সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের আপন ছোট ভাই শামসুজ্জামান আহমেদ ভুট্টুর বিরুদ্ধে জমি লিখে নিয়েও চাকরি না দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী চাকরি বঞ্চিত মোহাইমেনুল হাসান গত ৩ নভেম্বর লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানা গেছে, ২০১৫ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধিনে প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের আওতায়ধীন পরিচালিত লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নে `করিমপুর নূরজাহান শামসুন্নাহার প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়`টি স্থাপিত করা হয়। আর তখন থেকেই প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে দায়িত্ব পালন করেন সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছোট ভাই শামসুজ্জামান আহমেদ ভুট্টুর স্ত্রী জেসমিন আরা পলি। আর বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হন সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর নুরুজ্জামানের আপন ছোট ভাই শামসুজ্জামান আহমেদ ভুট্টু। তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকসহ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের প্যাটার্ণ অনুযায়ী শিক্ষক ও কর্মচারী মিলিয়ে ১৮ জনকে এমপিও ভুক্তির তালিকা করা হয়। এতে এমপিও ভুক্তির তালিকা থেকে বাদ পড়েন জুনিয়র শিক্ষক (শরীর চর্চা) মো. মোহাইমেনুল হাসান। তার পরিবর্তে একই পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন মো. রঞ্জু মিয়া নামে আরেক ব্যক্তি।
লিখিত অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের জুনিয়র শিক্ষক (শরীর চর্চা) পদে কালীগঞ্জের কাশিরাম গ্রামের মোহাইমেনুল হাসানকে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর নিয়োগ পত্র দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে এমপিও ভুক্ত হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত মোহাইমেনুল হাসান ওই বিদ্যালয়ে চাকরি করেন। বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্ত হলে দেখা যায়, মোহাইমেনুল হাসানের একই পদে একই গ্রামের জাহেদুল ইসলামের ছেলে মো. রঞ্জু মিয়াকে এমপিও ভুক্ত করা হয়েছে। বাদ পড়েছেন মোহাইমেনুল হাসান। অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, মোহাইমেনুল হাসান কে নিয়োগ পত্র দেওয়ার কয়েকদিন আগে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছোট ভাই শামসুজ্জামান আহমেদ ভুট্টুর নামে মোহাইমেনুল হাসানের বাবা আজিজুল ইসলাম ৫৪ শতক জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। যার মৌজা শ্রীখাতা (দলগ্রাম ইউনিয়ন), জেএল নম্বর: ২৫, খতিয়ান নম্বর : ১১৪২, দাগ নম্বর : ৬৯৮৯ জমির পরিমাণ : ৫৪ শতক।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর বাবা আজিজুল ইসলাম বলেন, `আমার ছেলেকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে মন্ত্রীর ছোট ভাই আমার কাছ ৫৪ শতক জমি লিখে নিয়েছে। আমার ছেলে সেখানে বিনা বেতনে কয়েক বছর চাকরিও করেছে। তবে বিদ্যালয়টি এমপিও হওয়ার পর আমার ছেলেকে বাদ দিয়ে তারা রঞ্জু মিয়াকে এমপিও ভুক্ত করেছে। পরে আমি এই বিষয়টি নিয়ে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শামসুজ্জামান আহমেদ ভুট্টুর সাথে একাধিক বার সাক্ষাৎ করেছি। ছেলের চাকরি না হওয়ায় আমি আমার জমি ফিরিয়ে দিতে বহুবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু এসময় তারা আমাকে বিভিন্ন ধরনের মান অপমান, হুমকি ধামকিসহ প্রাণ নাশের ভয় দেখিয়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষক মোহাইমেনুল হাসান বলেন, আমার বাবার বয়স হয়েছে। ওদের ক্ষমতার দাপটের কাছে আমরা অসহায়। উপায়ান্তর না পেয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এবং লালমনিরহাট জেলা সমাজসেবা অফিসারসহ দুদকে প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক জেসমিন আরা পলি জানান, মোহাইমেনুল হাসান এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতো। তার চাকরি কেন শেষ পর্যন্ত এমপিও ভুক্ত হয়নি তা ম্যানেজিং কমিটি বলতে পারবেন। এসময় চাকরি দেওয়ার কথা বলে তার স্বামী জমি লিখে নেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
জেলা সমাজ সেবা অফিসার মোহাম্মদ মতিয়ার রহমান বলেন, এ ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক বরাবর দেওয়া হয়েছে। আমি এর অনুলিপি পেয়েছি। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক এইম এম রকিব হায়দার বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুতই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :