ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

গুলি করল পুলিশ, আসামি হল সাংবাদিক

টঙ্গী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৪, ০৩:৪৮ পিএম

গুলি করল পুলিশ, আসামি হল সাংবাদিক

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

টঙ্গী: কলেজে পড়ুয়া মো. হৃদয়কে সশস্ত্র কয়েকজন পুলিশ সদস্য ঘিরে রেখেছে। পোশাক ও হেলমেট পরিহিত কয়েকজন পুলিশ সদস্য আবার তাকে টানাহেঁচড়া করছে। কেউ চড় থাপ্পর মারছে। এরই মধ্যে সামনের দিক থেকে একজন পুলিশ সদস্য এসে হৃদয়ের পেটে অস্ত্র ঠেকিয়ে একটি গুলি করে। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ২০ বছরের হৃদয়। রাস্তার ওপর লাশ পড়ে থাকে তার। পরে পুলিশ সদস্যরা চারদিকে চলে যেতে থাকে। এমন দৃশ্যের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে। ভিডিওতে দেখা যায় পুলিশ প্রকাশ্যে হৃদয়ের পেটে গুলি করছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার সময় গত ৫ আগস্ট বিকেলে গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ি থানা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত মো. হৃদয় টাঙ্গাইলের গোপালপুর থানার উত্তর আলমনগর এলাকার মোঃ লাল মিয়ার ছেলে। টাঙ্গাইলের হেমনগর ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণীতে লেখাপড়ার পাশাপাশি কোনাবাড়ি পারিজাত এলাকায় আপন ফুফাতো ভাই মো. ইব্রাহিমের সঙ্গে থাকতেন হৃদয়। কোনাবাড়ি-কাশিমপুর সড়কে তারা দু’জনই অটোরিকশা চালাতেন। আন্দোলন চলার সময় একটি দোকান ঘরে আশ্রয় নেওয়া হৃদয়কে ধরে নিয়ে প্রকাশ্যে গুলি করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত হৃদয়ের ফুফাতো ভাই ইব্রাহিম বাদী হয়ে কোনাবাড়ি থানায় সোমবার (২৬ আগস্ট) রাতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় দৈনিক সমকালের কালিয়াকৈর প্রতিনিধি এম তুষারীসহ আরো ৩ সাংবাদিককে আসামি করে তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা জানান, মামলার বাদী ইব্রাহিম ওই এলাকার না হওয়ায় তিনি কোনো আসামিকেই চেনেন না। তার সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি চক্র ৫ সাংবাদিকের নামে মামলায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন।

মামলায় সমকালের কালিয়াকৈর প্রতিনিধি এম তুষারী ছাড়াও আসামি করা হয়েছে বাংলা টিভির গাজীপুর প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম, সকালের সময়ের কোনাবাড়ি প্রতিনিধি মোকলেছুর রহমান, ভোরের ডাকের গাজীপুর প্রতিনিধি এম এম মমিন রানা, দৈনিক আজকালের কন্ঠের গাজীপুর প্রতিনিধি মোঃ কবির হোসেনকে। এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হককে।

এছাড়া উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান, জিসিসির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমসহ ৫৭ জন। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ২৫০-৩০০ জনকে।

মামলার বাদী এজাহারে বলেছেন, আমি এবং আমার মামাতো ভাই দুইজনই গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর কোনাবাড়ী রোডে অটো রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতাম। আমিসহ আমার মামাতো ভাই মো. হৃদয় (২০) গত ৫ আগস্ট নগর এঞ্জেল গেইট সংলগ্ন রাস্তার ওপর অবস্থান করছিলাম। ওই সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র জনতা কোনাবাড়ী থেকে কাশিমপুর রোডে অবস্থান করিয়া সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দাবিতে স্লোগান দেয়।

ওই সময় সাবেক মুক্তিযোদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের নির্দেশে অজ্ঞাতনামা ২৫০-৩০০ জন সন্ত্রাসীরা ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। এসময় আমার মামাতো ভাই মোঃ হৃদয় প্রাণ ভয়ে পাশের একটি দোকানে আশ্রয় নেয়। এর কিছুক্ষণ পরেই অজ্ঞাতনামা পুলিশ সদস্যরা হৃদয়কে দোকান থেকে জোরপূর্বক টানা হেঁচড়া করে রাস্তার ওপরে নিয়ে যায়। পরে তাকে পুলিশ সদস্যরা ঘেরাও করে আগ্নেয়াস্ত্র পেটের মধ্যে ঠেকিয়ে গুলি করে নির্মম ভাবে হত্যা করে লাশ গুম করে। যা আমি ও আমার আশপাশের লোকজন ভিডিও ধারণ করি।

সকালের সময়ের কোনাবাড়ি প্রতিনিধি মোকলেছুর রহমান বলেন, আমি কোনাবাড়ী প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি, কোনাবাড়ি এলাকায় আমার বাড়ি। পূর্বে প্রকাশিত কোনো সংবাদের জের ধরে কেউ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তার নামসহ অন্য সংবাদকর্মীদের নাম জড়িয়ে দিয়েছে। হৃদয় কিভাবে নিহত হয়েছে এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিলো, সেখানে স্পষ্ট দেখা যায় পুলিশ গুলি করেছে। সেখানে সাংবাদিকদের নাম কেনো আসলো? গুলি করলো পুলিশ, আসামী কেনো আমরা?

গাজীপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রিপন শাহ বলেন, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে সাংবাদিকদের নাম মামলায় জড়ানো হয়েছে। দ্রুত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানান তিনি।

এব্যাপারে কথা বলার জন্য মামলার বাদি ইব্রাহীমের মোবাইল ফোনে বারবার ফোন দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

এবিষয়ে গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার বলেন, সাংবাদিকদের নামে এমন মামলার তীব্র নিন্দা জানাই। প্রকৃত অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনা হোক। একটি চক্র সাংবাদিকদের সাথে সম্পর্ক বিনষ্ট করার চক্রান্ত করে মিথ্যে মামলা দিচ্ছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মো. জিয়াউল হক বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ ছাড়া কোনো আসামিকে হয়রানী করা হবে না।

এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আহামারুজ্জামান বলেন, কেউ দায়ী না থাকলে তাকে গ্রেফতার করা হবে না। তদন্ত করে দায়ীদেরকে গ্রেফতার করা হবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!