চলনবিল অধ্যুষিত উল্লাপাড়া উপজেলার উধুনিয়ান ইউনিয়নে ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তেলিপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যানিকেতন। বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষগুলোর চাল ও বেড়া সবই টিনের। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে প্রায় ৫শ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। দীর্ঘদিন আগে নির্মিত এই টিনের ঘরগুলোর চালা এবং বেড়া বেশ পুরাতন হয়ে গেছে। ছিদ্র হয়ে গেছে চালের টিন এবং বেড়াগুলোর বেশ কিছু অংশ । গরমের দিনে টিনের চালা ও বেড়ার ঘরে অসহনীয় কষ্ট সহ্য করতে হয় শিক্ষার্থীদেরকে। পাশাপাশি বৃষ্টির দিনে পুরনো টিনের ফুটো দিয়ে পানি পড়ে। ঘরের মেঝে কাঁচা থাকায় বৃষ্টি হলেই কাঁদা জমে যায় নিচে। বিদ্যালয়ের মাঠটি নিচু হওয়ায় বর্ষার দিনে পুরো মাঠে জমে থাকে পানি। ১৯৯৭ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর তিন বছর আগে নিম্ন মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত এমপিও ভুক্ত হয়েছে। বর্তমানে নবম ও দশম শ্রেণি খোলা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার মানও বেশ ভালো।
এই স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মৌ, অভিজিৎ, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রাপ্তি ও মৃত্তিকা জানায়, সময়ের বিবর্তনে দেশ এগিয়ে গেছে অনেক। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়
গ্রাম অঞ্চলেও বেসরকারি স্কুল কলেজের ভবনগুলোর চেহারা পাল্টে গেছে। অনেক স্কুলেই শ্রেণি ভবনগুলো এখন দৃষ্টিনন্দন। অথচ আধুনিকতার ছোয়া লাগেনি আমাদের তেলিপাড়া স্কুলে। পুরনো এবং ভাঙ্গা টিনের ঘরে এখনও আমাদেরকে ক্লাস করতে হচ্ছে। শ্রেণি কক্ষে নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক বৈদ্যুতিক পাখা। গরমে যেমন দুঃসহ অবস্থা দাঁড়ায় পাশাপাশি বৃষ্টির দিনে পুরনো টিনের ফুটো দিয়ে পানি পড়ায় ক্লাসে বসা যায় না। ভিজে যায় বই খাতাপত্র। এ অবস্থায় এই স্কুলে শিক্ষার্থীদের অবর্ণনীয় দুভোর্গ সহ্য করতে হচ্ছে।
বিশেষত, গ্রীষ্মের দিনগুলোতে ক্লাস করা সত্যিই অসম্ভব হয়ে পড়ে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মধুসূদন সরকার জানান, অত্যন্ত গরীব অধ্যুষিত এলাকায় স্কুলটি অবস্থিত। এখানে বেশির ভাগ পরিবার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর। ফলে শিক্ষার্থীর প্রায় অর্ধেকাংশই নৃ-গোষ্ঠীর। বাকিরা মুসলিম ও হিন্দু পরিবারের। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে
অর্থনৈতিক কারনে আজ পর্যন্ত স্কুল ভবনের তেমন কোন সংস্কার সম্ভব হয়নি। পুরনো জং ধরে যাওয়া টিনগুলো ফুটো হয়ে গেছে। ফলে বৃষ্টির দিনে পুরো ভবন জুড়ে পানি পড়ে। ঘরের মেঝে কাঁচা থাকায় বৃষ্টি হলেই কাদা জমে যায় নিচে। এতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা দারুনভাবে বিঘ্নিত হয়। গরমের দিনে টিনের ঘর টিনের বেড়া সেই সাথে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বৈদ্যুতিক পাখা না থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে হাঁপিয়ে ওঠে।
তারপর বিদ্যালয়ের মাঠটি নিচু হওয়ায় বর্ষার দিনে সেখানে পানি জমে থাকে। এতে শিক্ষার্থীদের সমাবেশ করা বিঘ্নিত হয়। প্রায় ২০ বছর ধরে এই স্কুলে পাকা ভবনের জন্য তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু সে আবেদন আমলে নেয়নি শিক্ষা বিভাগ। ফলে এই প্রতিষ্ঠানে পাকা ভবন হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে তারা দুঃখ কষ্ট করছেন। গত বছর এই প্রতিষ্ঠান থেকে ৭০ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই কৃতকার্য হয়েছে। এর মধ্যে ১০জন শিক্ষার্থী পেয়েছে জিপিএ ৫।
এ ব্যাপারে উল্লাপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ,কে,এম শামছুল হকের সঙ্গে কথা বললে, তিনি তেলিপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যানিকেতনের শিক্ষার্থীদের দুভোর্গের কথা স্বীকার করেন।
তিনি জানান, এই বিদ্যালয়ে পাকা ভবনের জন্য স্থানীয় শিক্ষা বিভাগ থেকে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে শিক্ষা বিভাগ পদক্ষেপ নেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :