গত ১৩ অক্টোবর রূপালী বাংলাদেশের অনলাইন ভার্সনে "নান্দাইলে নরসুন্দা নদী দখল করে পাথর ব্যবসা" শিরোনামে খবর প্রকাশের পর পাথর ব্যবসা বন্ধ করেছেন নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিবেশ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপ-পরিচালক মোঃ মেজবাবুল আলম।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) নান্দাইল উপজেলার মুশুলী ইউনিয়নের তারেরঘাট বাজার সংলগ্ন এলাকায় উপস্থিত হয়ে নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে পাথর নামানোর কার্যক্রম বন্ধ করা হয় এবং পরবর্তীতে এ কার্যক্রম না চালানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়।
কয়েক যুগ ধরে ইজারাবিহীন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদী দখল করে শত শত কোটি টাকার পাথর আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা করছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এতে বাণিজ্যিক সুবিধা বাড়লেও সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।
অপরদিকে, নদীতে পাথরের স্তূপ ফেলে রাখায় পানি প্রবাহের স্বাভাবিক গতিধারা বন্ধ হয়ে পড়েছে। পাথর সরানোর জন্য প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা কর্ণপাত করছেন নাা স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা।
ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের পাশে নান্দাইল উপজেলার মুশুলী ইউনিয়নের তারেরঘাট বাজার সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিকভাবে পাথর ব্যবসা। এখানে ব্যবসায়ীরা সিলেট, সুনামগঞ্জ, ছাতকসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বড় বড় নৌকা দিয়ে নদীপথে পাথর আনেন। অনেকে পাথর নরসুন্দা নদীর তীরে স্তূপ করে রাখেন। কেউ কেউ রাখেন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি ভাড়া নিয়ে। আবার কেউ কেউ রাখেন মহাসড়কের দু’পাশে থাকা সড়ক ও জনপথের জায়গায়৷
বর্ষাকালে একেকটি নৌকায় ৮ থেকে ১০ হাজার ফুট পাথর বহন করে এখানে নিয়ে আসা হয়। বর্ষা মৌসুমে এখানে ৫ থেকে ৬ শতাধিক শ্রমিক কাজ করেন। পাথর ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এখানে চালু হয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের শাখা। পাথর ব্যবসা ঘিরে প্রায় ১০০ ব্যবসায়ী নিয়ে এখানে গড়ে উঠেছে একটি পাথর ব্যবসায়ী সমিতিও।
গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন আকারের পাথর এখান থেকে সরবরাহ করা হয়। ক্রাশিং মেশিনের মাধ্যমে পাথর ভেঙে বিক্রি করা হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র ছাড়াই পাথর ভাঙার মেশিনের (ক্রাশিং মেশিন) দেদার ব্যবহার চলছে। এতে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, তেমনি শব্দদূষণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
পাথর বহনকারী ছোট-বড় প্রতিটি নৌকা থেকে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নেয় পাথর ব্যবসায়ী সমিতি।
কথা হলে বেশ কয়েকজন পাথর ব্যবসায়ী জানান, এ ক্ষেত্রে সরকারি ইজারা ডাকের ব্যবস্থা করলে ভালো হতো। এখানে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে পাথরের ব্যবসা।
এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কৃষ্ণ পাল বলেন, নরসু্দা নদী দখল করে পাথর ব্যবসার উপর বেশকিছু পত্রিকা ও অনলাইনে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর নরসুন্দা নদীর তীরবর্তী গড়ে ওঠা পাথরের ব্যবসার স্থান পরিদর্শন করেছি।
এসময় নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে পাথর নামানোর কার্যক্রম বন্ধ করা হয় এবং পরবর্তীতে এ কার্যক্রম না চালানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ক্রাসিং মেশিন চালানোর স্বাস্থ্যগত ঝুকি সম্পর্কে শ্রমিকদের অবহিত করা হয় এবং ক্রাসিং মেশিনগুলো বন্ধ করা হয়। পুনরায় পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক কাজ পরিলক্ষিত হলে, সরকারী নিয়ম লঙ্ঘনের দায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :