্য। উত্তরে হিমালয় পর্বত। হিমালয়ের বরফ গলা পানি নিচের দিকে নেমে দক্ষিণ দিকে ধাবিত হয়েছে। নানান বাক নিয়ে বাধা পেরিয়ে দক্ষিনের সাগরের ধারার সাথে মিলিত হয়েছে। দক্ষিণ উত্তর দুই ধারার মিলনের গতি প্রকৃতিতে সৃষ্ট হয়েছে অসংখ্য নদী, খাল, ভূমি, জনপদ আর সভ্যতা। বাংলাদেশ এ দুই ধারার মধ্যবর্তী। বিশেষ করে দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল গড়ে উঠেছে। সাগর পর্বতে অপূর্ব জলকেলীর মধ্য দিয়ে হিমালয় পর্বত থেকে নেমে আসা প্রধাণ জলধারাটি গঙ্গা। গঙ্গার প্রধাণ শাখা ভাগিরথী নদী। ভাগিরথীর প্রধাণ শাখা নানান বাঁক ও স্থান ঘুরে সাতক্ষীরা শ্যামনগরের মধ্য দিয়ে সাগরের সাথে মিলেছে। আর এই যাত্রা পথে কখনও যমুনা, কখনও ইছামতি কখনও আদি যমুনা হয়ে ছুটেছে সাগরের দিকে। ভাগীরথির এই চলার পথে গড়ে উঠেছে নানান সভ্যতা ও ঐতিহ্য। গঙ্গা ভাগিরথীর প্রধাণ ধারা সাতক্ষীরার আদি যমুনা নদী শ্যামনগরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদী হচ্ছে গঙ্গা ভাগীরথির সাগর সংযমের শেষ প্রান্ত। অনেকের মধ্যে শংসয় আছে যমুনা নদী নিয়ে। মূলত সিরাজগঞ্জের পাশ দিয়ে প্রবাহিত বিশাল ও প্রবহময় যমুনা উত্তরবঙ্গের প্রধান নদী। যমুনা ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী। হিমালয় থেকে উৎপন্ন গঙ্গার সাথে উত্তর বঙ্গের বঙ্গবন্ধু সেতুর যমুনার কোনো সম্পর্ক নেই।
ইতিহাস বলে, সিরাজগঞ্জ সংলগ্ন যমুনার উৎপত্তি সাতক্ষীরার যমুনার অনেক পরে। সে কারনে বর্তমানে সাতক্ষীরার যমুনাকে আদি যমুনা বলা হয়। আজ পরিকল্পিত উন্নয়ণ প্রকল্পের আওতায় অস্তিত্ব সংকটে আদি যমুনা। অবশ্য এলাকাবাসীর আন্দোলনের ফলে কিছুটা হলেও প্রাণ ফিরে পেয়েছে আদি যমুনা। সাতক্ষষীরা শ্যামনগর কালিগঞ্জের আদি যমুনা নদী পরিচয় তুলে ধরতে এই অঞ্চলের প্রথম ঐতিহাসিক সতীশ চন্দ্র মিত্র তার যশোর ইতিহাস গ্রন্থে এভাবে বর্ণনা করেছেন এ যমুনা সেই যমুনা। যে যমুনা তটে ইন্দ্রপুরিতুল্য রাজপাট বসাইয়া কুরুপাবে ইন্দ্রপ্রস্তহস্তিনাপুরে রাজুসুয়া ষজ্ঞ সুসম্পন্ন, যে কালিন্দীতটে বংশীবটে শ্রী কৃষ্ণের প্রেম ধর্মের অপূর্ব লীলাভিনয় হইয়াছিল। যে যমুনা তীরে দিল্লীর আগ্রায় মথুরা প্রয়োহে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মোগল ইংরেজ শত শত রাজ রাজেশর সমগ্র ভারতের রাজ্য পরিচালনা করিতেন। এ সেই একই যমুনা। সেই তমাল কদম্ব পরিশোভিত, কোকিল কুজন মুখরিত নির্মল সলিলে প্রবাহিত তট শালিনী সুন্দর যমুনা। গঙ্গা ভাগীরথি নামে সপ্ত গ্রাম পশ্চিমবাংলা পর্যন্ত আসে। এখান হতে যমুনা নামে প্রথমে চব্বিশ পরগনা ও নদীয়া এবং পরে চব্বিশ পরগনা ও যশোর সীমানার মধ্যবর্তী দিয়ে পূর্ব দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়।
যমুনা ক্রমে চৌবাড়িয়া, জলেশর, ইছাপুর, ও গোবরডাঙ্গা ঘুরে চারঘাটের কাছে টিপির মোহনায় এসে ইছামতি নাম ধারণ করে। ইছামতি সোজা দক্ষিণ দিক দিয়ে যাত্রা শুরু করে বশিরহাট, টাকি হয়ে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা দেবহাটার ধার দিয়ে কালিগঞ্জের বসন্তপুর দমদমের মধ্য দিয়ে নাজিমগঞ্জ এর পূর্ব ধার হয়ে শ্যামনগরের ভুরুলিয়া দিয়ে শ্রামনগরে প্রবেশ করে। এখান থেকে সোজা দক্ষিণ দিকে বংশীপুর যেয়ে দুভাগ হয়ে যমুনা নামে ডানমুখো হয়ে রমজান নগরের সোনাখালী ও শ্যামনগরের মধ্য দিয়ে মাদার নদীর সাথে মিলিত হয়।
আপনার মতামত লিখুন :