ঢাকা সোমবার, ০৭ অক্টোবর, ২০২৪

বিদ্যালয় যেন সঙ্গীত শিক্ষালয়

বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৪, ১১:২৬ এএম

বিদ্যালয় যেন সঙ্গীত শিক্ষালয়

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগন্জ উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় যেন সঙ্গীত বিদ্যালয়। পাঠ্ক্রমের পাশাপাশি এখানে সপ্তাহে একদিন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় সফল হতে শিক্ষার্থীদের ছুটির পরে করানো হয় সঙ্গীত চর্চা। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বাদ্যযন্ত্র বাজানো, গান পরিবেশনের পাশাপাশি নৃত্য পরিবেশন রপ্ত করে ফেলেছে। তারা ইউনিয়ন উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করছে।আনন্দঘন পরিবেশে পাঠদান করানোর কারণে  ঝরে পড়া বোধ করা সম্ভব হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে বেশ কয়েকবার শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বিদ্যালয়টি।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি বদরুল ইসলাম বিপ্লবের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে।

ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগন্জ উপজেলার সেনুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। রেললাইনের ধারে গড়ে ওঠা বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাতে এক সময় অভিভাবকরা ভয় পেত।সে কারণে এখানকার শিক্ষার্থীরা নিয়মিত স্কুলে আসত না।বিভিন্ন শ্রেনীতে শিক্ষার্থীরা ঝড়ে পড়ত। কিন্তু ২০০৬ সালে সহকারি শিক্ষক আব্দুল মাজেদ বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ধরে রাখতে গ্রহন করা হয় বিশেষ পদক্ষেপ। বিদ্যালয়ে চালু করা হয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতা।

সহকারী শিক্ষক আব্দুল মাজেদ মনে করেন আনন্দহীন শিক্ষা শিক্ষা নয়।তাই তিনি বিদ্যালয়টিকে আনন্দময় করে গড়ে তুলতে ২০১৫ সালে ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ গ্রহন করেন। তিনি ইউটিউব দেখে বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শিখে শিক্ষার্থীদের মনোযোগী করে তোলেন। প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর শিক্ষার্থীদের বাদ্যযন্ত্র বাজানোর পাশাপাশি নাচ গান ইত্যাদি বিষয়ে তামিল দেন।

বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে খোলা আকাশের নিচে গোলাপী পোশাকে শিক্ষার্থীরা।

বাদ্যযন্ত্র বাজানো এবং ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে সঙ্গীত চর্চা নিয়মিত করায় বিদ্যালয়টি এখন সঙ্গীত বিদ্যালয় বললেও অত্যুক্তি হবে না। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের গোলাপী রঙের ইউনিফর্ম ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা ওই পোশাকে যখন খেলা করে তখন মনে হয় বিভিন্ন রকমের ফুলের সমাবেশ ঘটেছে।

সেনুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সপ্তাহে একদিন অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রথম থেকে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত সকল শ্রেনীর শিক্ষার্থী নাচ গান কবিতা আবৃত্তি ইত্যাদি পরিবেশন করে শিক্ষার্থীরা। এসব অনুষ্ঠানে ম্যনেজিং কমিটির সদস্য ও অভিভাবকরাও উপস্থিত থাকেন।

কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, আমরা স্কুলের সহকারী শিক্ষক মাজেদ স্যারের মাধ্যমে কাকন সহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারি। বিভিন্ন ধরনের গান পরিবেশন করতে পারি।মেয়েরা অনেকেই নাচ পরিবেশন করতে পারে। এব অনুষ্ঠান আমাদের খুব ভাল লাগে। তাই আমরা নিয়মিত স্কুলে আসি।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মাজেদ জানান, শিশুদেরকে সৎ যোগ্য ও আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সাংস্কৃতিক চর্চার কোন বিকল্প নেই।সে কারণে আমি ইউটিউব দেখে নিজে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শিখি এবং পরবর্তীতে ছাত্র-ছাত্রীদেরও বাজাতে অনুপ্রেরনা তৈরী করি।বর্তমানে এই বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী বাদ্যযন্ত্র বাজানোর পাশাপাশি নাচগান পরিবেশন করতে পারে। এ কারণে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ঝড়ে পড়া রোধ করা সম্ভব হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ মো. জুলিয়াস জামান বলেন, আমাদের বিদ্যালয়টি এক শিফটের কারণে সকাল ৯ টা হতে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ক্লাস করতে হয়। এতে এক ঘেয়েমী লাগে। এ কারণে বিদ্যালয়ের সঙ্গীত মনা শিক্ষক আব্দুল মাজেদ শিক্ষার্থীদের স্কুল ছুটির পর গান শেখায়। সেই সাথে চারুকারু, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকা শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হতে সহায়তা করে। এটা করার কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেড়ে গেছে।ঝরে পড়া রোধ করা সম্বব হয়েছে।এতে অভিভাবকরাও খুব খুশি, এলাকার জনগনও খুব খুশি।এ কারণে স্লিপ বরাদ্দের অর্থে এ বছর ১০ হাজার টাকার বাদ্যযন্ত্র কেনা হয়েছে।

বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে খোলা আকাশের নিচে গোলাপী পোশাকে শিক্ষার্থীরা।

এ ব্যাপারে পীরগন্জ উপজেলা প্রাথমিক  শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হাবিবুল ইসলাম বলেন, পীরগন্জ উপজেলার সেনুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক জনাব আব্দুল মাজেদ বেশ আনন্দঘন পরিবেশে বিদ্যালয়ে পাঠদান করায়।উনি ড্রাম তবলা ড্রামসেট সুন্দর বাজাতে পারে।শিশুরা তার ক্লাবে খুব আনন্দ পায়।বিধায় ওই স্কুলে শিক্ষাথীৃর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।স্কুলটি উপজেলা পর্যায়ে কয়েকবার শ্রেষ্ঠ হয়েছে।

আমার জানা মতে, সরকারের ইচ্ছা আছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন করে সঙ্গীত শিক্ষক নিয়োগ করা।সরকারের এই উদ্দেশ্যে সফল হলে অন্যান্য বিদ্যালয়েও সঙ্গীত চর্চা শুরু হবে এবং বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়বে । সেই সাথে কমবে ঝড়ে পড়া।

উল্লেখ্য, সেনুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থী ২৪৭ জন। কর্মরত শিক্ষক ৮ জন।

আরবি/জেডআর

Link copied!