ঢাকা শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫

নরসিংদীতে মোবাইল কোর্টের সদস্যদের ওপর গুলিবর্ষণ

নরসিংদী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২৫, ১০:৫০ পিএম

নরসিংদীতে মোবাইল কোর্টের সদস্যদের ওপর গুলিবর্ষণ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

নরসিংদীর রায়পুরায় মোবাইল কোর্টের সদস্যদের ওপর গুলিবর্ষণ করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে উপজেলার মির্জাচর ও চরমধুয়া ইউনিয়নের ধরাভাঙ্গা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

জানা গেছে, রায়পুরায় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাকে না মেনে করে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে রায়পুরায় মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে আসছে বালুখেকোরা। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে একাধিকবার জেল জরিমানা করা হলেও কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না এসব দস্যুদের বালু উত্তোলন। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে বিভিন্ন সময় রাতেও বালু কাটতে দেখা গেছে বালু দস্যুদের। বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ ও স্থানীয়দের অভিযোগের পর বৃহস্পতিবার মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ এক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে যায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন: শেরপুরে অস্ত্র ও ভাঙচুর মামলায় ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি গ্রেপ্তার

রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ রানার নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় সঙ্গে ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ম্যাজিস্ট্রেট মো. শফিকুল ইসলাম ও জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেনসহ স্থানীয় সাংবাদিক, ব্যাটালিয়ন পুলিশ ও থানা পুলিশ।

আরও জানা যায়, রায়পুরা উপজেলার মির্জাচর ইউনিয়নের ধরাভাঙ্গা গ্রামের পাশের নদীতে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০টি ড্রেজার দিয়ে প্রায় অর্ধশতকের বেশি বালু বহনকারী ব্ললগ্রেট বোঝাই করে তোলা হচ্ছে বালু। সেখানে প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে সেখান থেকে বাল্কহেড ও ড্রেজার সরাতে থাকে বালুখেকোরা। একপর্যায়ে ড্রেজার ও বাল্কহেড বিভিন্ন দিক দিয়ে ছুটোছুটি করতে থাকে। পরে সেখান থেকে ছয়টি ড্রেজার জব্দ করতে সক্ষম হয় প্রশাসন।

পরে সেগুলো সেখান থেকে নিয়ে আসার পরিকল্পনার পাশাপাশি বালু উত্তোলনের স্থান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে রায়পুরা উপজেলার চরমধুয়া ইউনিয়নের একটি ইটের ভাটায় আরও কিছু বালুবোঝাই ব্লালগ্রেড ও ড্রেজার রেখে পালাতে থাকে বালুখেকোরা। সেসময় সেটি প্রশাসনের নজরে এলে সেগুলো ধরতে স্পিডবোট নিয়ে সেই ইটের ভাটার দিকে রওনা হয় প্রশাসন। এমন অবস্থায় ইটের ভাটায় পৌঁছানোর আগেই দুটি স্পিডবোটকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকে বালুখেকোরা। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকায় দ্রুত স্পিডবোট ঘুরিয়ে বালু উত্তোলনের স্থানে ফিরে আসে তারা।

তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত বা কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। জব্দকৃত ছয়টি ড্রেজার সেখানেই ফেলে আসে প্রশাসন। তবে সেখান থেকে একটি ড্রেজারের দুই জনকে আটক করে নিয়ে আসা হয়।

জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রশাসনের অনুমতিতে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে ইজারাদাররা। তবে তাদের সীমানা পেরিয়ে নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার মির্জাচর ও চরমধুয়া ইউনিয়নের সীমানায় তারা ড্রেজার বসিয়ে মাটি কাটে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে আজ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে প্রশাসন।

এদিকে, মোবাইল কোর্ট থেকে ফিরে রায়পুরা উপজেলার পান্থশালা ফেরিঘাটে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা। তিনি বলেন, মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে প্রতিনিয়তই বালু উত্তোলন হচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা আজ মোবাইল কোর্টে গিয়েছি। সেখানে গিয়ে আমরা দেখতে পাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার সীমানা পেরিয়ে রায়পুরা উপজেলার মির্জাচরে এসে অনেকগুলো চুম্বক ড্রেজার দ্বারা তারা বালু উত্তোলন করছিল। সে সময় আমরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করি। সেখানে আমরা একটি ড্রেজারে থাকা ২ জনকে আটক করি। ইতোমধ্যে তাদের ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা দিতে না পারলে তাদের উপর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, চরমধুয়া ইউনিয়নে একটি অবৈধ ইটভাটার পাশে ড্রেজার লাগিয়ে একদল বালুখেকো বালু উত্তোলন করছিল। সে খবর পেয়ে সেখানে যাওয়ার পথেই তারা আমাদের ওপর গুলিবর্ষণ করতে থাকে। সে সময় আমাদের সঙ্গে পর্যাপ্ত সংখ্যক ফোর্স না থাকায় আমরা সেখান থেকে চলে আসি। যে বা যারা এর সঙ্গে জরিত, তাদের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত মামলার ব্যবস্থা করছি। আশা করি তারা দ্রুত গ্রেপ্তার হবে।

আরবি/এইচএম

Link copied!