বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, নির্ধারিত বায়ুমানের চেয়ে ১৩৬% দূষিত বায়ু নির্গত হয় ইটভাটার ধোঁয়া থেকে। এসব ধোঁয়া পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলছে শিশু, বৃদ্ধ ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের। নাটোরের জেলার লালপুর উপজেলার সিরাজীপুর মন্জিল পুকুর, সাদিপুর, এলাকায় সুপার ইটভাটা গুলো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইটভাটা গড়ে উঠেছে সংরক্ষিত বন আর গোপালপুর নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ১/২ অংশ রয়েছে। এতে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য ও দৈহিক বৃদ্ধিতে পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। এছাড়া এ সব ইটভাটায় আইন অমান্য করে চলছে শিশু শ্রমও।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, `আমাদের গ্রাম অঞ্চলের শিশুরা তেমন উন্নত মানের খাবার পায় না, ভালো পরিবেশ পায় না। ছেলে-মেয়েগুলো লম্বা হচ্ছে না। ওদের বৃদ্ধিটা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
`ইটভাটার শিশু শ্রমিক বলেন, `সপ্তাহে দুই হাজার থেকে তিন হাজার মতো বিল করি। ইটের গাড়ি টানি আবার আব্বার সাথে পাকা ইটে সাহায্য করি।
`লালপুরে ৪৯টি ইটভাটা থাকলেও বেশিরভাগেরই নেই লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। অনেক ইটভাটায় ইটপ্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন করে আইন অমান্য করে কয়লা ব্যবহারের পরিবর্তে ব্যবহার করছে বনের গাছ। এছাড়া নদীর চরের মাটি কেটে ব্যবহার করা হচ্ছে ইটভাটায়। ফলে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ পরিবর্তনের পাশাপাশি হুমকিতে পড়ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও নদীর নানা প্রজাতির জলজ প্রাণী।
এ ব্যাপারে সুপার ইটভাটার ম্যানেজার বলেন, নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল কর্তৃক মামলার বিষয়টি আমার জানা নেই, `আগের পেপার সাবমিট করে এবং সরকারি টাকা পরিশোধ করেছি কিন্তু এ বছর বছরের নব্য নবায়নকৃত ছাড়পত্র দেখাতে পারেননি।
`এদিকে, ইট পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত যানবাহনের কারণে জেলার অনেক রাস্তাঘাটই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। আর ফসলি জমিতে ভাটা পরিচালনায় ব্যাহত হচ্ছে কৃষি উৎপাদনও। অবৈধ ইটভাটার এমন দৌরাত্ম্য ও পরিবেশ বিপর্যয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দুষছেন সচেতন মহল।
পথচারীরা বলেন, `আম গাছ, জাম গাছ, সুপারি গাছ একটারও মাথা নেই, সব গাছ ধ্বংস হয়ে গেছে। `পরিবেশ অধিদপ্তর এবং প্রশাসনের যারা আছেন তারা আসলে উদাসীন, যে যেভাবে পারছে লুটপাট করুক, পরিবেশের বির্পযয় ঘটুক, মানুষ ধ্বংস হয়ে যাক, আমাদের ক্ষতি হোক এতে কারো কিছু যায় আসছে না।
`তবে নাটোৱ জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন জানান, সকল অবৈধ ইটভাটা বন্ধ ও পরিবেশ দূষণ রোধে নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
অনুমোদনবিহীন কেউ থাকলে অবশ্যই সেইগুলোর বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত থাকবে। আমরা যেন এই ইটভাটাগুলোকে নিয়মের মধ্যে রাখতে পারি। `মৌসুমে নাটোরের এক একটি ইট ভাটায় পোড়ানো হয় অন্তত ৩ হাজার টন গাছ। এমন দৌরাত্ম্য বন্ধে এখনই পদক্ষেপ না নিলে মারাত্মক হুমকিতে পড়বে উপকূলীয় খাদ্য উৎপাদন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ।
আপনার মতামত লিখুন :