ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

তানোরে ল্যাপটপ উদ্ধার, চুরি নিয়ে রহস্য

তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৪, ১০:৩৪ পিএম

তানোরে ল্যাপটপ উদ্ধার, চুরি নিয়ে রহস্য

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রাজশাহী: রাজশাহীর তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়ন ইউপির হাতিশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের ল্যাব ঘর থেকে চুরি হওয়া সাতটি ল্যাপটপ উদ্ধার হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই। বুধবারে স্কুল থেকেই উদ্ধার হয় পাঁচটি ল্যাপটপ, এর আগে রবিবার স্কুলের ফাকা হাউজে রাখা হয়েছিল। স্কুল সংস্কার করা কাজের চারজন মিস্ত্রি ল্যাপটপগুলো চুরি করে বলে দুজন মিস্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে শিকার করে নাম বলার পর তাদেরকে ছেড়ে দেয় প্রধান শিক্ষক আয়নাল হক। তারা ট্রাকে করে বিভিন্ন মালমাল নিয়ে নাটোর জেলার উদ্দেশ্য রওনা দেয়। চুরির ঘটনা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। কারন যদি মিস্ত্রিরা চুরি করে তাহলে কেন ছেড়ে দেয়া হল। আবার চুরির ঘটনায় থানায় মামলা না করে অভিযোগ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক  কেন। তাহলে কি স্কুলের কেউ জড়িত নাকি নিজেরাই এমন ঘটনা ঘটিয়ে অন্যদিকে ধামাচাপা দেয়ার চেস্টা করছেন।এতে করে চুরির ঘটনা টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সরেজমিন তদন্ত দাবি করেছেন। 

সরেজমিনে দেখা যায়, হাতিশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের সব গেট বন্ধ করে মেম্বারসহ শিক্ষকরা দুজন মিস্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। স্কুলের মাঠে মাল বোঝাই মিনি ট্রাক দাড়িয়ে আছে। স্কুলের ভিতরে অফিস কক্ষের চেয়ারে পাঁচটি ল্যাবটব ও টেবিলের উপরে ব্যাগে মাউচসহ কিছু তার রাখা আছে। সেই ব্যাগ নিয়ে বের হওয়ার সময় সন্দেহ হলে শিক্ষকরা তল্লাশি শুরু করেন। তল্লাশির পর ব্যাগে মাউচসহ তার পেয়ে তাদেরকে আটকে দেয়। 

স্কুলের অফিস সহকারী মাসুদ জানান, ল্যাপটপ চুরি হওয়ার পর থেকে মিস্ত্রি দেরকে সন্দেহ করা হয়েছিল। যে চারজন মিস্ত্রি চুরি করে তারা গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ল্যাবটবগুলো স্কুলে রেখে দুজন মিস্ত্রীকে বলে যায়। আমরা স্কুল থেকে স্কুলে থাকা দুজন মিস্ত্রী কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তারা শিকার করছিল না। দুপুরের পরে তারা শিকার করেন দুজন গোদাগাড়ী উপজেলার ও দুজন নাটোর জেলার মিস্তিরা চুরি করেছে। যেহেতু চোরের নাম বলেছে এজন্য এদুজনকে ছেড়ে দেয়া হয়। চোরদের নাম চাইলেও দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারী মাসুদ।

মেম্বার বুলু জানান, চুরি হওয়ার পর থেকে স্কুল সংস্কার কাজের ঠিকাদারকে বলা হয়। ঠিকাদার মিস্ত্রি দের মোবাইল ট্যাগ করে চুরির বিষয়ে নিশ্চিত হন।

প্রধান শিক্ষক আয়নাল হক জানান, চুরি হওয়া ল্যাপটপ পাওয়া গেছে এটাই অনেক বড় ব্যাপার। ঠিকাদারের সাথে কথা হয়েছে সে বৃহস্পতিবারে এসে সমাধান করবে। বাকি দু মিস্ত্রি কে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়ার কারনকি জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে চুপ থাকেন। এঘটনায় মামলা করা হয়েছে কি প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলেন অভিযোগ দেয়া হয়েছিল। 

স্থানীয়রা জানান,  মিস্ত্রিরা দীর্ঘ প্রায় তিন মাস ধরে কাজ করছেন। তারা তো অনেক আগেই চুরি করত। আবার তারা যদি চুরি করে থাকে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে ছেড়ে দেয়া হল কেন। অবশ্যই চুরির মধ্যে রহস্যের গন্ধ আছে। সরকারি ল্যাপটপ চুরি হয়েছে মামলা না করে অভিযোগ কেন। হয়তো প্রধান শিক্ষকের কোন অনুসারীরা জড়িত থাকতে পারে। বিষয়টি নিয়ে সরেজমিনে তদন্তের দাবি জানান তারা। 

আবার যে দুজন মিস্ত্রী ছিল তাদেরকে মারা হয়েছে। মারপিট করে শিকারোক্তি নিয়ে ঠিকাদারের কথামত ছেড়ে দেয়া হল। ঠিকাদার যদি না আসে তাহলে কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে এমনও প্রশ্ন জনসাধারণের। সব গেট বন্ধ করে নিজেরাই সবকিছু করে ছেড়ে দিয়েছে। তারা যদি চোরের নাম করে তাহলে এদুজন মিস্ত্রি কিভাবে ছাড় পায়। সবকিছুর হোতা প্রধান শিক্ষক ও মাসুদ। তারা ঘটনা ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন।

বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় রাজনৈতিক বিবেচনায় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ পান আয়নাল হক। তার সনদেও সমস্যা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। টাকার বিনিময়ে সব সমস্যা দূর করেছে আয়নাল।  

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মিস্ত্রি দেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ছেড়ে দিলে বুঝতে হবে প্রধান শিক্ষকের ইন্ধন আছে। চুরি ও উদ্ধার হওয়ার পর প্রধান শিক্ষক অবিহিত করেনি। সে একজন গোড়া ব্যক্তি নিজে যেটা বুঝে সেটাকেই সঠিক মনে করে। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী (তানোর) শরিফুল ইসলামের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, চুরি হওয়া ল্যাপটপ উদ্ধার হয়েছে। চোরের বা ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্তের বিষয়ে কিছু বলা যাবে।

ঠিকাদার সোহেলের ০১৭৩০১৭৮৪৪৮ মোবাইল নম্বরে ফোন দেয়া হলে একজন রিসিভ করে বলেন ভাই বাহিরে আছে। তার পরিচয় জানতে চাইলে সে জানায় আমি তার ম্যানেজার।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও মোস্তাফিজুর রহমানকে মোবাইলে বিষয়টি অবহিত করা হলে তিনি জানান, এমন ঘটনা ঘটে থাকলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!