ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বরগুনায় আমন চাষাবাদের বীজ পানির নীচে, কৃষকের মাথায় হাত

বরগুনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪, ০৬:৫৭ পিএম

বরগুনায় আমন চাষাবাদের বীজ পানির নীচে, কৃষকের মাথায় হাত

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে গত তিন চারদিনের টানা বৃষ্টিতে বরগুনা জেলায় ৯৪ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমিতে আবাদ কৃত জমির প্রায় ৪০ শতাংশ জমি পানির নীচে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি আরো অব্যাহত থাকলে এবং দুই দিনের মধ্যে পানি নিরসণ না হলে তলিয়ে থাকা চাড়ার পচন ধরতে পারে। এমন পরিস্থিতি কৃষকেরা হয়ে পড়ছে দুশ্চিন্তা গ্রস্হ। ঘূর্ণিঝড় রিমাল পরবর্তী বরগুনায় অতি বৃষ্টিতে আমনের বীজতলা টানা দুই বার সম্পূর্ণভাবে পচে যায়। এবার যদি বপন করা চাড়া পঁচে যায় তাহলে দ্বিগুণ খরচের সম্মুখীন হতে হবে কৃষকদের।

বরগুনায় অব্যাহত টানা বৃষ্টিতে অনেকেই আউশ মৌসুমের চাষকৃত পাকা ধান ঘরে তুলতে পারে নাই। নলটোনা ইউনিয়নের কৃষক রবিউল ইসলাম জানান পরিস্থিতি এতটাই খারাপ এবছরে অতি বৃষ্টির কারণে আউশ ও আমন মৌসুমের ধান ঘরে তুলতে পারবো কিনা জানিনা। কারণ হিসেবে বলেন সময় মতন শ্রমিক না পাওয়ায় যেকটা দিন খড়া ছিল তখন ধান কাটা সম্ভব হয় নাই। আর এর মধ্যে টানা বৃষ্টিতে পাকা ধান এখন পানির নীচে। বৃষ্টি যদি অব্যাহত থাকে এবং পানি যদি দু একদিনের মধ্যে পানি নেমে না যায় তাহলে এই ধান ঘরে তোলা সম্ভব না। তিনি আরো বলেন এই ধান ঘরে তুলতেও শ্রমিক ব্যায় বেশী হবে যার ফলে লাভতো দূরে থাক লোকসানের পরিমাণ কতটা হয় তা নিয়ে অনেকেই এখন দুশ্চিন্তা গ্রস্হ। আবার রিমালের পর বৃষ্টিতে কয়েকবার আমনের বীজতলা তলিয়ে পঁচে গেছে। এবার যা লাগানো হয়েছে তাও আবার পানির নীচে তলিয়ে গেছে। এবার যদি চাড়া পঁচে যায় বিরাট ক্ষতির মুখে পড়তে হবে এঅঞ্চলের চাষীদের। আমনের ধান ঘরে তুলতে পারবো কিনা নতুন দুঃশ্চিতার কারণ হয়েছে এই অতি বৃষ্টিতে ধানক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায়। এযেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা।

বরগুনা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বরগুনা সদর উপজেলায় পঁচিশ হাজার নয় শত হেক্টর জমি আমন মৌসুমের চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সদর উপজেলায় শতকরা আশি ভাগ জমিতে বীজ রোপণ করা হয়েছে। তবে টানা কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে রোপণ করা চাড়ার ক্ষেত অধিকাংশ পানিতে ডুবে গেছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাতেদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কৃষকের ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে তা নিরূপণ করার পাশাপাশি সঠিক পরামর্শ প্রদান করার জন্য। তিনি আরো বলেন, আউশ মৌসুমে দশ হাজার পাঁচশত হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করা হয়েছিল। এবছর অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ার দরুন আউশের ফলনও খানিকটা ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে ধান বের হবার সময়৷ অতি বৃষ্টি ও বাতাসের প্রভাবে ধানের গোছায় চিটা লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া অনেকে পাকা ধান কাটতে পারেনি তাদের ধান এখন পানির নীচে রয়েছে। তবে তিনি বলেন ধান ঘরে তুলতে কৃষকের অতিরিক্ত শ্রমিক ব্যায় হবে এতে কৃষক ন্যায্য দাম নাও পেতে পারে।

কৃষিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান আরো বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে সবজি চাষের ওপরও অনেকটা প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে লালশাক, চিচিঙ্গা, লাউ, সিম, কাঁচা মরিচের অনেক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে কৃষকের পাশে থাকতে মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ইছা জানান চলতি বছরে উপজেলায় তেইশ হাজার তিনশত একাশি হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যে দশ হাজার ছয়শত বিরাশি হেক্টর জমিতে আবাদ করতে পেরেছে কৃষকেরা। অতিরিক্ত বৃষ্টি থাকায় চাষাবাদের লক্ষমাত্রা ব্যহত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এবছরে অতি বৃষ্টির কারণে দুই বার আমনের বীজতলা তলিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়েছে। কারো কারো তিনবারও হয়েছে। বীজতলা ক্ষতি হওয়ায় কৃষকদের কে ধান চাষে পাঁচটির বদলে দুটি করে চাড়া রোপণ করার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।

পাথরঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান  উপজেলায় এ বছর আমন মৌসুমে উপজেলায় ষোল হাজার পাঁচশত দশ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হলেও এপর্যন্ত ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। আজ সকাল পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী পাঁচ হাজার জমির আবাদকৃত জমির আমন চাড়া পানির নীচে তলিয়ে গেছে।

এছাড়াও জেলার বেতাগীতে চৌদ্দ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও অতি বৃষ্টিতে ক্ষেত পানির নীচে তলিয়ে থাকায় চাষাবাদ করতে পারছে না কৃষকেরা। বামনা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা অপু জানান, বামনা উপজেলায় ছয় হাজার তিনশত পয়তাল্লিশ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে বামনা উপজেলার কৃষকেরা দুই হাজার একশত পঞ্চাশ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ করেছে। এখানকার অধিকাংশ চাষকৃত জমির আমন চাড়া টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে। তালতলী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আবু জাফর ইলিয়াস বলেন, উপজেলায় এবছর ষোল হাজার একশত নব্বই হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তার মধ্যে দশ হাজার হেক্টর জমির চাষাবাদ করা হলেও অধিকাংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি কমলে পড়ে ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে তা জানা যাবে। 

আরবি/জেডআর

Link copied!