ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

৯ দফা দাবিতে তীর-ধনুক নিয়ে রাস্তায় কয়েক হাজার আদিবাসী

দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৪, ০৭:৩৯ পিএম

৯ দফা দাবিতে তীর-ধনুক নিয়ে রাস্তায় কয়েক হাজার আদিবাসী

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দিনাজপুর: আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন, অন্তর্র্বতীকালীন সরকারে সমতলের আদিবাসী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণ, সাঁওতাল বিদ্রোহের মহান নেতা সিধু-কানু‍‍`র ভাস্কর্য পুনঃনির্মাণ ও ভাস্কর্য ভাঙচুরসহ সারাদেশে আদিবাসীদের ঘর-বাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, জমি দখলের প্রতিবাদে তীর-ধনুক হাতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে হাজারো আদিবাসী।

বুধবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে দিনাজপুর শহরের সরকারী কলেজ মোড় থেকে এক বিক্ষোভ র‌্যালী বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে দিনাজপুর প্রেসকাবের সামনে শেষ হয়।

সমাবেশে জেলার বিভিন্ন উপজেলার কয়েক হাজার আদিবাসী নারী-পুরুষ অংশ নেন।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন-জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মানিক সরেন, আদিবাসী মুক্তিমোর্চার জেলা সাধারণ সম্পাদক মানিক সরকার মুর্মু, কাহারোলের সাঁওতাল বিদ্রোহ ও তেভাগা আন্দোলন গবেষণা কেন্দ্রের আহ্বায়ক নারায়ণ মার্ডী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ঈশ্বর টুডু, অনামিকা মার্ডী ও প্রদীপ খালকো, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিষ্ণু সরেন, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী কুপুরাম হাসদা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লাপল কড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইলিয়াস মুর্মু, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ধনেশ টুডু, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রিতা পাহান, মাওলানা ভাষানী বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যণাথন হাসদা, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রনানী অঙ্গনা হাসদাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীরা।

সমাবেশে অংশ নেয়া বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের সমতলে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় সাঁওতাল, মুন্ডা, ওরাঁও, রাজোয়াড়, তুরি, লোহার, ঘাসিমালো, কুমী, বেদিয়া, মালপাহাড়িয়া, গঞ্জ, মাহালী, মুসহর, ভূইমালি, কোল, কড়া, তেলী, পাহাড়িয়া, ভূঁইয়া, বাগদী, ভূমিজ, বড়াইক, খাড়িয়া, মুনিয়া, কোচ, রবিদাস, রাউতিয়া, কাদর, রাই, পাটনি, চাঁই, বাইছনী, খাটোয়াল, দোষাদ, চাঁড়াল, ডহরাসহ প্রায় ৩৮টি জাতিসত্তার প্রায় ২০ লাখেরও বেশী আদিবাসী বসবাস করেন।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসীরা অংশগ্রহণ করে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেছে। জীবন দিয়ে প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেছে। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর নিজ দেশে আদিবাসীরা দেখলো তাদের বাড়িঘর-ভিটে মাটি সব দখল হয়ে গেছে। অনেকেই বেদখল হওয়া জমি আজও ফেরত পায়নি।

তারা আরও বলেন, বর্তমান সময়েও আদিবাসীদের জীবন সঙ্কটপূর্ণ হয়ে পড়েছে এবং তাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি ক্রমাগতভাবে চরম অবনতি ঘটছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার ঐক্যবদ্ধ গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পরে যখন দেশের জনসাধারণ দীর্ঘদিনের শোষণ-বঞ্চনা, বৈষম্য থেকে মুক্ত হতে পেরে বিজয় মিছিল করেছে ঠিক সেই মুহুর্তে কিছু দুষ্কৃতিকারীরা পরিকল্পিতভাবে সারাদেশে ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ভূমি দখল করেছে। আদিবাসীরাও এই অন্যায় অত্যাচার থেকে রেহায় পায়নি। এখনো আদিবাসী গ্রামগুলোতে আদিবাসীরা নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে। বেশীরভাগ দুষ্কৃতিকারীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকায় ও বিচারের আওতায় না আসায় আদিবাসীরা আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

৯ দফা দাবী হলো-আদিবাসীদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ থেকে আদিবাসী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভুমি কমিশন গঠন, কান্তনগর মোড়ে সাওতাল বিদ্রোহের মহান নেতা সিধু-কানুর স্মৃতি ভাস্কর্য ভাংচুরকারীদের বিচারের আওতায় আনা ও ভাস্কর্য পুনঃনির্মান, দিনাজপুর ও নওগাঁয় প্রতিষ্ঠিত আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমীতে দ্রুত জনবল নিয়োগ করতে হবে এবং রাজশাহী বিভাগীয় আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমীর উপ-পরিচালক পদে আদিবাসীদের মধ্য থেকে নিয়োগ করতে হবে, আদিবাসীদের উপর চলমান অত্যাচার, হুমকি, ঘরবাড়ি লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, হত্যা, ধর্ষণ, মিথ্যা মামলা, ভূমি দখল বন্ধে প্রয়োজনীয় আইনী পদপে নিতে হবে ও আদিবাসী সুরা আইন প্রণয়ন করতে হবে, আদিবাসী ছাত্র-যুবদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণসহ আদিবাসীদের জন্য উচ্চ শি ও প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেনীসহ সকল সরকারি চাকরির দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে, সকল আদিবাসীদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিতসহ আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কমপক্ষে একজন করে আদিবাসী শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে, গাইবান্দা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের ১৮৪২.৩০ একর সম্পত্তি প্রকৃত জমি মালিকদের ফিরিয়ে দিতে হবে এবং তিন ফসলি জমিতে ইপিজেড স্থাপনের পরিকল্পনা বন্ধ করতে হবে এবং ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর পুলিশের গুলিতে নিহত তিন সাঁওতাল হত্যার বিচার এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানসহ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, সেই সাথে আদিবাসীদের ওপর থেকে সকল প্রকার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর ৯দফা দাবী সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!