শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মামুনুর রশিদ মাহিন, সীতাকুণ্ড

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২৫, ১২:৫৮ এএম

ষরযন্ত্রে হুমকির মুখে জাহাজ ভাঙা শিল্প

মামুনুর রশিদ মাহিন, সীতাকুণ্ড

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২৫, ১২:৫৮ এএম

ষরযন্ত্রে হুমকির মুখে জাহাজ ভাঙা শিল্প

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় গড়ে ওঠা দেশের একমাত্র শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড বন্ধ হওয়ার পথে। দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প। শিল্পটি বন্ধ হলে প্রতি বছর হাজার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে সরকার। পাশাপাশি এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বেন।

শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের ব্যবসায়ীরা জানান, এই শিল্পকে ধ্বংস করতে গত কয়েক বছর যাবৎ একটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র উঠে পড়ে লেগেছে। এই চক্রান্তের কারণে গত বছর শিপ ব্রেকিং ব্যবসার কার্যক্রম কয়েক মাস বন্ধ ছিল। এ ঘটনার পর বিভিন্ন রকমের কঠিন শর্ত পূরণ করে যখন শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডগুলোতে জাহাজ ভাঙ্গা শুরু হয়, তখন চক্রটি অন্য একটি ইস্যু নিয়ে আবারও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।

জানা যায়, জাহাজ ভাঙা শিল্পের চাহিদা দিনে দিনে বেড়ে যাওয়ায় সীতাকুণ্ড উপকূলজুড়েই গড়ে উঠেছে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড। সীতাকুণ্ডের ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের সংখ্যা ১৮০ হলেও বর্তমানে সচল রয়েছে ২০ থেকে ৩০টি। বিভিন্ন দেশের পরিত্যক্ত জাহাজ ভিড়ছে এখানে। আর এই জাহাজ ভাঙা শিল্পে হাড়ভাঙা খাঁটুনি খেটেই জীবন চালাচ্ছেন লক্ষাধিক শ্রমিক। বর্তমানে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে জাহাজ ভাঙা শিল্প। শিল্পটি বন্ধ হলে বেকার হয়ে পড়বেন জড়িত লক্ষাধিক শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

জাহাজ আমদানিতে এলসি করতে ব্যাংকের কঠিন শর্ত, বিশ্বব্যাংকের নানাভাবে চাপ সৃষ্টি, শ্রমিকদের উসকানি, সীতাকুণ্ড থেকে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড সরিয়ে ফেলাসহ নানাভাবে বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে পুরাতন জাহাজের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় ব্যবসায়ীরা জাহাজ আমদানি করতে হিমশিম খাচ্ছেন। এই পরিস্থিতির কারণে ইতিমধ্যে ছোট ব্যবসায়ীরা ঝরে পড়েছেন। তারা ইয়ার্ডগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। বড় মাপের ব্যবসায়ীরা তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে লোকসান দিয়ে হলেও স্ক্র্যাপ জাহাজ এনে কাটছেন। তবে এই সংখ্যা হাতেগোনা। যারা বর্তমানে ইয়ার্ড চালু রেখেছেন তাদের অনেকেরই রোলিং মিল (রড কারখানা) রয়েছে। স্ক্র্যাপ বিক্রির চেয়ে রড তৈরি করে বিক্রি করাই তাদের মূল লক্ষ্য।

শিপ ইয়ার্ডের মালিকেরা জানান, নানান ষড়যন্ত্রে শিপ ব্রেকিং ব্যবসা ধ্বংসের পথে। এলসি খুলতে ব্যাংকের কঠিন শর্ত, স্ক্র্যাপ জাহাজের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবেশ-মানবাধিকার সংগঠনের নামে শ্রমিকদের উসকানি, মালিকদের হয়রানি, বিদেশি স্ক্র্যাপ জাহাজবিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে জাহাজ বিক্রি করতে অনীহা প্রকাশ এবং দেশে এই ব্যবসা বন্ধ করতে চাপ সৃষ্টি এ সবই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ বলে তারা মনে করছেন।

প্রায় আড়াই লাখ মানুষ জাহাজ ভাঙা শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এটি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সীতাকুণ্ডে দেড় শতাধিক শিপ ইয়ার্ড রয়েছে। সবগুলো ইয়ার্ড চালু থাকলে প্রতি বছর সরকার ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার অধিক রাজস্ব পায়। প্রতি বছর সীতাকুণ্ডে ২০০ থেকে ২৫০টি জাহাজ ভাঙা হয়। এই শিল্প থেকে প্রায় ৩০ লাখ টন স্টিল রিসাইক্লিং করা হয়। দেশের ৪৫০ স্টিল রি-রোলিং মিলের মধ্যে ৮০ ভাগই ছোট আকারের এবং তাদের কাঁচামালের জন্য এই শিল্পের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। এই শিল্পে স্থবিরতা শুরু হলে রডের দামও বেড়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

অক্সিজেন কারখানার এক মালিক বলেন, ‘উৎপাদিত অক্সিজেনগুলো জাহাজ কাটার কাজে ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি বাইরের লোহার ডিপো ও জাহাজ ভাঙা শিল্পের মালিকদের কাছে বিক্রি করে থাকি। কিন্তু জাহাজ ভাঙা শিল্প ও ইস্পাত কারখানাগুলোর দুরবস্থা শুরুর পর একে একে বন্ধ হচ্ছে শিপ ইয়ার্ড। এতে করে অক্সিজেন কারখানাগুলোও বন্ধ হচ্ছে। ফলে এখানের শ্রমিকেরাও বেকার হচ্ছেন। লোকসানের মুখে পড়েছেন অক্সিজেন কারখানার মালিকেরা।’

সীতাকুণ্ড পুরাতন জাহাজের ইলেকট্রিক কেবল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন জানান, শিপ ইয়ার্ড নির্মাণ হওয়ায় এই শিল্প ঘিরে সীতাকুণ্ডে স্থাপিত হয়েছে প্রায় ৫০টি রি-রোলিং মিল, কয়েক শ স্ক্যাপ লোহার ডিপো, শতাধিক ফার্নিচারের দোকান, বৈদ্যুতিক কেবলের দোকান, অর্ধশতাধিক ক্রোকারিজ দোকান এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংকের ৩০টির মতো শাখা। শিপ ইয়ার্ড বন্ধ হলে এসব প্রতিষ্ঠানের লোকজন বেকার হয়ে পড়বে। বিপাকে পড়তে হবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের।

অটো রি-রোলিং মিলের এক মালিক জানান, শিপ ইয়ার্ড বন্ধ হয়ে গেলে শুধু সীতাকুণ্ডেই ৪০টি রি-রোলিং মিল বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ অটো রি-রোলিং মিলগুলোর লোহা বিদেশ থেকে আনা হলেও ম্যানুয়াল রি-রোলিং মিলগুলো সম্পূর্ণ জাহাজের স্ক্র্যাপ লোহার ওপর নির্ভরশীল। আর সারা দেশে প্রায় ৪৫০টি রি-রোলিং মিল বন্ধ হয়ে যাবে। তাছাড়া ঢাকার ধোলাইখাল, চট্টগ্রাম নগরীর কদমতলী, মাদারবাড়ী, সাগরিকা রোড এলাকার স্ক্র্যাপ ডিপো, ইলেকট্রনিকস, হার্ডওয়্যারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পথে বসবেন।

কে আর শিপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ডের কর্ণধার ও কে আর গ্রুপের ডিরেক্টর মো. তছলিম উদ্দিন বলেন, ডলারের সংকট, দামের পতন, স্বার্থান্বেষী মহলের নেতিবাচক প্রচারসহ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙা শিল্প।

বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিএ) সভাপতি জানান, জাহাজ ভাঙা শিল্পের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করতে কিছু মহল ষড়যন্ত্র করছে। এই শিল্প বন্ধ হলে লক্ষাধিক লোক বেকার হয়ে পড়বে। বর্তমানে পাঁচটি ইয়ার্ড গ্রিন শিপ ইয়ার্ডে রূপান্তরিত হয়েছে।

আরও অনেক ইয়ার্ডে এই কার্যক্রম চলছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন ইয়ার্ডের মালিক, মাঝি ও শ্রমিকেরা এবং কাজের পরিবেশ আগের চেয়ে অনেক উন্নত।

আরবি/জেডআর

Link copied!