মাদারীপুরে শিবচরে প্রতারকের ফাঁদে নি:স্ব ৫ শতাধিক মানুষের পরিবার। কয়েকশ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা শাহীন জমাদ্দার নামের এক ইট ব্যবসায়ী। এক লাখ টাকায় প্রতিমাসে ১৬ হাজার টাকা লাভের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় গ্রাহকদের। সেই সাথে বিশ্বাস অর্জন করতে প্রত্যেক গ্রাহককে লিখিত দেয়া হয় তিনশ টাকার টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পেও। অভিনব কায়দায় কয়েকটি গ্রামের ৫ শতাধিক মানুষের কাছ থেকে কয়েকশ কোটি টাকা সংগ্রহ করে লাগাত্তা ৫ম শ্রেণি পড়ুয়া এক প্রতারক। ইটের ব্যবসায় বিনিয়োগ করে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্নের ফাঁদে পা দিয়ে এখন নি:স্ব অসহায় মানুষগুলো। মাদারীপুরের শিবচরের এ ঘটনার বিচার চেয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। শিবচর পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের নলগোড়া গ্রামের বাচ্চু হাওলাদার, রুমি ডালী, সরাফ উদ্দিন মৃধা, রাখেন মোল্লা। এদের কেউ অ্যানচালক-কৃষক, কেউবা সরকারি চাকরিজীবী, কেউবা মুদি ব্যবসায়ী। ইটের ব্যবদায় বিনিয়োগ করে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে এখন সবকিছু খুইয়ে নি:স্ব তারা। প্রতারণার শিকার এক নারীর রয়েছে দেড় কোটি টাকা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা গেছে, শিবচর পৌরসভার নলগোড়া গ্রামের হবি জমাদারের ছেলে শাহীন জমাদার ইটের ব্যবসায় বিনিয়োগের লোভ দেখিয়ে কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৫শ মানুষের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন কোটি কোটি টাকা। প্রথম ২/৩ মাস এক লাখ টাকায় ১৬-১৮ হাজার টাকা লাভ দেন শাহীন। বিশ্বাস অর্জন করতে স্ট্যাম্পে প্রত্যেককেই লিখিতও দেন। এরপর শুরু করেন টালবাহানা। একপর্যায়ে গত ২৭ নভেম্বর রাতের আঁধারে বাড়ি-ঘরে আঁধারে বাড়ি-ঘরে তালা দিয়ে স্ত্রী- সন্ধান নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন অভিযুক্ত শাহীন। বিষয়টি জানতে পেরে পামীনের ঘরবাড়ি ভাঙচুর চালায় বিষ্ণুতরা । এ ঘটনার বিচারের পাশাপাশি পাওনা টাকা আদায়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত দিয়েছেন কয়েকজন ভুক্তভোগী। এদিকে এ ব্যাপারে আইনগত সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
আরো জানা গেছে, ইটের ব্যবসায়ী না হলেও ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া শাহীন জমাদার গত ৪ বছর ধ ধরে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে অভিনব কায়দায় হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। এই প্রতারণার হাত থেকে বাদ যায়নি শাহীনের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনও। এক একজন মানুষের কাছ থেকে লাখ টাকা থেকে শুরু করে ৫০-৭০ লাখ টাকাও সংগ্রহ করেছেন। এমন বড় অঙ্কের টাকা দেয়া মানুষের সংখ্যাও অনেক বেশি।
ভুক্তভোগী রুহি ঢালী বলেন, আমি আমার মেয়ের কাছ থেকে এনে ও ব্যক্তিগতভাবে ৯ লাখ টাকা শাহীনের হাতে তুলে দেই। লাভসহ আমার ১৮ লাখ টাকা হয়। এখন টাকা পরিশোধের সময় এসেছে ঘরবাড়ি ছেড়ে শাহীন পালিয়ে গেছে। সরাফ উদ্দিন মৃধা বলেন, দুই-তিন বছর ধরে শাহীন এভাবেই এলাকায় বাবসা করে আসছে। এলাকার মানুষকে প্রথম কয়েক মাসে লাভের কিছু অংশ দিয়েছে, সেই লোভে পড়েই আমাদের এই মশা। আমাদের বলেছে প্রতি লাখে ৬ মাস পর পর ৯০ হাজার
টাকা করে লাভ দিবে। আমার মেয়ের টাকা, আমার ভাগ্নের টাকাসহ মোট ৩০ লাখ টাকা দেই। তারপর আর কোনো খবর নেই শামীনের। আরেক ভুক্তভোগী রাসেল মিয়া বলেন, কাউকে ইটের ব্যবসা দেখাইছে, কাউকে কয়লার ব্যবসায় বিনিয়োগের কথা বলেছে। প্রথমে কয়েকজনকে এই লাভের টাকা দিয়েছে। পরে বিশ্বাস করে বহু মানুষ শাহীনের ইটের ব্যবসায় লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে। গ্রামের মানুষগুলোকে নিঃস্ক করে দিয়ে চলে গেছে শাহীন।
নলগোড়া গ্রামের বাচ্চু হাওলাদার বলেন, আমার মেয়ের জামাই সৌদি আরবে দুর্ঘটনায় মারা যায়, সৌদি আরব থেকে আর্থিক সহযোগিতার পাওনা টাকা ও আমার টাকাসহ মোট ৭০ লাখ টাক্য নেই। লাভের জন্য আমি এতগুলো টাকা দিয়ে এখন পথের ফকির।
শাহীনের বিচার দাবি করছি, সেইসাথে আমাদের সবার পাওনা টাকাও ফেরত চাচ্ছি। মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ভাস্কর সাহা বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা অভিযুক্ত শাহীন জমাদার। তার ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। ভূক্তভোগীরা এখনো মামলা করেননি। মামলা রেকর্ডভুক্ত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন আক্তার বলেন, গ্রামের সহজ সরল মানুষ লোভে পড়ে এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। টাকা লেনদেনের আগে অবশ্যই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব বিবেচনা করা উচিত। তা হলেই এমন প্রতারণা হওয়ার সম্ভবনা কম থাকবে।
আপনার মতামত লিখুন :