ঢাকা মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি, ২০২৫

শিক্ষকের ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর আত্মহত্যার মামলার চার্জশিট দাখিল

রূপসা (খুলনা) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২৫, ০৯:৩৯ পিএম

শিক্ষকের ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর আত্মহত্যার মামলার চার্জশিট দাখিল

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রূপসায় মেধাবী  শিক্ষার্থীকে একই স্কুলের শিক্ষক কর্তৃক প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে  ধর্ষণ করে আত্মহত্যা করার ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে রূপসা থানায় মামলা দায়ের করেন। তদন্ত কর্মকর্তা  শফিকুল ইসলাম হত্যার প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করে দুই শিক্ষক ও শিক্ষকের স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দাখিল করেছেন আদালতে। 

মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, রূপসা উপজেলার নৈহাটি ইউনিয়নের নৈহাটি গ্রামের নুর নাহার ও ফিরোজ মাহমুদ এর একমাত্র মেয়ে ফাইরুজ মাহমুদ নিদ (১৪)  নৈহাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নবম শ্রেণীতে পড়াশোনা করত।

পড়াশোনা কালীন অবস্থায় বাদী তার মেয়েকে বাবার কাছে দেখাশোনা করার জন্য রেখে প্রবাসে যান। বাদীর মেয়ের ভালো ফলাফল করার জন্য বিদ‍্যালয়ের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের নিকট একজন ভালো শিক্ষক দেওয়ার আবেদন জানান। শিক্ষক জাহাঙ্গীর ঠিক করে একই স্কুলের শিক্ষক মাহাবুবকে। শিক্ষার্থী নিদ ও  জান্নাতি এক সাথে পড়াশুনা মাহাবুবের কাছে।

মাহাবুব নৈহাটি এলাকায় স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভাড়াবাড়িতে বসবাস করতেন। নিদ পড়তে না গেলে মাঝে মধ্যে তার বাড়িতে এসে মাহাবুব পড়াতেন। শিক্ষক কাকলি বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থী নিদকে বলতেন রেজাল্ট ভালো করতে চাইলে মাহাবুবের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখো।

শিক্ষক মাহবুবের স্ত্রী সন্তান থাকা সত্ত্বেও অপর শিক্ষক কাকলির সহায়তায় নাবালিকা মেয়ে নিদকে ফুসলাইয়া প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করতে থাকে।  এ সম্পর্ক শিক্ষকের স্ত্রী সোনিয়া মাহাবুব জানার পর নিদকে  অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও তুই মরলে আমার সংসার বাঁচে এমন প্রচারক মূলক কথা বলে নিদকে আত্মহত্যার প্ররোচিত করে।

শিক্ষক মাহাবুব পূর্ব পরিকল্পিতভাবে অবৈধ যৌন খায়েস পূরণের লক্ষে উক্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা তার কথিত বান্ধবী কাকলীকে অপকর্ম সহায়তাকারী হিসেবে ব‍্যবহার করে দিনের পর দিন মেধাবী শিক্ষার্থী নিদ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করে আসছে।

শিক্ষক কাকলি মাহবুব মাষ্টারের সাথে নিদের চরিত্রের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক তৈরি সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে বলে প্রমাণিত হয়।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ক বিদ্যালয়ে জানাজানি হলে গত ২১-০৭ ২৪ তারিখ স্কুল ছুটি শেষে স্কুলের মাঠে কাকলি নিদকে মানসিকভাবে চাপ প্রয়োগ করে বলে  মাহাবুবের সাথে সম্পর্ক না রাখার জন‍্য।

এদিকে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের প্রেমের সম্পর্কের ঘটনা  স্ত্রী সোনিয়া মাহবুব জানায়, মানসিক চাপ ও ধর্ষিত হয়ে সম্মান হারানোর ফলে মনকষ্টে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে নিরাশ হয়ে নাবালিকা ফাইরুজ মাহমুদ নিদ নিজের কক্ষে ২৪ /৭/২০২৪ তারিখ বিকাল সাড়ে ৩ ঘটিকা হইতে ৪ ঘটিকার মধ্যে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।

অভিযোগ পত্রে আরো জানা যায়, মামলা দায়েরের পর হত্যার প্রকৃত ঘটনা জানতে পুলিশ মাঠে তদন্ত শুরু করে।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর বিভিন্ন সময় কথা বলার ফোন রেকর্ডিং ও খাতায় লেখা এবং সাক্ষীদের সাক্ষ‍্য প্রমাণ পাওয়া যায়। যে হাতের লেখা পাওয়া যায় এবং কল রেকর্ডিং শোনা যায় তা শিক্ষক মাহাবুব এর ও শিক্ষার্থী ফাইরুজ মাহমুদ নিদের কন্ঠ যা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সত্যতা প্রকাশ করেন।

এদিকে অশ্লীল ভাষায় নোংরা কথাবার্তা বলে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে। যার কারণে (নিদ) বাড়িতে তাহার নিজের হাতে লেখা একটি খাতায় দুটি চিঠি লিখে গিয়েছে। যে লেখা তার নিজের বলে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান।

এছাড়া শিক্ষক মাহাবুব ও শিক্ষক কাকলী গাইন ও শিক্ষকের স্ত্রী সানিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে উক্ত অপরাধ সংগঠনে সহায়তা করার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।

 রূপসা থানার অভিযোগপত্র নং- ১৭৯, তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪।  ধারা -৯(১)৯(ক)/৩০ ধারা, ২০০০ সালের নারী ও  শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩।

আরবি/জেডআর

Link copied!