কারাবন্দি বগুড়ার চার আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুর পর এবার গুরুতর অসুস্থ সাবেক এমপি রাগেবুল আহসান রিপুকে ঢাকায় স্থানান্তর করেছেন কারা কর্তৃপক্ষ। গত বুধবার রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রিপু বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বগুড়া-৬ সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থানের পর বগুড়ার বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাসহ ১৩টি মামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বগুড়া জেলা কারাগারের জেল সুপার ফারুক আহমেদ জানান, কারাগারে হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করেন সাবেক এমপি রিপু। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সযোগে প্রথমে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বুধবার সন্ধ্যায় তাঁকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে হস্তান্তর ও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে পাঠানো হয়।
জানা গেছে, ২০১৩ সাল থেকে হার্টের সমস্যায় ভুগছেন রিপু। তাঁর হার্টের দুটি রক্তনালিতে ২৫ শতাংশ ও ৩০ শতাংশ ব্লক ছিল। হার্টের সমস্যাজনিত কারণে তিনি থাইল্যান্ডে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁর উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস রয়েছে।
এদিকে, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দি বগুড়ার চার আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে কারাগারে অব্যবস্থাপনা ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগ করা হয়েছে। সবশেষ কারাবন্দি হয়ে পাঁচদিনের মাথায় সাবেক এমপি রাগেবুল আহসান রিপু অসুস্থ হন।
সুত্র জানায়, জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার আন্দোলনে হামলা ও গুলিবর্ষণ করে গণহত্যাসহ ১৩ মামলার আসামি হন আওয়ামী লীগের এই সাবেক সাংসদ। গত ৪ ও ৫ আগস্ট বগুড়া শহরের শিববাটি এলাকায় রিপুর বাসায় দু`দফা ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়। চারমাস ১৫দিন আত্মগোপনে থাকার পর গত ১৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ এলাকা থেকে রিপুকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বগুড়ার বিভিন্ন থানায় দলটির অসংখ্য নেতাকর্মীদের নামে হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে বেশ কয়েকটি মামলা হয়। গ্রেপ্তার এড়াতে নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে আছেন।
র্যাব-১২ বগুড়ার কোম্পানি কমান্ডার আবুল হাশেম সবুজ জানান, ২০২৩ সালের উপনির্বাচন ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দু`বার আওয়ামী লীগ থেকে এমপি হয়েছিলেন রাগেবুল আহসান রিপু। জুলাই-আগস্টে বগুড়া সদর থানা এলাকায় ছাত্র জনতার ওপর হামলা, গুলিবর্ষণ ও কুপিয়ে ৯জনকে হত্যা করা হয়। আহত হন অন্তত দুই শতাধিক ছাত্র জনতা। এসব ঘটনায় রিপুর বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় হত্যাসহ ১৩টি মামলা দায়ের হয়। তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে ছদ্মবেশে নেত্রকোনা ছিলেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর গত ১৯ ডিসেম্বর কারাগারে পাঠানো হয়।
সুত্র জানায়, কারাবন্দি অবস্থায় হার্ট অ্যাটাকের পর গত ২৬ নভেম্বর মারা যান বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শাহাদত আলম ঝুনু (৫৭)। ২৫ নভেম্বর মারা যান শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ (৬৭)। এর আগে ১১ নভেম্বর মারা যান বগুড়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম রতন (৫৮)। ৯ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও দুর্গাহাটা ইউনিয়ন পরিষদের একাধিকবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান আবদুল মতিন মিঠু (৬৫)।কারাগারে অব্যবস্থাপনা ও কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগ ওঠায় তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রশাসন।
বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা জানান, একমাসে কারাবন্দি চারজনের মৃত্যুর সঠিক কারণ তাঁর জানা নেই। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে কারণ জানা যাবে। যদি কারা কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে আসামিদের মৃত্যু হয়, অবশ্যই তাদের শাস্তি ভোগ করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :