ঢাকা শুক্রবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৪
ডানে আতর, বামে ধূপকাঠির সুঘ্রাণ

গৌরনদীতে মুসলিম ও সনাতন ধর্মের সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন

আহাদ তালুকদার, আগৈলঝাড়া

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৪, ০৩:৪৬ পিএম

গৌরনদীতে মুসলিম ও সনাতন ধর্মের সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন

ফাইল ছবি

একপাশে মসজিদে ইবাদত বন্দেগি ও আতরের সুঘ্রাণ আরেকপাশে মন্দিরে উপাসনা ও ধূপকাঠির সুঘ্রাণ। এক পাশে উলুধ্বনি, অন্য পাশে চলছে জিকির। এভাবে ধর্মীয় সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যুগ যুগ ধরে চলছে পৃথক মুসলিম ও সনাতন দুটি ধর্মীয় উপাসনালয়।

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের আধুনা শেনেরহাট এলাকার দুটি ধর্মীয় উপাসনালয়। ধর্ম ভিন্ন হলেও দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির অটুট বন্ধন দীর্ঘদিনের।

পূজা শুরুর আগে মসজিদ ও মন্দির কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে এখন পর্যন্ত মন্দির-মসজিদ নিয়ে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। মন্দির ও মসজিদ দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে সাধারণ মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজানের সময় থেকে নামাজের প্রথম জামায়াত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্দিরে ঢাক ও ঢোলসহ যাবতীয় শব্দ বন্ধ থাকে। নামাজের প্রথম জামায়াত শেষ হলে মন্দিরের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়। এখানে কোনো বিশৃঙ্খলাও হয় না। শালীনতা বজায় রেখে একই উঠানে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছেন উভয় ধর্মের লোকরা।

আধুনা শেনেরহাট জামে মসজিদের মাত্র ১০ হাত দূরে আধুনা সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের অবস্থান। দুই সম্প্রদায়ের আলাদা ধর্মীয় উপসনালয়ে শান্তিপূর্ন সহাবস্থানের মধ্যেই চলছে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। মন্দির থেকে ভেসে আসছে দুর্গা পূজার ঢাক-ঢোল, উলু, শঙ্খধ্বনি ও মাইকের শব্দ। দুই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে বিরোধ তো দূরের কথা, স্থানীয় মুসলিম নর-নারীরা প্রতিবেশী হিন্দুদের পূজা উদযাপনে সহায়তা করছেন। বংশ পরমপরায় দুই ধর্মের অনুসারীরা আগলে রেখেছেন সম্প্রীতির এই বন্ধনকে।

মন্দির কমিটির সভাপতি শংকর চন্দ্র দাস বলেন, বিগত অর্ধশত বছর ধরে আমরা আধুনা শেনের বাড়ি সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে পূজা করে আসছি। বিগত তিন যুগ পূর্বে মন্দির থেকে মাত্র ১০ হাত দূরত্বে জামে মসজিদ গড়ে ওঠে। সেই থেকে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করে আসছি। এখানে কারো মধ্যে হিংসা কিংবা বিদ্বেষের কোনো চিহ্ন নেই।

আধুনা শেনের বাড়ি জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মো. জাকারিয়া ইসলাম বলেন, আমি বিগত ছয়মাস যাবত এ মসজিদে ইমামতি করে আসছি। এখানে ধর্ম নিয়ে কেউ কোন বাড়াবাড়ি করেনা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা আমাকে দেখলে কুশলাদি বিনিময় করে। আমিও তাদের খোঁজখবর রাখি। কারো মধ্যে কোন বিভেদ নেই।

সম্প্রীতির অন্যান্য ও মেলবন্ধন পরিদর্শনে এসে কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বরিশাল-১ আসনের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহান বলেন, এখানে সম্প্রীতি বজায় রেখে যার যার ধর্ম পালিত হচ্ছে, যা সামাজিক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছে। বিএনপির চেয়ারপার্সনের নির্দেশে এ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধরে রাখতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইউনুস মিয়া বলেন, পাশাপাশি মসজিদণ্ডমন্দির স্থাপন করে এখানকার মানুষরা সম্প্রীতির যে নজির স্থাপন করেছেন তা বিরল। এখান থেকে আমাদের নতুন প্রজন্ম সম্প্রীতির শিক্ষা পাবে বলে মনে করছি।

গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক মো. আবু আবদুল্লাহ খান ১০ অক্টোবর রাতে সরেজমিনে ওই এলাকা পরিদর্শন করে বলেন, দীর্ঘবছর থেকে একইস্থানে মসজিদ ও মন্দিরের অবস্থান। এখানে যে যার মতো ধর্ম পালন করে আসছেন। এটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি অনন্য নিদর্শন। তাদের এ সম্প্রীতির বন্ধন দেশব্যাপী প্রেরণা জোগাবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!