টানা দু`দিনের চলমান বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা পানিতে আবারও তিস্তায় পানি বেড়েছে। পানি বাড়ার সাথে সাথে নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল গুলো প্লাবিত হতে শুরু করেছে। এতে বন্যা আতংকে রয়েছেন তিস্তা পাড়ের মানুষজন। এদিকে পানির তীব্র চাপ রোধে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখেছে ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টের তথ্যমতে পানিপ্রবাহের মাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ মিটার (স্বাভাবিক মাত্রা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। যা বিপৎসীমার মাত্র ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এর আগে গতকাল শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহের মাত্রা রেকর্ড করা হয়। পানি বৃদ্ধিতে তিস্তার বিভিন্ন অংশে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে চরাঞ্চলে চাষাবাদ করা ধানসহ নানাজাতের সবজির ক্ষেত।
লালমনিরহাটে টানা দু’দিন ধরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। সারাদিনের ঘন মেঘাচ্ছন্ন আকাশে কখনো হালকা, কখনো মাঝারি, কখনো আবার ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে গত কয়েকদিনের তীব্র গরমের সাধারণ মানুষের মাঝে যেমন স্বস্তি ফিরে এসেছে তেমনি কাজে যেতে না পেরে খেটে খাওয়া দিনমজুর ছিন্নমূল মানুষদের পড়তে হয়েছে চরম বিপাকে।
গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু রংপুরে ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ভারী বর্ষণের কারণে ছোট বড় নদ-নদীগুলোতে হু হু করে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। এতে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তিস্তা ও ধরলা নদীর চরাঞ্চলের মানুষজন।
লালমনিরহাটে হাতীবান্ধা উপজেলার চর গড্ডিমারী এলাকার বাসিন্দা ফজর আলী বলেন, “পানি বৃদ্ধিতে এলাকার সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। কিছু এলাকায় পানি প্রবেশ করে রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে।বর্তমানে চরম বিপাকে রয়েছি।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সুত্রে জানা গেছে, ভারী বর্ষণের কারণে আগামী ২৪ঘণ্টায় লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রামের চরাঞ্চল ছাড়াও আরো বেশকিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ এলাকার কৃষক সাহিদুল ইসলাম সোহেল (৩২) বলেন, “গত দুইদিনের বৃষ্টিতে নদীর পানি বেড়ে গেছে। এতে চরের আবাদ করা ধান তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত মুহুর্তেই নদী তীরবর্তী এলাকার বাড়িঘরেও পানি ঢুকে যাবে।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের গোবরধন এলাকার বাসিন্দা দিনমজুর দেলোয়ার হোসেন (৫৩) বলেন, “বৃষ্টিত রাস্তাঘাট সোগ পানির তলোত ডুবি গেইছে। দুইদিন ধরি বাড়িত বসি। বৃষ্টিত কাজ করাও যায়না৷ এলাও যে বৃষ্টি হবার লাগছে তাতে মনে হয় আবার বন্যা হইবে।
একই এলাকার বাসিন্দা আজিজুল মিয়া (৪০) বলেন, “তিস্তার ভয়ংকর থাবা থেকে মুক্ত করতে গত ১৫ বছরে এমপি মন্ত্রীরা এসে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছে। কিন্তু একটাও বাস্তবায়ন হয়নাই। এখনো তিস্তায় সামান্য পানি বাড়লে আমাদের এলাকার ঘড়-বাড়ি,রাস্তাঘাট, ক্ষেত খামার সব কিছু বন্যায় তলিয়ে যায়।”
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ব্যারাজ শাখার উপ-প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদীন বলেন, “ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার নিকটে চলে এসেছে। এজন্য পানির চাপ রোধে তিস্তা ব্যারাজের সবকয়টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা নদীর পানি আরো বাড়তে পারে।”
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শুনিল কুমার রায় রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, “টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তাসহ লালমনিরহাটের সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে দ্রুত পানি নেমে যাবে। নদীতে পলি জমার কারণে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে আাসায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, নদী ভাঙন ঠেকাতে জরুরি আপদকালীন কাজ হিসেবে ভাঙন এলাকা গুলোতে জিও ব্যাগ ফেলা হবে।”
আপনার মতামত লিখুন :