ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪

টার্গেট করে ছিনতাই-লুট, হাতে মরিচের গুঁড়া

নজরুল ইসলাম দয়া, বগুড়া

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৪, ০৪:১০ পিএম

টার্গেট করে ছিনতাই-লুট,  হাতে মরিচের গুঁড়া

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

আন্তঃজেলা অপরাধী চক্রের টার্গেট ভোর, সকাল, দুপুর ও মধ্যরাত। গ্রামীণ সড়কে চলে তাদের দৌরাত্ম। সুযোগ বুঝে লুটে নেয় ইজিবাইক, অটোভ্যান, অটোরিকশা, গরু এবং মোটরসাইকেল। ছিনতাই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে মরিচের গুঁড়া ও চেতনানাশক ওষুধ। চক্রের সদস্যের মধ্যে আছে নারী। মূলত তাদের মাধ্যমেই নজরদারি ও ফাঁদে ফেলে আন্তঃজেলা অপরাধীরা। তারা পেশা হিসেবে চুরি-ছিনতাই টিকিয়ে রেখেছে। বগুড়া সদর, শেরপুর ও কাহালু উপজেলায় পুলিশের অভিযানে সাত অপরাধী গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানা গেছে।

মঙ্গলবার শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম পলাশ জানান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বগুড়ার পুলিশ সুপার মো. জেদান আল মুসা পিপিএম‍‍`র নির্দেশনায় নিয়মিত অভিযান চলছে। পুলিশের সব ধরনের কার্যক্রমে গতি ফিরেছে, গ্রেপ্তার হচ্ছে অপরাধীরা। মহাসড়ক ও গ্রামীণ সড়কে ছিনতাই-ডাকাতি ঠেকাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

গত রোববার শেরপুর থানা পুলিশের অভিযানে ধরা পড়েছে আন্তঃজেলা অপরাধী চক্রের তিন সদস্য। উদ্ধার করা হয়েছে চুরি হওয়া ইজিবাইক, অটোরিকশা ও অটোভ্যান। শহরের উত্তর সাহাপাড়া এলাকা থেকে দুইজন এবং শিবগঞ্জ উপজেলার হাজারবাড়ি এলাকা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলো- শেরপুর উপজেলার সেরুয়া দহপাড়া এলাকায় রুবেল আহমেদের ছেলে মনির হোসেন, পৌর শহরের উলিপুরপাড়া এলাকার জুয়েল রানার ছেলে আবু জাফর ও শাজাহানপুর উপজেলার ভান্ডার পাইকপাড়ার আবু তালেবের ছেলে আবু হানিফ সোহাগ।

শেরপুর থানার ওসি জানান, তারা আন্তঃজেলা চোর চক্রের সক্রিয় সদস্য। চুরি-ছিনতাই করা তাদের পেশা। চুরির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বগুড়ার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত ১০ অক্টোবর দুপুরে শেরপুর উপজেলার আন্দিকুমরা এলাকা থেকে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় থানার উপ-পরিদর্শক রবিউল ইসলাম ওই চক্রের সদস্যদের সনাক্ত করেন।

অন্যদিকে বগুড়া সদরে চালকের চোখে গুঁড়া মরিচ ছিটিয়ে মারধর করে ইজিবাইক ছিনতাইয়ের ঘটনায় ধরা পড়েছে এক অপরাধী। ছিনতাইয়ে জড়িত মনির হোসেন কাহালু উপজেলার নারহট্ট দরগাহাট এলাকার কামরুজ্জামানের ছেলে। গত শুক্রবার রাতে তাকে গ্রেপ্তারের পর সদর এলাকার দশটিকা থেকে ইজিবাইক উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন সদর থানার ওসি এসএম মঈনুদ্দীন।

পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে যাত্রীর জন্য সদরের বারোপুর সড়কে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক নিয়ে অবস্থান করছিলেন চালক জনি মিয়া। এ সময় যাত্রীবেশে তিন ছিনতাইকারী নেংড়া-বাজারে যাওয়ার কথা বলে ৩০ টাকায় সেই ইজিবাইক ভাড়া করে। রাত পৌনে ১০টার দিকে নুনগোলা ডিগ্রি কলেজের কাছে পৌঁছালে যাত্রীবেশে থাকা তিন ছিনতাইকারী চালক জনির গলায় চাকু ধরে থামতে বাধ্য করে। চালক চিৎকার দিলে ছিনতাইকারীরা তাকে কিলঘুসি মারতে থাকে। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে চালক জনি মিয়ার চোখে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে দেয় অপরাধীরা। চালককে মারধর করে আমবাগানে ফেলে রেখে ইজিবাইক নিয়ে চক্রটি চলে যায়।

এদিকে, চুরি-ছিনতাই চক্রে নারীর সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। কাহালু উপজেলায় ইজিবাইক ছিনতাই ঘটনায় নারীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলো- শাজাহানপুর উপজেলার ডোমনপুকুর গ্রামের অঞ্জনা আক্তার মুক্তি, বগুড়া সদর উপজেলার মহিষবাথান গ্রামের মনসুর প্রামাণিক ও স্বপন ইসলাম সাগর। ইজিবাইক নিয়ে পালানোর সময় এই তিনজনকে হাতেনাতে ধরে স্থানীয় জনতা। গত ১১ অক্টোবর দিবাগত রাতে কাহালু উপজেলার দেওগ্রাম-তালোড়া সড়কে এ ঘটনা ঘটে। ছিনতাই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে নারীসহ তিনজনকে বগুড়ার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কাহালু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুজ্জামান জানান, এরুইল বাজারে ইজিবাইক নিয়ে যাত্রীর জন্য অবস্থান করছিলেন চালক মিনহাজ। তিনি নাটোরের সিংড়া উপজেলার বাসিন্দা। কাহালুর তালোড়া যাওয়ার কথা বলে ইজিবাইকে ওঠে অজ্ঞান পার্টির চার সদস্য। তারা দেওগ্রাম-তালোড়া সড়কের মাঝামাঝি আসার পর কৌশলে ইজিবাইক চালককে চেতনানাশক ওষুধ পান করায়।

ওসি আরও জানান, চালক অজ্ঞান হয়ে পড়লে ইজিবাইক নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে অপরাধীরা। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি বুঝতে পেরে নারীসহ তিনজনকে আটক করলেও একজন পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদেরকে হেফাজতে নেয়। এ ঘটনায় ইজিবাইক চালক মিনহাজের বড় ভাই বাইজিদ হোসেন বাদী হয়ে কাহালু থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

আরবি/জেডআর

Link copied!