ঢাকা শনিবার, ০২ নভেম্বর, ২০২৪

বিদ্যালয়ের নামাজ কক্ষে সংসার পেতেছেন শিক্ষক দম্পতি

বরগুনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৪, ০৮:২৯ পিএম

বিদ্যালয়ের নামাজ কক্ষে সংসার পেতেছেন শিক্ষক দম্পতি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বরগুনার আমতলী উপজেলায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামাজ পড়ার কক্ষে সংসার পেতেছেন শিক্ষক দম্পতি। ঘুমানোর জন্য ও খাবারের টেবিল হিসেবে ব্যবহার করছেন ছাত্র ছাত্রীদের পাঠ দানের বেঞ্চ, ব্যবহার করছেন বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ। ঘটনা আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর পূর্ব তক্তাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এসকল অভিযোগ বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক  শাজাহান তালুকদার ও তার স্ত্রী একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা তাছলিমা আক্তারের বিরুদ্ধে।

আমতলীর উত্তর পূর্ব তক্তাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে ২০০৩ সালে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান মো. শাহজাহান তালুকদার। একই বিদ্যালয়ে তার স্ত্রী তাসলিমা আক্তারও দীর্ঘদিন ধরে সহকারী শিক্ষিকা পদে কর্মরত আছেন। মোঃ শাহজাহান প্রধান শিক্ষক হওয়ার পর থেকেই এই শিক্ষক দম্পতির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, টাকা আদায়, সেচ্ছাচারিতা, রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো সহ নানা অনিয়ম- দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে। 

বিগত দিনে এসব অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ এনে এই শিক্ষক দম্পতির পদত্যাগের দাবিও  করছেন বিদ্যালয়টির বর্তমান, প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা। অভিযোগ তুলেছেন কর্তব্যরত শিক্ষকেরাও। কোন অভিযোগই তাকে এসকল কাজ থেকে তাদেরকে বিরত রাখতে পারেনি। বরং হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে অভিযোগকারীদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিক বলেন, প্রধান শিক্ষক শাজাহান তালুকদার ২০০৩ সালে বিদ্যালয়ে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা এবং লেজুড় বৃত্তিক রাজনীতির মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসছে। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে  কোন নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে শিক্ষক দম্পতি বিদ্যালয়ের নামাজের জন্য ব্যবহৃত স্থান দখল করে আছে। সেখানে হাড়ি পাতিল, গ্যাসের চুলা, বিদ্যালয়ের বেঞ্চ দিয়ে খাট বানিয়ে সংসার পেতে বসেছেন। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নস্ট হচ্ছে। নামাজের কক্ষ ব্যবহার করার ফলে শিক্ষক মন্ডলীর নামাজ পড়ার সুযোগ আর থাকলোনা।

তিনি আরও জানান, প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষকসহ সিন্ডিকেট করে নানা অনিয়ম দুর্নীতি শুরু করেন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত পরিক্ষার ফি আদায়, ভুয়া বিল করে টাকা আত্মসাৎ সহ নানা অনিয়ম দুর্নীতি শুরু করেছেন।

তিনি আরো বলেন, এমনকি বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান তলানিতে গিয়ে ঠেকলে ছাত্রছাত্রী ও এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান তালুকদার ও তার স্ত্রীকে অন্যত্র সরিয়ে দেয়া এবং তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছিলো। কিন্তু তৎকালীন সরকারের ক্ষমতাধর জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় থেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে বহাল থেকে নির্বিঘ্নে নিজের অপকর্ম চালিয়ে গেছেন।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান কখনো শ্রেণি কক্ষে পাঠদান করতেন না। এমনকি এসব অনিয়ম নিয়ে এলাকার কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে উল্টো রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে হুমকি-ধমকি ও নানাভাবে হয়রানি করতেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মো. শাজাহান তালুকদার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক। নামাজের কক্ষ দখল করে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ এমন কিছুনা এখানে দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় মাঝে মধ্যে তরকারি গরম করা হয়। প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী সহকারী শিক্ষিকা তাছলিমা আক্তার বলেন, এখানে স্থায়ীভাবে থাকা হয় না, বাচ্চাদের খাবার খাওয়ানো হয়।

আমতলী উপজেলা শিক্ষা অফিসার শফিউল আলম  বলেন, দুপুরে খাবার তৈরি করা হয়, চুলা হারি পাতিল এটা প্রায় স্কুলে রয়েছে। এটা স্থায়ী না।

 এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মাদ আশরাফুল আলম বলেন, আমি বিষয়টি জেনেছি তদন্ত সাপেক্ষে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবু জাফর সালেহ বলেন, বিদ্যালয়ে থাকার কোন সুযোগ নেই। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা গ্রহণ করার জন্য বলা হবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!