ঢাকা রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৫
কেশবপুরে ১০৪ গ্রাম প্লাবিত

কেশবপুর-মনিরামপুরের জলাবদ্ধতা নিরসনে পলি অপসারণ শুরু

উৎপল দে, কেশবপুর

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২৪, ১১:৪৪ এএম

কেশবপুর-মনিরামপুরের জলাবদ্ধতা নিরসনে পলি অপসারণ শুরু

ছবি : রূপালী বাংলাদেশ

যশোরের কেশবপুর ও মনিরামপুরের ২৭টি বিলের জলাবদ্ধতা নিরসনে বিল খুকশিয়ার ডায়ের খালের আট ব্যান্ড স্লুইস গেট এলাকার পলি অপসারণ শুরু হয়েছে। অপরদিকে, উপজেলার পাথরা গেট এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে শ্যালোমেশিন দিয়ে পানি অপসারণ চলছে।

এলাকাবাসীর উদ্যোগেই এ কাজ করা হচ্ছে। তবে ২৭ বিল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির দাবি, এলাকার নদ-নদী খননের পাশপাশি বিল কপালিয়ায় টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) প্রকল্প গ্রহণ না করা হলে সহজে জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব হবে না।

টানা বৃষ্টি ও নদ-নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকে এক মাসের অধিক সময় কেশবপুরের ১০৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। পানি নিষ্কাশনে পানি উন্নয়ন বোর্ড চারটি ভাসমান স্কেভেটর দিয়ে আপার ভদ্রা, হরি ও বুড়িভদ্রা নদীর পলি অপসারণ কাজ চালাচ্ছে।

এর পাশাপাশি জলাবদ্ধ এলাকার মানুষ নিজ উদ্যোগে বিল খুকশিয়ার আট ব্যান্ড স্লুইস গেট এলাকার পলি অপসারণ ও বিল গরালিয়া অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনে শ্যালোমেশিন দিয়ে পানি অপসারণ করছে।

এদিকে গত আট অক্টোবর কেশবপুর ও মনিরামপুরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ২৭ বিল বাঁচাও আন্দোলন কমিটি পাঁচ দফা দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে পানি সম্পদ উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। এছাড়া ৯ অক্টোবর সুফলাকাটি ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে জলাবদ্ধ এলাকার মানুষ সমাবেশ করেন। সমাবেশে সুফলাকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম মুনজুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট পানি সেচ প্রকল্প কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের ৬৮ গ্রামের ২৭ বিলের পানি বিল খুকশিয়ার আট ব্যান্ড স্লুইস গেট দিয়ে হরি নদীতে নিষ্কাশন হয়। হরি নদী ও খুকশিয়ার খালের আট ব্যান্ড স্লুইস গেট পলিতে ভরাটের কারণে ২৭ বিল এলাকায় জলাবদ্ধতা স্থায়ী আকার ধারণ করেছে। এ কারণে ভবদহ এলাকার দু’উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ এক মাসের অধিক সময় পানিবন্দী জীবনযাপন করছে।

পাথরা গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, গত কয়েকদিন ধরে বুড়ুলি, পাঁজিয়া ও পাথরা বিল এলাকার ৪৭ গ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে সেচপাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন চলছে। এলাকার বাড়িঘর থেকে পানি নামা শুরু হয়েছে।

সুফলাকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিল খুকশিয়া পানি সেচ প্রকল্প কমিটির আহ্বায়ক এস এম মুনজুর রহমান বলেন, বিল খুকশিয়া খালের আট ব্যান্ড স্লুইস গেট হতে হরি নদী পর্যন্ত ২২০ ফুট খালে পলি পড়ে পাঁচ ফুটের অধিক উঁচু হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড হরি নদীর বিল খুকশিয়া থেকে ডুমুরিয়ার শোলগাথিয়া ব্রিজ পর্যন্ত পলি অপসারণ করছে। এভাবে খর্নিয়া ব্রিজ পর্যন্ত পলি অপসারণ করতে হবে। কিন্তু আট ব্যান্ড স্লুইস গেটের সামনে থেকে হরি নদী পর্যন্ত ২২০ ফুট খালে পলি অপসারণ ও গেটের আটকে থাকা কপাট তোলার কাজ এলাকার মানুষ নিজেরাই করছেন। পানি অপসারণ করতে আট ইঞ্চি সাইজের আটটি বৈদ্যুতিক সেচ মোটর দিয়ে ২৭ বিলের পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম চালানো হবে।

গত শনিবার সকাল থেকে কমিটির উদ্যোগে বিল খুকশিয়া খালের আট ব্যান্ড স্লুইস গেটের মুখ থেকে স্কেভেটর দিয়ে হরি নদী পর্যন্ত পলি অপসারণ শুরু হয়েছে। এর ফলে ওই ২৭ বিলে বোরো আবাদ করা সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২৭ বিল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক বাবুর আলী গোলদার বলেন, বিল খুকশিয়ার ডায়ের খালের পলি ও বিল পাথরা এলাকার পানি সেচ দিয়ে অপসারণ করা হলেও সহজে জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব নয়। হরি নদী, কপোতাক্ষ নদ, আপার ভদ্রা ও বুড়িভদ্রা নদী খননের পাশাপাশি বিল কপালিয়ায় টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) প্রকল্প গ্রহণ করা হলে এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন শিকদার বলেন, কেশবপুরের জলাবদ্ধতা নিরসনে হরিহর, বুড়িভদ্রা, আপারভদ্রা ও হরি নদীর ভরাটকৃত পলি স্কেভেটর দিয়ে অপসারণ কাজ চলছে। কাজ সম্পন্ন হলে দ্রুত জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধান হবে।

প্রসঙ্গত, কেশবপুরে ১০৪টি গ্রাম এক মাসের অধিক সময় ধরে জলাবদ্ধ হয়ে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। যশোর-চুকনগর সড়কের পাশে পৌরসভার মধ্যকুল ও হাবাসপোল এলাকার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। ৩ হাজার ৬৪০টি মাছের ঘের, ২ হাজার ৪২০টি পুকুর ভেসে যেয়ে প্রায় ৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৮৩০ হেক্টর আমন, ২৩৯ হেক্টর সবজিসহ পান, তুলা, মরিচ ও তরমুজ পানিতে তলিয়ে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে ৭০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

আরবি/ এইচএম

Link copied!