ঢাকা সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

দাবি আদায়ে বিদ্যালয় ছেড়ে সড়কে আক্কেলপুরের শিক্ষকরা

আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৪, ০৭:২১ পিএম

দাবি আদায়ে বিদ্যালয় ছেড়ে সড়কে আক্কেলপুরের শিক্ষকরা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ


জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে বৈষম্য দূরীকরণে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, শিক্ষা প্রশাসনে সরকারি শিক্ষকদের পদায়ন বন্ধ ও শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের দাবিতে মানব বন্ধন করে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের বেসরকারি স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় উপজেলা পরিষদের সামনে প্রধান সড়কে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নামেন তারা। মানববন্ধনে উপজেলার তিন শতাধিক শিক্ষকরা অংশ নেন। মানববন্ধন চলাকালীন সীমিত পরিসরে ক্লাস কার্যক্রম চালু রেখেছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

মানব বন্ধনে শিক্ষকরা জানান, মাধ্যমিক স্তরের প্রতিষ্ঠানের ৯৭ শতাংশ বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলি জাতীয়করণ করা অত্যন্ত জরুরী। একই শিক্ষাগত যোগ্যতা, একই বই পড়ানো, একই বোর্ডের আওতায় পরীক্ষা অথচ সরকারি ও বেসরকারি নাম দিয়ে আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদার মধ্যে বিরাট বৈষম্য তৈরি করে রাখা হয়েছে যা শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে প্রধান অন্তরায়। শিক্ষার সকল অংশীজনের প্রাণের দাবি মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ। শিক্ষা বিভাগের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো একাডেমিক ও প্রশাসনিক।

এসময় বক্তব্য দেন, উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি কাশিড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিদ্দিকুর রহমান তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক সোনামুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমান ও আক্কেলপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোমিন, সিনিয়র মাদ্রাসার শিক্ষক মেহেদী হাসান, গোপীনাথপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম অপু।

স্মারক লিপিতে বলা হয়েছে, শিক্ষকেরা একাডেমিক কাজে দক্ষ। তাদের সকল প্রশিক্ষণ শিক্ষা বিদ্যা কেন্দ্রিক। ক্লাস রুমের শিক্ষণ-শিখনে তারা দক্ষ। অন্যদিকে শিক্ষা প্রশাসনে দীর্ঘ ৩১ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের সকল প্রশিক্ষণ প্রশাসনিক। শিক্ষকতা ও প্রশাসন ভিন্ন চরিত্রের, ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের, কাজের ধরন ভিন্ন, চর্চা বা অনুশীলন ভিন্ন। শিক্ষকরা প্রশাসনে অনভিজ্ঞ, জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপ-পরিচালক পদে তাঁদের পদায়ন করা হলে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক শূণ্যতা যেমন সৃষ্টি হবে তেমনি ক্লাস রুম শিক্ষকতায় অভিজ্ঞ এরুপ একজন শিক্ষক কে উল্লেখিত পদ সমূহে পদায়ন করা হলে বিভিন্ন বিধি বিধান সম্পর্কে পূর্ব জ্ঞান না থাকার কারণে অফিসের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন অধস্তন পদের লোকজনের পরামর্শ দ্বারাই পরিচালিত হতে হয়। প্রশাসনিক দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে তাদের সমস্যা হয়। এ ছাড়াও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পদে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকগণকে পদায়ন করা হলে প্রশাসনিক অনভিজ্ঞ সিনিয়র শিক্ষকের অধীনে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা প্রধানগণকে কাজ করতে হবে, এতে শিক্ষাঙ্গনে চরম অসন্তোষ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। সে কারণে উপজেলা, জেলা, অঞ্চল ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখায় ৩১ বছর শিক্ষা প্রশাসনে কাজের দক্ষতা সম্পন্ন ৬ষ্ঠ গ্রেড অফিসার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের পদোন্নতি ও পদায়ন, শিক্ষার মাঠ প্রশাসনে কাজ করা দক্ষ, অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত সেসিপ প্রকল্পের জনবল রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের অসমাপ্ত কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার দাবী করেন তারা।

উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও কাশিড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিদ্দিকুর রহমান তালুকদার বলেন, আমরা একই পদে চাকুরী করে সরকারী-বেসরকারী নাম দিয়ে আর্থিকভাবে চরম বৈষম্য করা হয়েছে। আমাদের এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া বাবদ দেওয়া হয়। অথচ দেশের কোথাও এই টাকায় বাড়ি ভাড়া পাওয়া যায় না। মুল বেতনের ২৫ শতাংশ বোনাস দেওয়া হয়। যা দিয়ে আমরা কিছুই করতে পারিনা। সুতরাং সকল বৈষম্য দূর করতে জাতীয়করণ করতে হবে। তাই আমরা দাবি আদায়ে বিদ্যালয় ছেড়ে সড়কে মানব বন্ধন করছি।

সোনামুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমান বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষায় দীর্ঘ দিন থেকে চরম বৈষম্য বিরাজ করছে। শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে আর সকল বৈষম্য নিরসন করতে জাতীয়করণই একমাত্র সমাধান। সীমিত সংখ্যক শিক্ষকদের নিয়ে ক্লাস চালু রেখে দাবি আদায়ে আমরা মানব বন্ধন করছি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুরুল আলম বলেন, মাধ্যমিক স্তরে বৈষম্য দূরীকরণে বেসরকারি শিক্ষকরা মানব বন্ধন করে স্মারকলিপি দিয়েছেন। স্মারকলিপিটি আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করবো।

আরবি/জেডআর

Link copied!